Editorial Ganashakti Education loans

শিক্ষাঋণ অনাদায়ী কেন

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত বছর বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি যে পরিমাণ শিক্ষাঋণ দিয়েছে এবছর ঋণ প্রদানের পরিমাণ তার থেকে অনেকটাই কম। ব্যাঙ্কগুলির শিক্ষাঋণ দানে অনীহা এবং ঢিলেমিতে বিরক্ত ও উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। সরকার বার্তা পাঠিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি যাতে দ্রুত শিক্ষাঋণ মঞ্জুর করে। 

বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের কাছে লাভ-লোকসানের প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাঙ্কের আয়ের একমাত্র উৎস ঋণ দিয়ে সুদ নেওয়া। তাই সেই সব ক্ষেত্রে ঋণদানে বেশি উৎসাহী হয় যেখানে ঋণ দিলে সময় শোধ করার সম্ভাবনা থাকে। ঋণ নিয়ে যদি কেউ শোধ না করে তাহলে ব্যাঙ্কের আয়ই শুধু মার খায় না, মূলধনও তামাদি হয়ে যায়। এইভাবে ঋণ আদায় না হলে ব্যাঙ্কের অবস্থা খারাপ হয়। এমন প্রেক্ষাপটেই ব্যাঙ্কগুলি শিক্ষাঋণ বাড়ায় বা কমায়। 

সাম্প্রতিক তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে অন্যান্য ঋণের মতো শিক্ষাঋণও ঠিকঠাক শোধ হচ্ছে না। মোট প্রদত্ত ঋণের ৮ শতাংশই অনাদায়ী থেকে গেছে। ফলে শিক্ষাঋণ থেকে ব্যাঙ্কগুলির কোনও লাভই হচ্ছে না, বরং লোকসানের দিকে এগোচ্ছে। এই অবস্থায় বাণিজ্যের নিয়মেই ব্যাঙ্কগুলি শিক্ষাঋণে রাশ টানবে। কিন্তু সরকার জনসমর্থনের কথা ভেবে বা নীতিগত কারণে শিক্ষাঋণ দিতে চায়। সরকারি পরিকল্পনাকে উপেক্ষা করার উপায় নেই তাই শিক্ষাঋণ ব্যাঙ্কের ব্যবসার অন্যতম একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সরকারের দায় সরকারি ব্যাঙ্কের উপর বর্তালেও বেসরকারি ব্যাঙ্কের সেই দায় নেই। তাই শিক্ষাঋণের ৯০ ভাগই দিয়ে থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। তাই অনাদায়ী শিক্ষাঋণের বোঝাও প্রায় সবটা সরকারি ব্যাঙ্কের ঘাড়ে। বেসরকারি ব্যাঙ্কের শিক্ষাঋণ যৎসামান্য তাই অনাদায়ীও সামান্য।


পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাঋণ বিশেষ অনাদায়ী থাকছে না। অনাদায়ী থাকছে মাঝারি মাপের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের। তেমনি বেশি পরিমাণ শিক্ষাঋণ (সাড়ে সাত লক্ষ টাকার বেশি) নেয় তাদের ঋণ অনাদায়ী থাকে খুবই কম। কিন্তু কম টাকা যারা ঋণ নেয় (সাড়ে সাত লক্ষ টাকার কম) অনাদায়ী থাকে তাদের ঋণ। অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও পিছিয়ে পড়াদের ক্ষেত্রে ঋণ শোধ ঠিকঠাক হচ্ছে না। ফলে শিক্ষাঋণ দানের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলি এই অং‍‌‍‌শের ছাত্র-ছাত্রীদের এড়িয়ে যাচ্ছে। গরিব ছেলেমে‍‌য়েরা মেধাবী হলেও শিক্ষাঋণ থেকে বঞ্চিত হবার সম্ভাবনা বাড়ছে। ফলে আগামীদিনে অর্থের অভাবে লেখাপড়াই বন্ধ হয়ে যাবে লক্ষ লক্ষ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের।


এখন প্রশ্ন হলো শিক্ষাঋণ কেন শোধ হচ্ছে না? বিশেষ করে মধ্যস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা কম পরিমাণের ঋণ শোধ করতে পারছে না কেন? উত্তর একটাই। শিক্ষান্তে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। প্রতিবছর পাশ করে বেরো‍‌নো ছেলেমেয়েদের জন্য সরকার কর্মসংস্থানের জোগান দিতে না পারে তাহলে তাদের ঋণ শোধ করা অসম্ভব। পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করছে সরকার কাজ দিতে ব্যর্থ। বেকার ছেলেমেয়েদের পক্ষে ঋণ শোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অনাদায়ী ঋণ বাড়ছে। সত্য এটাই কাজ নেই, আয় নেই, তাই ঋণ শোধে অক্ষম শিক্ষিত বেকাররা।

Comments :0

Login to leave a comment