Editorial Digital Divide

ডিজিটাল বিভেদ

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Digital Divide

ডিজিটাল প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং ঝঞ্ঝাট কমিয়ে ফেলতে বিশেষভাবে কার্যকর। কিন্তু সেই ডিজিটাল স্বাক্ষরতা এবং ডিজিটাল পরিকাঠামো যদি সর্বত্র সকলের কাছে না পৌঁছায়, ডিজিটাল সক্ষমতা অর্জনের আর্থিক সামর্থ্য যদি না থাকে তাহলে তা কার্যক্ষেত্রে অর্থহীন হয়ে যায়। ডিজিটাল প্রযুক্তির পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি না করে, সব মানুষকে ডিজিটাল সক্ষম না ক‍‌রে যদি সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়ে যায় তাহলে বৈষম্য শুধু বাড়ে না প্রকট আকার ধারণ করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ যাবতীয় সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবা ডিজিটাল মাধ্যমে পেতে হলে হাতে স্মার্ট ফোন থাকা জরুরি।

 

 

 সেটা না হলেও নিদেন পক্ষে একটা মোবাইল ফোন দরকার। তেমনি দরকার দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে সর্বত্র বিরতিহীন মোবাইল ও ডাটা নেটওয়ার্ক। সর্বশেষে দরকার ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ন্যূনতম সক্ষমতা। ভারতের বাস্তবতায় এসবের কোনও কিছুই কার্যত নেই। বিনিময়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর গাল ভরা বুলি। তিনি স্বপন দেখতে এবং স্বপ্ন দেখাতে যতখানি পারদর্শী তার থেকে অনেক বেশি অক্ষম ও অযোগ্য সেইসব স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ায়। ক্ষমতায় এসেই তিনি ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্প ঘোষণা করে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সরকারি ব্যয় বাড়িয়েছেন। নোটবন্দি করে বাধ্যতামূলকভাবে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন।

 

 

 কার্যত সমস্ত ধরনের সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার শুরু করে দিয়েছেন। গত বছর ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পের ৬বছর পূর্তিতে বলেছিলেন ডিজিটাল ইন্ডিয়াই আত্মনির্ভর ভারতের প্রতীক। অর্থাৎ মোদী ঘোষিত আত্মনির্ভর ভারত গড়ে উঠবে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ভিতের উপর দাঁ‍‌ড়িয়ে। মোদী ৫লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির স্বপ্নে মশগুল। তারজন্য দেশের অর্থনীতির রাশ পুরোপুরি তুলে দেওয়া হচ্ছে কর্পোরেটের স্বার্থে। জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে কর্পোরেট মুনাফা বাড়িয়ে বৃদ্ধি গতি বাড়াতে চান। যত ডিজিটাল তত সরকারি কাজে কর্মীর প্রয়োজন কমবে। সেই জায়গায় কাজের দায়িত্ব নেবে কর্পোরেট সংস্থা। এই প্রক্রিয়াতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মানুষের অংশগ্রহণ কমছে। তার পরিণতি বেকারি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানহীন উন্নয়ন, নতনু কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া, মজুরি খাতে কর্পোরেট ব্যব হ্রাস ও মুনাফা বৃদ্ধি।

 


এমন অবস্থার মধ্যেই ডিজিটাল প্রযুক্তিতে জোর দিয়েছে মোদী সরকার। এটা করতে গিয়ে সমাজে তার প্রতিফলন কেমন সেটা ফুটে উঠেছে অক্সফামের রিপোর্টে। রিপোর্টে স্পষ্ট ডিজিটাল ইন্ডিয়া আসলে ডিজিটাল বিভাজনকে জোরদার করছে। বিভাজন সর্বক্ষেত্রে স্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে মোদীর ডিজিটাল ভারতে লিঙ্গ বৈষম্য, গ্রাম-শহর বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য এবং জাত-পাত ও ধর্মীয় বৈষম্য বেড়ে গেছে। ৬১ শতাংশ পুরুষ যেখানে মোবাইল ব্যবহার করে সেখানে মহিলা মাত্র ৩১শতাংশ। শহরে ৬৭শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও গ্রামে মাত্র ৩১শতাংশ। আবার তফসিলি জাতির মাত্র ২ শতাংশ এবং জনজাতির ১ শতাংশ কম্পিউটার ব্যবহার করেন। সত্য এটাই ডিজিটার প্রযুক্তির সুবিধা পাওয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক যুক্ত হয়ে গেছে। যত দিন যাচ্ছে বিভাজন তত বাড়ছে। মোদীর অর্থনীতি আয় ও সম্পদ বৈষম্য বাড়াচ্ছে। সেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি চাপিয়ে দেবার ফলে বাড়ছে ডিজিটাল বৈষম্য।

Comments :0

Login to leave a comment