Editorial Desire for Democracy

গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Desire for Democracy

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবের আঙিনায় জীবন্ত করে তোলার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় রচনা করলো কলকাতা মেডিক্যাগল কলেজের পড়ুয়ারা। সরকার, স্বাস্থ্য দপ্তর, কলেজ কর্তৃপক্ষ এমনকি শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের চূড়ান্ত বাধা-প্রতিবন্ধকতাকে উড়িয়ে দিয়ে অদম্য জেদে তারা নিজেরাই ছাত্র সংসদের অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করিয়েছে। 

 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এই লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক-অধ্যাপক ও সমাজকর্মীরা। পাশে ছিলেন ডাক্তার ও অন্যান্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ গঠনের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের পর কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে। কিন্তু অচিরেই অদৃশ্য কোনও সুতোর টানে কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে নেয়। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা নির্দিষ্ট দিনেই ভোট করার চরম হুঁশিয়ারি দেয়। শুরু হয় অনশন। সংহতি জানায় গণতন্ত্রের প্রহরীরা। বারোদিন অনশনের পর গণকনভেনশন ও মহামিছিল করে ছাত্র-ছাত্রীরা ঘোষণা করে নির্বাচনের যাবতীয় ব্যবস্থা তারাই করবেন। শাসকের রক্ত চক্ষু উড়িয়ে যথারীতি ভোট হয় শান্তিতে, অবাধে। প্রায় ৮০ শতাংশ পড়ুয়া ভোটে অংশ নেন। ২০ আসনে ৩১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

 


এই ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্রের জন্য কতটা উদ্‌গ্রীব। অথচ শাসক তৃণমূল কোনও অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল দিতে রাজি নয়। তাই ২০১৮ সাল থেকেই রাজ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই। ২০১৬-১৭ সালে শেষ নির্বাচন হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে গণতন্ত্রের ফোয়ারা ছুটলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র দলিত হচ্ছে তাঁর পায়ে। ক্ষমতায় আসার পর কয়েক বছর নিয়ম করে নির্বাচন হয়। পরে অনিয়মিত হতে হতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তৃণমূলের নীতিই হলো সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ব। গণতন্ত্র থাকলে নির্বাচন হলে সেখানে বিরোধিতা হবে, বিরোধী পরিসর তৈরি হবে। তৃণমূল সেটা চায় না। প্রথমদিকে নির্বাচন হলেও বহিরাগত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, গুন্ডা-দুষ্কৃতীদের দিয়ে হামলা চালিয়ে বিরোধী বিতাড়ন করে বিরোধীহীন ছাত্র সংসদ করার অভিযান চলে। পরে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন লক্ষ্য করে নির্বাচনই বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবৈধভাবে দলীয় সমর্থকদের দিয়ে চালানো হয় ছাত্র সংসদ। শাসক দলের ছাত্র সংসদ তোলাবাজির উর্বর ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। বছর বছর কোটি টাকা আদায় হয় দলীয় ছাত্র নেতাদের মাধ্যমে। তেমনি নবীনবরণ, সোশাল, সরস্বতী পূজা ইত্যাদি হাজারো উৎসবের নামে নয়ছয় শুরু হয় কলেজের টাকা। সেই ধারা আজ‍‌ও বহমান। নির্বাচন হলে সব সংসদ দখল করা যাবে না। বিরোধী উপস্থিতি দু’হাতে টাকা লুট করা, তোলা তোলা যাবে না।

 

 তেমনি এটাও প্রমাণ হয়ে যাবে ছাত্রসমাজ শাসক দলের পেছনে নেই। মেডিক্যা ল কলেজে ভোট না করার গোপন কথা এটাই।
কিন্তু সত্য ও বাস্তব এটাই এরাজ্যের ছাত্রসমাজ গণতন্ত্র চায়, নির্বাচিত ছাত্র-সংসদ চায়। ছাত্র-ছাত্রীদের এই প্রত্যাশাই প্রমাণিত হয়েছে মেডিক্যা্ল কলেজে। সরকারি বৈধতা ছাড়া নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়াই তার প্রমাণ। এই ইঙ্গিত স্পষ্ট, ভোট হলে, রাজ্যের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শাসক দলের সংগঠনকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবেন সাধারণ ছাত্রসমাজ। সেই জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাহস পাচ্ছে না মমতার সরকরা।

Comments :0

Login to leave a comment