Editorial Ganashakti balanced diet

বছরভর সুষম আহার দিক রাজ্য সরকার

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Ganashakti balanced diet

ধরা পড়ে গেছে সরকার। বেরনোর আর রাস্তা না পেয়ে নজর ঘোরাতে চমক! গরিব মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার কৌশল। শিশুদের সঙ্গে ঘুরিয়ে প্রতারণার ছক। এমনিতেই বেহাল শিক্ষা ব্যবস্থা। তার ওপর একের পর এক দুর্নীতি ধরা পড়ায় দিশাহারা তৃণমূল সরকার। গত চারমাসে পশ্চিমবঙ্গের ছবি অনেকটা বদলে দিয়েছে গ্রামবাংলা। সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে জবাব চাইছে। একের পর এক মিছিল, সভা, সমাবেশ হচ্ছে। দুর্নীতি সামনে আসছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে দুর্নীতির পাহাড় ধরা পড়ছে। বেআব্রু পঞ্চায়েত। এখন কে না জানে, তৃণমূল নেতাদের মুখ লুকানোর জায়গাও কমছে ধীরে ধীরে! ক্ষোভের আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে প্রতিবাদের স্বর জোরালো হচ্ছে। মুখর শহরাঞ্চল, বস্তিবাসীরাও।

এতদিন সরকারের কানে জল যায়নি। দাবি তো ছিলই। দিনের পর দিন স্কুলছুট বেড়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকের অভাব। ৫টাকা ৪৫ পয়সায় মিড ডে মিলের খাবার দিতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা। পকেট থেকেও দিতে হচ্ছে তাঁদের। এতদিন কোনও দাবিই গুরুত্ব পায়নি। পড়ুয়া কমলেও ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগ করে বিদ্যালয় ভরানো হয়েছে। কনকনে ঠান্ডায়ও যখন মুখর গ্রাম, কি হবে বরাদ্দ বাড়িয়ে? তাও আবার একদিন মাত্র ২০ টাকা! বাকি পাঁচদিন? প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। তাঁরাও অবাক! একদিনের মাংসে সাতদিনের পুষ্টি হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে অসম্ভব। মাংসভাত হবে নামকেওয়াস্তে। ঐদিন পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়বে। এরসঙ্গে সপ্তাহে যুক্ত হবে ডিম ও মরশুমি ফল। ঐ টাকায় পড়ুয়াদের পাতে নির্দিষ্ট খাদ্য দেওয়া অসম্ভব।

সব শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি পড়ুয়াদের সুষম আহার দিতে হলে কমপক্ষে প্রয়োজন ১০ টাকা করে বরাদ্দ। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে প্রকল্পে সামান্য বৃদ্ধির পর আর বাড়ানো হয়নি। কন্যাশ্রী, সবুজসাথী প্রকল্পে ঢালাও খরচ করছে রাজ্য। অমানবিক কেবল মিড ডে মিলের বেলায়। চারমাসের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে ৩৭১ কোটি ৯০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৪০০ টাকা। প্রশ্ন উঠে এখানেই। মাত্র চারমাস কেন! বছরভর নয় কেন? ছটি কাজের দিন ধরলে প্রতিদিন বাড়ল ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। এই টাকায় সুষম আহার সম্ভব নাকি! এমনিতেই মিড ডে মিল নিয়ে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলির চোখের জল, নাকের জল এক হওয়ার অবস্থা। তারপরে মাংস, ফল এবং ডিম। বিড়ম্বনা বাড়বে বৈ কমবে না।

গ্রামবাংলা বলছে অন্যকথা। আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সরকারের। ক্ষুব্ধ মানুষের মন পেতে তাই তাদের ঘরের ছেলেমেয়েদেরকেই বেছে নিল সরকার। কিন্তু প্রশ্ন, এতে কি চিঁড়ে ভিজবে? চারমাসে ষোলদিন মাংস, ফলকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা। সদিচ্ছা থাকলে সারা বছরের জন্য সিদ্ধান্ত নিত সরকার। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বৈতরণি পার হওয়ার কৌশল। এই কৌশল ধরে ফেলেছে গরিব মানুষ। লুটের পাহাড় সামনে এসেছে। হাওয়া ঘুরে গেছে। তাই হাতে ফল ধরিয়ে মন পাওয়ার চেষ্টা।  দাবি উঠেছে, সত্যিই যদি সরকার পড়ুয়াদের পুষ্টি চায় তাহলে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী বরাদ্দ করুক। নবান্ন মনে করলেই হবে না। প্রকল্পটি চলছে। মোট বরাদ্দের ৬০ শতাংশ দেয় কেন্দ্র। বাকিটা রাজ্য। তাই নতুন করে ঢাক বাজানোর কিছু হয়নি। বরং আন্তরিক ভাবে রাজ্য সরকার দায়িত্ব পালনের উদ্যোগ নিক। চারমাস খেয়ে বাকি আটমাসের ঘাটতি যে মেটে না, সেকথা সরকার না বুঝলেও পাগলে বোঝে। বছরের শুরুতেই সরকারের চালাকি ধরা পড়ে গেছে। কেবলমাত্র পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় না রেখে মানবিক হোক নবান্ন।

Comments :0

Login to leave a comment