Editorial Ganashakti More sinking

আরও ডুবছে

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Ganashakti More sinking


জালিয়াতি করে এবং লগ্নিকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রবল ক্ষমতাবানের সহায়তায় হয়তো সম্পদের পাহাড় বানানো যায় কিছু শেষপর্যন্ত সেই সম্পদ যে রক্ষা করা যাবে তেমন নিশ্চয়তা সব সময় নাও মিলতে পারে। আগে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলয়ে থে‍‌কে রাতারাতি দেশের অন্যতম কর্পোরেট মালিক এবং বিশ্বের তিন নম্বর ধনী হয়েছিলেন গৌতম আদানি। প্রধানমন্ত্রীর অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে তিনি ছিলেন। ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আইন, বিধি, নজরদারি এড়িয়ে দুহাতে সম্পদ লুটলেও সরকারি আধা সরকারি সব সংস্থাই ছিল নীরব দর্শক। তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতের অপ্রতিরোধ্য কর্পোরেট মালিক।

মোদী কথিত ভারতের উত্থানের পোস্টারবয় হয়ে উঠেছিলেন গৌতম আদানি। কিন্তু মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের এক রিপোর্টের ধাক্কাতেই তাসের ঘরের মতো ধসে পড়েছে আদানিদের কর্পোরেট সাম্রাজ্য। হিন্ডেনবার্গ ফাঁস করে দিয়েছে আদানিদের রাতারাতি ফুলে ফেঁপে ওঠার আসল রহস্য। আদানিদের ভারতের কর্পোরেট শিরোমণি হয়ে ওঠার মূল ভিত্তিই হলো জালিয়াতি করে অবৈধ পথে শেয়ারমূল্য অস্বাভাবিক বাড়িয়ে তোলা। আর তার ভিত্তিতে শেয়ার বিক্রি করে এবং শেয়ার বন্ধক ‍রেখে দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা হাতানো। এমন প্রতারণা ও লোক ঠকানোর জন্য আজ আদানি সাম্রাজ্যে ধস। পরম প্রতাপশালী বন্ধু প্রধানমন্ত্রীরও ক্ষমতা নেই ধস থামানো। নীরবতার আড়ালে এবং তদন্ত না করে আদানিদের রক্ষা করা শেষ চেষ্টা তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে করে চলেছেন।

আদানির আর্থিক উত্থান আর মোদীর রাজনৈতিক উত্থান গোড়া থেকেই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে। ‍‌একে যেন অন্যের অপরিহার্য পরিপূরক। এখন একের পতনে অন্যেরও যে আসন টলমল হবার আশঙ্কা থাকে। তাই আদানিকে বাঁচাতে মোদী সক্রিয় হবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হলো সঙ্কট যে জায়গায় পৌঁছেছে তাতে একা মোদীর পক্ষে সামলানো একরকম অসম্ভব।
যেদিন হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় সেদিন (২৪জানুয়ারি) শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত আদানিদের কোম্পানিগুলির মোট শেয়ারের মোট মূল্য ছিল ১৯লক্ষ ২০হাজার কোটি টাকা। তারপর দু’সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই সেই শেয়ারের মূল্য কমতে কমতে মাত্র সাড়ে ৯ লক্ষ কোটি টাকায় এসে ঠেকেছে। ধস কিন্তু চলছেই। শেষ পর্যন্ত কোথায় এসে ঠেকবে কেউ জানে না।

এরই মধ্যে আর এক‍‌টি শক্তিশালী বোমা ফাটিয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে শেয়ারসূচক প্রস্তুতকারী মার্কিন সংস্থা এমএসসিআই। তারা আদানিদের চারটি সংস্থার গুরুত্ব হ্রাস করে দিয়েছে। ফলে এই সংস্থাগুলির শেয়ার সহজে লেনদেন হবে না। দুশ্চিন্তা বাড়বে লগ্নিকারিদের। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুভিজও। আদানিদের চারটি সংস্থার রেটিংয়ে অবনমন করেছে। ফলে এই সংস্থাকে দেওয়া ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এরই ম‍‌ধ্যে গোদের উপর বিষফোড়ার মতো আদানিদের একটি বড় আকারের অবৈধ কাজের তদন্তে নামতে বাধ্য হয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি। সম্প্রতি শেয়ার বিক্রি করে ২০ হাজার কো‍‌টি টাকা তোলার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল গোলমাল তাকে ঘিরেই। অভিযোগ আদানিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থা নাকি বেশিরভাগ শেয়ার কিনেছিল এবং শেয়ার বিক্রির বিষয়টা পরিচালনা করছিল আদানিদেরই সঙ্গে যুক্ত সংস্থা।

এই দুটো কাজই অবৈধ। সম্ভবত ধরা পড়ার আশঙ্কায় তড়িঘড়ি শেয়ার বিক্রি বাতিল করে ক্রেতাদের টাকা ফেরত দেবার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। একইভাবে আগাম ঋণশোধ ঘোষণার মধ্যেও দুর্নীতি আড়ালের চেষ্টা ছিল বলে অভিযোগ।
বিশ্বের বাজারে ভারতের অর্থনৈতিক উত্থানের মডেল হিসাবে দেখাচ্ছিল মোদী সরকার। কিন্তু সবটাই যে জালিয়াতিতে ভরা এখন তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আদানিরা শুধু নিজে ডোবেনি, একই সঙ্গে ডুবিয়েছে দেশের মান মর্যাদাও। দুনিয়ায় এটাই এখন সর্বাধিক আলোচিত যে মোদী জমানায় এমন জালিয়াতি করেই ভারতের কর্পোরেট গৌরব দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment