Ganashakti Editorial-Narendra Modi, Adani

মোদীর আদানি বিড়ম্বনা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Ganashakti Editorial-Narendra Modi Adani


উটপাখি বালিতে মুখ গুঁজে রাখলে যেমন মরুঝড় থেমে যায় না তেমনি সরকার চোখে ঠুলি, কানে তুলো আর পিঠে কুলো লাগিয়ে মৌনব্রত পালন করলে আদানি সাম্রাজ্যের পতন আটকানো যাবে না। সেই গত ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকে শেয়ার বাজারে আদানি সাম্রাজ্যের দশটি কোম্পানির শেয়ারমূল্যে যে ধস শুরু হয়েছিল তা আজও অব্যাহত। ইতিমধ্যে মূল্য পতনের জেরে শেয়ার মা‍‌লিক বা শেয়ারে লগ্নিকারীদের সর্বমোট ১০ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা উবে গেছে। রিপোর্ট প্রকাশের আগে অপরাজেয় আদা‍‌নি সাম্রাজ্যের সব শেয়ারের মোট বাজারমূল্য ছিল ১৯ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা। সেটা এখন নামতে নামতে এসে ঠেকেছে মাত্র সাড়ে ৮লক্ষ কোটি টাকায়। যে আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্য ছিল ১২হাজার কোটি ডলার এখন তা নেমে এসেছে ৫ হাজার কোটি ডলারে। কিছুদিন আগেও যে গৌতম আদানি ছিলেন বিশ্বের তিন নম্বর ধনী। এখন তিনি ২৪তম।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে বলা হয়েছে কারচুপি ও জালিয়াতি করে আদানিরা তাদের কোম্পানির শেয়ারমূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও অভিযোগ খণ্ডনের উপযোগী কোনও প্রমাণ আদানিরা হাজির করতে পারেনি।

 হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেওয়া হলেও আজও তেমন কোনও মামলা হয়নি। তাহলে কি এটাই স্পষ্ট হচ্ছে যে মামলা করে বিশেষ সুবিধা হবে না। উলটে আরও জালে জড়িয়ে যাবার আশঙ্কা। বদলে আদানিরা সুপ্রিম কোর্টে আবদার করেছে হিন্ডেনবার্গ ভারতীয় আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা তা তদন্ত করে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিতে। এমন আবেদনও করেছে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ নিষিদ্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিতে। বোঝাই যাচ্ছে সখাত সলিলে হাবুডুবু খাচ্ছে আদানিরা। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে আদানিদের হয়ে প্রকাশ্যে কিছু করতেও সাহস পাচ্ছে না মোদী সরকার। অথচ মোদীরই অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু গৌতম আদানি। মোদীর পৃষ্ঠপোষকতায়ই আদানি সাম্রাজ্যের এই বাড়বাড়ন্ত। আসলে নরেন্দ্র মোদীদেরও এখন শাঁখের করাতের মতো অবস্থা। যেদিকে যাবে সেদিকেই বিপদ।


গৌতম আদানির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে মোদী সরকারের সম্পর্ক এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। আদানি সাম্রাজ্যের উত্থানে মোদীর সরকারের ভূমিকাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। মুখ্যমন্ত্রী মোদী ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর সহযোগিতা ছাড়া উল্কাগতিতে আদানি সাম্রা‍‌জ্যের বিস্তার সম্ভব হতো না। এই অপ্রিয় সত্য যত কম আলোচিত ও বিতর্কিত হয় ততই মোদীর পক্ষে মঙ্গল। তাই গোড়া থেকেই তিনি মুখে কুলুপ এঁ‍‌টে বসে আছেন। দেশজুড়ে, এমনকি বিদেশেও তোলপাড় কাণ্ড চললেও তিনি ভাবলেশহীন। সংসদের আলোচনার জোরালো দাবি উঠলেও আলোচনা করতে দেওয়া হয়নি। গোটা বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিও মানা হয়নি। সুপ্রিমকোর্টে নজরদারিতে তদন্তের দাবিও অস্বীকার করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনোভাবেই আদানি প্রসঙ্গ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে না আসে, আদানিকাণ্ডের গোপন রহস্য মানুষ জেনে না যায় তারজন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মোদী সরকার।


কাকে রক্ষা করতে  চাইছেন মোদীরা? আদানিদের নাকি নিজেদের? এত চেষ্টা করেও কি আদানিদের পতন ঠেকানো যাচ্ছে? বিশ্বের সামনে ভারতের মান মর্যাদা রক্ষা করা যাচ্ছে? আদানিদের জালিয়াতি নতুন কোনও আবিষ্কার নয়। আগেও অনেকবার প্রকাশ্যে এসেছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে হইচই করার সুযোগ আটকানো হয়েছে। মিডিয়ার উপর চাপ দিয়ে খবর চাপা দেওয়া হয়েছে। এবার যেহেতু বোমা ফেটেছে আমেরিকা থেকে এবং খবর ছড়িয়েছে সব দেশে তাই মোদীদের সেটা আটকানোর ক্ষমতা নেই। প্রবল প্রতাপশালী ‘বিশ্বগুরু’-র ৫৬ ইঞ্চির ছাতি চুপসে গেছে। দুনিয়া জেনে গেছে আদানিদের জালিয়াতির কথা এবং আদানিদের উত্থানে মোদীর ভূমিকার কথা।
আদানিকাণ্ড দুনিয়ার কা‍‌ছে প্রমাণ করে দিয়েছে মোদী জমানায় ভারতের আর্থিক ক্ষেত্র ঠিকঠাক চলছে না। স্বচ্ছতার ভীষণ অভাব। এই বাজারে লগ্নিকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত নয়। তাই হু হু করে বিদেশি লগ্নি ভারত থেকে উবে যাচ্ছে। মোদীরা যে আদানিকাণ্ডের সত্য স্বচ্ছতার সঙ্গে উদ্‌ঘাটনে রাজি নয় সেটাও স্পষ্ট হয়ে গেছে সুপ্রিম কোর্টে। তাই সরকারের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি করে সরকারি শর্ত মোতাবেক তদন্তের সরকারি প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিয়ে নিজেরাই কমিটি তৈরি করে দেবে বলে জানিয়েছে।


আদানিকাণ্ডের গোপন রহস্য আড়াল করার চেষ্টা আসলে ক্ষতি করছে দেশের অর্থনীতির। ভারতের প্রতি আস্থা কমছে। বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে মেলবন্ধন গুরুতর ধাক্কা খাচ্ছে। দেশের স্বার্থের বিনিময়ে মোদীরা নিজেদের বাঁচাতে মরিয়া।
 

Comments :0

Login to leave a comment