HAWKER DEPUTATION KOLKATA

কলকাতায় বিশাল হকার মিছিল, কর্পোরেশনের সামনে চলছে অবস্থান

রাজ্য কলকাতা

হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে কলকাতায় মিছিলের একাংশ। ছবি: প্রিতম ঘোষ

প্রতীম দে
পৌরমন্ত্রী এবং মেয়রকে নিতে হবে হকারদের দাবিপত্র। অভিযোগ জানাতে দিতে হবে। যতক্ষণ না ডেপুটেশন নেওয়া হয় চলবে অবস্থান।
কলকাতা কর্পোরেশনের ঠিক সামনে এই ঘোষণা করলেন হকার যৌথ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবারই ধর্মতলায় লেনিন মূর্তি থেকে কলকাতা কর্পোরেশনে বিশাল মিছিল নিয়ে যান হকাররা। সিআইটিইউ সহ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়েছেন মিছিলে। 
কর্পোরেশনের সামনে সভায় সভাপতিত্ব করেছেন দেবাশিস দে। হকার যৌথ মঞ্চের ডাকে সিআইটিইউম এআইটিইউসিম টিইউসিসি, ইউটিইউসি, এআইইউটিইউসি, এআইসিসিটিইউ, আইএনটিইউসি অনুমোদিত হকার সংগঠনগুলি যোগ দেয় বিক্ষোভে।
বেলা দু’টোয় শুরু হওয়ার কথা ছিল মিছিল। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হকাররা পৌঁছে যান ঢের আগে। উঠতে থাকে স্লোগান- হকার উচ্ছেদ বন্ধ কর, রুজি-রুটি কেড়ে নেওয়া চলবে না। পরণে মলিন পোশাক, মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। যোগ দিয়েছেন মহিলারা। তাঁদের পরিবার বিপন্ন। দশ দিনেরও বেশি রুজি বন্ধ। শহর কলকাতা এবং আশেপাশের বহু এলাকার হকাররা তবু জেদি থেকেছেন। কলকাতার মাঝখানে তুলে দিয়েছেন সারা রাজ্যের হকারদের দাবি। 
দেবাশিস দে বলেছেন, ‘‘ উত্তর প্রদেশে যোগীর বুলডোজার বাংলায় চালাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ করা যাবে না।’’
হকার যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক এবং সিআইটিইউ নেতা অসিতাঙ্গ গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘‘বেআইনি ভাবে হকার উচ্ছেদ নামিয়ে আনছেন মমতা। লোকসভা ভোটে শহরে ফল খারাপ হওয়ায় এই রাজনৈতিক সংকীর্ণ কাজ করছেন। কর্পোরেটদের সাহায্য করতে হকারদের তুলে দিতে চাইছে তৃণমূল সরকার। হকার না থাকলে লোকে মলে যাবে, অনলাইন থেকে কিনবে, কর্পোরেটদের লাভ হবে আর তৃণমূল নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে টাকা পাবে।’’


গাঙ্গুলি বলেছেন কিভাবে শ্রমজীবী হকারদের মধ্যে ভাষার ভিত্তিতে প্রাদেশিকতার ভিত্তিতে ভাগাভাগি করছেন মুখ্যমন্ত্রী। গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘‘হকারদের বিভাজন করতে চাইছে মমতা। বাঙালি-অবাঙালি ভাগ করছে। আমরা বলছি এই মারাত্মক খেলা বন্ধ হোক। কোনও শ্রমজীবী মানুষ এই অন্যায় মেনে নেবেন না।’’ 
হকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় হকার আইন চালু করতে হবে। পছন্দমতো নিজেদের লোকজনকে দিয়ে টাউন ভেন্ডিং কমিটি তৈরি করেছে সরকার, কোনও ভোট করেনি। এই কমিটি বেআইনি। কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী এভাবে হকার উচ্ছেদ করা বেআইনি। কলকাতায় কর্পোরেশনের লাইসেন্স রয়েছে, তালিকায় নাম রয়েছে এমন হকারদেরও তুলে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করতে হবে এই অন্যায়।’’
শারীরিক অসুস্থতার জন্য সভায় আসতে পারেননি আইনজীবী এবং সিপিআই(এম) সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য মোবাইলে শুনিয়ে দেওয়া হয়েছে জনতাকে। সমবেত হকারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘‘এটা মমতার হঠাৎ পরিকল্পনা নয়। মমতা অনেক আগে বলেছিলেন শ্রমিকরা ধর্মঘট করতে পারবে না। মালিকদের হয়ে তৃণমূল ইউনিয়ন দখল করতে থাকে। সিঙ্গুর করতে দিল না। বেকার যুবকরা বাইরে যাচ্ছেন কাজের জন্য।  তৃণমূল টাকা নিয়ে হকার বসায়। এখন বড় ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা পাচ্ছে তৃণমূল তাই হকার তুলে দিতে চাইছে। হকারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।’’
সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সম্পাদক অনাদি সাহু বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের পর মমতা মনে করছেন এই গরিব মানুষদের ওপর বুলডোজার চালানো যেতে পারে। মুখের কথায় জেলায় জেলায় হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গরিব হকারদের জিনিস আটক করা হচ্ছে। যাদের লাইসেন্স আছে তাদের তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারি দপ্তরে কোনও নিয়োগ নেই। কারখানা বন্ধ হয়েছে, নতুন কোন কারখানা তৈরি করেনি দুই সরকার। প্রতিদিন পুলিশ, তৃণমূলের গুন্ডারা হকারদের থেকে টাকা তুলছে। কোন আলোচনা ছাড়াই হঠাৎ হকার তুলে দেওয়া শুরু হলো। এই কাজ চলতে পারেনা। কেন্দ্রীয় হকার আইন লাগু করতে হবে। ১০ বছর ধরে রাজ্য সরকার রাজ্যে হকার বিষয়ক আইন প্রয়োগ করেনি। কোনও ভাবে হকার উচ্ছেদ করা যাবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘বুলডোজার বন্ধ করুন মানুষের অধিকার রক্ষা করুন।’’
ধর্মতলা এবং কর্পোরেশন চত্বরে শ্রমজীবী অন্য অংশের বহু জনতা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হকারদের মিছিল দেখেছেন। দোকান-শোরুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন কর্মচারীরা। রাজপথে প্রতিবাদের চেহারা দেখেছে কলকাতা। 

(গণশক্তি-র ফেসবুক পেজে লাইভ দেখুন: https://www.facebook.com/ganashaktiweb)

Comments :0

Login to leave a comment