Editorial Mercenary Army

ভাড়াটে সেনা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Mercenary Army


ত্রিপুরা বিধানসভার মোট ৬০ আসনের মধ্যে মাত্র ২৮টিতে প্রার্থী দিয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ মডেল’ সামনে রেখে নতুন ত্রিপুরা গড়ার খোয়াব দেখিয়েছে তৃণমূল। দলের তরফে নির্বাচনী ইশ্‌তেহার প্রকাশ করে ভূরি ভূরি প্রতি‍‌শ্রুতি দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মী ভাণ্ডার, সমব্যথী, রূপশ্রী, স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড সহ পশিচমবঙ্গে তৃণমূল সরকার যা যা করছে তার সবই প্রায় রাখা হয়েছে ইশ্‌তেহারে। তেমনি যে প্রকল্পগুলি মুখ থুবড়ে পড়েছে সেগুলিও ত্রিপুরার জন্য প্রতিশ্রুতিতে স্থান পেয়েছে। আবার প‍‌শ্চিমবঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন বৃদ্ধি, মহার্ঘভাতা থেকে ব‍‌ঞ্চিত করা হলেও ত্রিপুরার কর্মচারীদের জন্য প্রতিশ্রুতিতে কোনও কার্পণ্য করা হয়নি। যে গুরুতর বিষয়টি ত্রিপুরার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিষয়টি ইশ্‌তেহারে কোথাও জায়গা পায়নি। 

গণতন্ত্র বস্তুটি তৃণমূলের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
আসলে গণতন্ত্র হত্যার বেদীমূলে যে তৃণমূলের অধিষ্ঠান সেই গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলা নিতান্তই হাস্যকর হয়ে উঠতে পারে তাই সযত্নে এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে মনে করেছে। ক্ষমতায় এসে পশ্চিমবঙ্গে যেমন তৃণমূল গণতন্ত্রকে কবরস্থ করেছিল, বিজেপি-ও ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখল করে করে গণতন্ত্রকে সমাধিস্থ করেছে। অনেকটা চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের মতো। দু’দলেরই চরিত্রে দারুণ মিল।


তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র কোতলের যে মডেল তৈরি করেছে সেটা ইতিমধ্যেই ত্রিপুরায় চালু করেছে বিজেপি। ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেভাবে বি‍‌রোধীশূন্য করার ব্যবস্থা হয়েছিল সেটাই অনুসৃত হয়েছে ত্রিপুরায়। ত্রিপুরাতেও ভয়-আতঙ্ক-সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধীদের ভোটের ময়দান থেকে বিতাড়ন করা হয়েছিল। কেড়ে নেওয়া হয়েছিল সাধারণ মানুষে ভোটাধিকার। তারপরও জয়ী বিরোধীদের গায়ের জোরে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। পরে উপনির্বাচন করে প্রায় সব আসন দখল করে শাসক বিজেপি। তাই ত্রিপুরায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা ভু‍লেও উচ্চারণ করতে পারেনি তৃণমূল। 

অবশ্য ত্রিপুরা সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, টাকা নয়ছয় ও লুটপাটের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। অথচ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার এই অভিযোগ সবচেয়ে বেশি অভিযুক্ত। পশ্চিমবঙ্গে রেগার টাকা, আবাস যোজনার টাকা চুরি করে ফাঁক করে দিয়েছে তৃণমূল। সেই তৃণমূল ত্রিপুরায় স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত সরকার গড়বে বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ভূতের মুখে রাম নামের মতো তৃণমূলের মুখে দুর্নীতিমুক্ত সরকার বিশ্বাস তো দূরের কথা কল্পনা করাও যায় না।


এখন প্রশ্ন হলো তৃণমূল চালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পথেই যখন ত্রিপুরার বিজেপি সরকার চলছে এবং বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সঙ্গে যখন তৃণমূলের সরকারের দারুণ মিল তাহ‍‌লে অযথা ত্রিপুরায় নির্বাচনে লড়তে যাচ্ছে কেন? লড়তে যখন যাচ্ছে, সরকার গড়তে যখন চাইছে, সরকারে এলে কিকি করবে তার ফিরিস্তি দিচ্ছে তাহলে ৬০টি আসনের মধ্যে মাত্র ২৮টিতে প্রার্থী দিচ্ছে কেন? ২৮টির মধ্যে সবকটাতে জিতলেও তো সরকার গড়া যাবে না। তাহলে তারা জোট গড়ল না কেন বা কোন দলকে সমর্থন করবে বা সমর্থন নেবে সেটা প্রকাশ্যে জানাচ্ছে না কেন? বাম-কংগ্রেস জোট করে লড়বে। বিজেপি-কে হারাবার জন্য। বাম-কংগ্রেসে তৃণমূলের ঠাঁই হবে না। তাহলে তৃণমূল কোন দিকে যাবে? স্বাভাবিক মিত্রের দিকে? সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারালে বিজেপি-কে সমর্থন করবে?


ত্রিপুরায় তৃণমূল জিততে যায়নি। সরকার গড়তেও যায়নি। গিয়েছে বিজেপি বিরোধী সম্মিলিত শক্তিকে দুর্বল করে বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতে। বিজেপি’র বিরুদ্ধে বহিরঙ্গে লড়াইয়ের তামাশা করে তৃণমূল যেকটা ভোট পাবে সেটা বিজেপি’র ভোট নয়, বিজেপি বিরোধী ভোট। বিজেপি বিরোধী ভোটকে ভাগ করে দিয়ে বিরোধীদের জয়ের রাস্তা অবরুদ্ধ করা তৃণমূলের আসল লক্ষ্য। বিজেপি’র হয়ে ভাড়া খাটতে ত্রিপুরায় গেছে তৃণমূল। যেমন গিয়েছিল গোয়ায়। বিজেপি ক্ষমতা হারাবার আশঙ্কা দেখা দিলেই তৃণমূল সেখানে হাজির হয়ে যায় বিজেপি-কে বাঁচাতে।
 

Comments :0

Login to leave a comment