Editorial

মণিপুরের দায় শাসক বিজেপি’র

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের উপর মণিপুরের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস যে কণামাত্রও নেই তা পদে পদে প্রমাণ হয়ে গেলেও দিনের আলোর ম‍‌তো স্বচ্ছ সত্যটি কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। আধিপত্যকামী স্বৈরাচারী ক্ষমতার মোহে তারা এতটাই বেহুঁশ যে দেওয়াল লিখন তাদের নজরে পড়ছে না। গত টানা প্রায় দু’মাস ধরে চলা হিংসা, জাতি সংঘর্ষে গোটা মণিপুরে অরাজক অবস্থা তৈরি হলেও সেটা নিয়ন্ত্রণ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরএসএস-বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। বস্তুত রাজ্যের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কোনও অধিকারই নেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং-র। তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে আছেন বটে তবে রাজ্যে এখন কোনও সরকারের অস্তিত্ব নেই। আইন-শৃঙ্খলাও জনতা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। সরকার এখন দর্শক। আর সেই অপদার্থ দর্শক সরকারেই পূর্ণ আস্থা রেখে মণিপুরকে আর হিংসা ও অশান্তির দিকে ঠেলে দিতে চাইছে মোদী-শাহরা।
বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই চলছে সশস্ত্র সংঘর্ষ। ভেঙেচুরে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। সরকারি হিসাবেই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।


আহত-জখমের সংখ্যার কোনও সীমাপরিসীমা নেই। এরই পাশাপাশি চলছে স্কুল, সরকারি ভবন পোড়ানো। আক্রমণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য মন্ত্রীদের বাড়িতে। বাদ যাচ্ছে না শাসক দল বিজেপি’র দলীয় অফিস। মণিপুরের রাস্তা এখন পুরোপুরি বিবাদমান গোষ্ঠীর দখলে। কোথাও সরকারের অস্তিত্ব নেই। দু’মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী মৌনিবাবা হয়ে বসেছিলেন। তারপর চলে গেছেন বিদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইম্ফলে গিয়ে অনেক বাগাড়ম্বর করে ফিরে এসেছেন। ফল অশ্বডিম্ব।
যে সরকারের উপর রাজ্যবাসীর বিন্দুমাত্র আস্থা নেই তাকে কাঠের পুতুলের মতো চেয়ারে বসিয়ে কী বার্তা দিতে চাইছেন মোদীরা তা মানুষের বোধগম্য নয়। বিরোধীরা বারবার বীরেন সিং-এর পদত্যাগের দাবি করলেও কেন্দ্র তা মানতে রাজি নয়। বিরোধীরা মণিপুর গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রকে পরামর্শ দিতে চাইলেও কেন্দ্র সম্মতি জানাচ্ছে। গোড়া থেকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার কথা বললেও তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। শেষে হিংসার ৫৩ দিন কেটে যাবার পর নিজেদের অপদার্থতা, অক্ষমতা আর আড়াল করতে না পেরে সর্বদলীয় সভা ডাকতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তাতে বিরোধীদের কথা শোনা হয়েছে বটে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বীরেন সিং সরকারকে বরখাস্ত করে জনগণের আস্থা ফেরানোর বিরোধীদের দাবি নাকচ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মণিপুর সফরেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। আসলে বিরোধীরা মণিপুরে গেলে ডাবল ইঞ্জিনের অপদার্থতার কঙ্কাল চোখের সামনে চলে আসবে। এতদসত্ত্বেও দশটি বিরোধী দল দিল্লিতে শান্তি কনভেনশন করে মণিপুরে প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতায় প্রবল ক্ষুব্ধ সমস্ত বিরোধী দল। বস্তুত এই ক্ষোভের আঁচ যাতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর গায়ে না লাগে তাই তিনি বিদেশে থাকাকালীন ডাকা হয়েছে সর্বদলীয় বৈঠক।


মণিপুরে শাসক আরএসএস-বিজেপি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ প্রমাণিত হবার পরও কেন এমন এক গুঁয়েমি। কেন শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবাইকে যুক্ত করা হচ্ছে না? কেন সমস্যার মোকাবিলায় রাজনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? আসলে স্বৈরাচারী মানসিকতা থেকে ক্ষমতার আস্ফালন দেখিয়ে প্রশাসনিকভাবে সেনা পুলিশ দিয়ে মোকাবিলা করতে পছন্দ করে। এটা ফ্যাসিস্তদের বৈ‍‌শিষ্ট্য। ওরা ভাবে ক্ষমতায় যখন আছে সেনা-পুলিশ দিয়ে রাষ্ট্রের দাপট দেখিয়ে সব ঠান্ডা করে দেবে। যে সমস্যা নিছক আইন-শৃঙ্খলার বিষয় নয় সেটা পুলিশ-মিলিটারি দিয়ে বল প্রয়োগ করে প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলা করা যায় না। তার জন্য দরকার রাজনৈতিক উদ্যোগ। সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিকে সেই উদ্যোগে যুক্ত করা। কিন্তু আত্মম্ভরী সরকার তা চায় না। আসল রাজনৈতিক দলগুলি যুক্ত হলে অনেক অপ্রিয় সত্য সামনে এসে যাবে। মণিপুরে ক্ষমতা দখলের তারা যে নোংরা খেলা খেলেছিল তা ফাঁস হয়ে যাবে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতা রামমাধব কুকি উগ্রপন্থীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে গোপন শর্তে কুকিদের সমর্থন আদায় করেছিলেন। তেমনি হিংসায় নেতৃত্ব দেওয়াতেই উগ্রপন্থীদের প্রতিও নরম মনোভাব দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ সাপের গালে ও ব্যাঙের গালে চুমু খেয়ে বিরোধ অশান্তির বীজ বপন করেছে মোদী-শাহরাই। এখন আর সামাল দিতে পারছে না।


 

Comments :0

Login to leave a comment