জানা অজানা
নতুনপাতা
মধুসূদনের জীবনে মা জাহ্নবী দেবী
তপন কুমার বৈরাগ্য
অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের
২৫ শে জানুয়ারি যশোরের কেশপুরের কপোতাক্ষ নদীর তীরে
সাগরদাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাণ দিয়ে ভাবতেন
এই নদীর কথা।এই নদীর তীরে বসে ছোট্ট ছেলেটার হয়েছিল কবিতার
হাতে খড়ি।এই নদী ,গ্রামের প্রকৃতিকে নিয়ে মনের রঙ মিশিয়ে
মনের পাতায় বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলেন। যে গুলো মাকে শুনাতেন।
ছোট্ট ছেলের কবিতা শুনে তিনি তাঁকে বুকে টেনে নিতেন।
বাবা রাজনারায়ণ দত্তকে ওকালতির কাজে প্রায় কলকাতায়
চলে আসতে হতো।
মা একাই থাকতেন। সন্ধ্যায় মা, মধুসূদনকে বাড়ির পড়া করানোর পর
নিজের কাছে টেনে নিতেন।শুনাতেন রামায়ণ, মহাভারত, ব্রহ্মবৈবর্ত
পুরাণের কথা। মা সুর করে যখন পয়ার ছন্দের লাইনগুলো
পড়তেন, তখন ছেলে একমনে তাহা শুনতেন।তাঁর সবচেয়ে ভালো
লাগতো ইন্দ্রজিৎ অর্থাৎ মেঘনাদের সমস্ত ঘটনাটা। নিকুম্ভিলা
যজ্ঞাগারে ইন্দ্রজিতের ধ্যানরত মূর্তি, নিরস্ত্র মেঘনাদকে
লক্ষ্মণের অন্যায়ভাবে বধ করা, এইটুকু বালক সেদিন মেনে নিতে পারেন নি।
মাকে একদিন প্রশ্ন করলেন--আচ্ছা বলো তো মা, লক্ষণ যদি
সামনাসামনি মেঘনাদের সাথে যুদ্ধ করতো, তাহলে নিশ্চয়
লক্ষণ হেরে যেত?
মা একমাত্র আদরের সন্তানকে বুকে টেনে নিয়ে বললেন--ঠিক বলেছিস বাবা।
সত্যিকারের বীর ছিলো তো মেঘনাদ।
সেদিন থেকে মধুসূদনের চোখে মেঘনাদ হয়েছিলেন বীর।
মধুসূদন ইংরাজী সাহিত্যে ব্রতী হয়ে খ্যাতি অর্জন করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু বিদেশি সাহিত্যে তিনি খ্যাতি অর্জন করতে পারলেন না। নিজের
ভুল বুঝতে পারলেন। দুঃখ করে লিখলেন--- হে বঙ্গ,ভান্ডারে তব
বিবিধ রতন ,তা সবে,(অবোধ আমি )
অবহেলা করি,পরধন লোভে মত্ত করিনু ভ্রমণ।
বাংলামায়ের কোলে ফিরে এলেন। বারো বছর পর্যন্ত মায়ের মুখে শোনা
রামায়ণ,মহাভারত,পুরাণের ঘটনাগুলো চোখের সামনে জ্বল
জ্বল করে ভেসে উঠল। মাত্র চার বছর বাংলায় সাহিত্য সাধনার সুযোগ পেলেন। লিখলেন --অমিত্রাক্ষর ছন্দে মেঘনাদ বধ কাব্য।
যে কাব্যে মেঘনাদ হয়ে উঠলেন বীর নায়ক।মহাভারতের
প্রবীর ও জনাকে নিয়ে লিখলেন বীরাঙ্গনা কাব্য। পুরাণের কাহিনী নিয়ে
লিখলিন তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য।
সেদিন তাঁর মা একমাত্র ছেলের অমর কাব্যকাহিনী দেখে
যেতে পারেন নি।কিন্তু প্রতিটা কাব্য লেখার শেষে মায়ের জন্য
হয়তো মধুসূদনের দু'ফোঁটা করে চোখের জল ঝরে পড়ছিল।
Comments :0