Editorial

বিরুদ্ধ ভাষ্য রোখা যাবে না

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial

নরেন্দ্র মোদীর আধুনিক ভারতের গণতন্ত্র একদলীয় শাসক আধিপত্যের ঔদ্ধত্বের দাপটে কতটা পদদলিত হচ্ছে তা দায়িত্ব নিয়ে প্রদর্শন করেছে অমিত শাহর দিল্লি পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীর আত্ম প্রচার সর্বস্ব আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়ের সীমাবদ্ধতা এবং মানুষের স্বার্থে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আলোচনার বাইরে রাখার আশঙ্কাকে সামনে রেখে বিকল্প আলোচ্য উত্থাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনার কাম ওয়ার্কশপ বন্ধ করে দিতে উদ্ধত হয়েছে তারা। নিতান্তই নির্বোধ ও হাস্যকর অভিযোগ খাড়া করে এহেন পুলিশি প্রয়াস সরকারের শীর্ষস্তরের চাপ ছাড়া সম্ভব নয়। কোনও বেসরকারি ভবনের রুদ্ধদ্বার কক্ষে বা হলে বৈঠক, আলোচনা, সেমিনার যে বেআইনি নয় সেটা পুলিশের অজানা থাকার কথা নয়। তথাপি তারা আইন রক্ষার নামে বেআইনি কাজ করতে বাধ্য হয়েছে সরকারের নির্দেশে। পুলিশের এই আচরণ অনেকটা পাড়ার মাস্তানদের দাদাগিরির মতো। মস্তানরা যেমন নিজের স্বঘোষিত এলাকায় নিজের অনুমতি ছাড়া কাউকে কাজ করতে দেয় না তেমনি দিল্লি পুলিশও সেমিনার স্থল হরকিষেণ সিং সুরজিৎ ভবনে দল বেঁধে এসে জানিয়েছে যেহেতু পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়নি তাই তারা সেমিনার করতে দেবে না। গণতন্ত্রের জননীর দেশে স্বৈরাচারী হুলিয়া।

দিল্লির পুলিশ কি অমিত শাহ’র জমানায় এটাও ভুলে গেছে যে প্রকাশ্য জনপরিসরে কোনও সভা, মিছিল, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ করতে গেলেই আগাম অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। বেসরকারি বাড়ির ভেতরে কোনও সভা-সেমিনার করতে অনুমোদন লাগে না। কথায় আছে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। তাই কর্তাদের হুকুম পেয়ে পুলিশ চোখ বুঝে চলে এসেছে সেমিনার বন্ধ করতে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরতে হয়। কারণ সেমিনার বন্ধ করার কোনও লিখিত নির্দেশ তাদের কাছে ছিল না। তারা এসেছিল শাসক বিরোধী ভাষ্যকে স্তব্ধ করতে। ফ্যাসিস্ত চরিত্রের হিন্দুত্ববাদী শাসকরা সমালোচনা বা বিরোধিতা সইতে পারে না। তিন দিনের সেমিনারটি সি‍পিআই (এম) মালিকানাধীন হরকিষেণ সিং সুরজিৎ ভবনে আয়োজিত হলেও আয়োজন করে নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট জনেরা। নাম দেয় ‘ইউ-২০ পিপল সামিট’। এখানে মানব সভ্যতার পক্ষে সেই সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার আয়োজন হয় যেগুলি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে উপেক্ষিত। দেশ তথা বিশ্বের সাধারণ মানুষ যে সব জ্বলন্ত সমস্যার মুখোমুখি সেই সব বিষয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যাতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে জায়গা পায় তারই জন্য এমন সেমিনারের উদ্যোগ। স্বাভাবিকভাবেই এই সেমিনারে মোদী স্তূতি হবে না। বরং সমালোচা, বিরোধিতা ও বিকল্প ভাষ্য উঠে আসবে। মোদী-শাহ’রা সেটা মোটেই সহ্য করতে পারবেন না। তাই লেঠেল বাহিনী পাঠানো হয়েছে গণতান্ত্রিক ভারতের রাজধানীতে জনগণের বিরুদ্ধে কণ্ঠ রুদ্ধ করতে। শাসক শিরোমণি যা যা বলবেন সেটাই শিরোধার্য করতে হবে। তাঁর কথায় জয়ধ্বনি দিতে হবে। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসক চাইলেই সব কিছু হয় না। মানুষ গণতন্ত্রের একক। তাদের মতামতের মূল্য আছে। তারা তাদের অধিকার রক্ষা করতে শেষ পর্যন্ত লড়বেন। ‘উই-২০’ সেমিনার হয়েছে। পুলিশকে দিয়ে আটকানো যায়নি।

Comments :0

Login to leave a comment