Editorial Ganashakti Tripura violence

নেতারা চেয়েছে তাই ত্রিপুরায় বর্বরতা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Ganashakti Tripura violence


নির্বাচন উত্তর ত্রিপুরায় যা চলছে তাকে অসভ্য বর্বররাজ বললেই কমিয়ে বলা হবে। নির্বাচনে জয়ের আনন্দকে কমিউনিস্ট-বিরোধী পৈশাচিকতায় রূপ দিয়ে বিজেপি তাদের ফ্যাসিস্তসুলভ হিংস্রতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে। কোনও সভ্য সমাজে যা কল্পনার অতীত বিজেপি তাকেই তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে দিনের আলোয় তুলে ধরেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে জয়-পরাজয় স্বাভাবিক। কেউ জিতবে কেউ হারবে। যারা জিতবে তারা সরকার গড়বে। যারা হারবে তারা বিরোধী আসনে বসবে। সংসদীয় ব্যবস্থায় বিরোধীরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দল গণতন্ত্রে যাদের বিন্দুমাত্র আস্থা ও বিশ্বাস নেই তারা বিরোধী দলকে সহ্য করতে পারে না বিরোধিতার অস্তিত্বকে তারা ভয় পায়। বিশেষ করে সেই বিরোধীরা যদি কমিউনিস্ট হয় তাহলে তো কথাই নেই। ত্রিপুরার ঠিক তেমনটাই ঘটছে।


নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফিরলেও বিজেপি’র ক্ষমতা হারানোর ভয় ও আতঙ্ক এখনো কাটেনি। গত পাঁচ বছর ধরে যে সীমাহীন অপরাধ তারা করেছে নির্বাচনের সময় তা জনসমক্ষে উন্মোচিত করেছে বিরোধীরা। মানুষের মধ্যে বিজেপি-কে ঘিরে অনেক প্রশ্ন ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। ফলে কোনোরকমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া গেলেও আসনসংখ্যা ও ভোট অনেক কমে গেছে। মোদী-শাহরা টের পাচ্ছেন পায়ের তলা থেকে মাটি আলগা হয়ে যাচ্ছে। এবার টেনেটুনে ক্ষমতা ধরে রাখা গেলেও কতদিন তা ধরে রাখা যাবে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভোট কমা মানে জনসমর্থন কমছে। দুঃশ্চিন্তা হবারই কথা। আর সেই দুঃশ্চিন্তা থেকেই বিরোধীদের সন্ত্রস্ত ও নিকেশ করে বিরোধিতার পরিসরকে ছোট করে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। রাজনৈতিক সন্ত্রাস বর্বরতা ও পৈশাচিকতার চেহারা পেয়েছে সেই কারণেই।

২ মার্চ ভোটগণনার শেষদিকে যখন বিজেপি’র ক্ষমতায় ফেরার অবস্থা তৈরি হয়েছে তখন থেকেই দলের দুর্বৃত্তরা রাস্তায় নেমে পড়ে পৈশাচিক উল্লাসে। জয়ের অনাবিল আনন্দ নয় মধ্যযুগীয় লেঠেল বাহিনীর মতো দলীয় গুন্ডারা সশস্ত্র হামলা চালায় সিপিআই(এম) কর্মী, সমর্থক, নেতাদের উপর। বিশেষ করে যারা নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেছে, ভোট লুট আটকেছে, বেছে বেছে তাদের ঘরবাড়ি, দোকান ভেঙে তছনছ করেছে, পুড়িয়ে ছাই করেছে। গরিব মানুষের ঘরের ন্যূনতম জিনিসপত্র ধ্বংস করেছে। মেরে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত করেছে সহস্রাধিককে। তিনজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। মাত্র তিনদিনেই রাজ্যজুড়ে ৬৬৮টি হিংসাত্মক আক্রমণের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। আর আশ্চর্যজনকভাবে নীরব দর্শকের পালন করেছে পুলিশ। পুলিশ চাইলে শাসকের এমন অমানবিক বর্বরতা অনেকটাই আটকাতে পারত। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অর্থাৎ শাসকের নির্দেশ মেনে দলদাস হয়ে পুলিশ গণতন্ত্র পদদলিত করার সুযোগ করে দিয়েছে। এমন হিংস্র বর্বরতা বেপরোয়াভাবে চলতে থাকলেও দলের কেন্দ্রীয় নেতারা টু শব্দটিও উচ্চারণ করেননি। গণতন্ত্র ও শান্তির জ্ঞান বিতরণ করা প্রধানমন্ত্রীও নীরবে দুর্বৃত্তদের সমর্থন করে গেছেন পরোক্ষে। বিজেপি যদি নীতিগতভাবে গণতন্ত্র ও শান্তির পক্ষে অবস্থান নিত তাহলে এমন ঘটনা ঘটতে পারত? নেতারা কড়া মনোভাব নিয়ে দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু মোদী-শাহ-নাড্ডারা তা করেননি।

Comments :0

Login to leave a comment