গত শুক্রবার রাত থেকে একনাগাড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। সোমবারও অব্যাহত বৃষ্টি। অবিরাম বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে রাজ্যের একাধিক জেলা। বৃষ্টিতে মাটির দেওয়াল ধসে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বন্যার আশঙ্কা আরামবাগ মহকুমায় ব্যাপক ক্ষতি কৃষিতে। ক্ষতিগ্রস্ত খড়গপুর পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা৷ কোথাও কোথাও পুকুরের সঙ্গে মিশে গিয়েছে রাস্তা৷ যে কোন মূহুর্তে পুকুরে পড়ে গিয়ে আহত হতে পারেন সাধারণ মানুষও। নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে কোনওরকম ব্যবস্থা করেনি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জল বেড়েছে ঘাটালের শিলাবতী, কেঠিয়া-সহ একাধিক নদীগুলিতে৷ ডুবে গিয়েছে চন্দ্রঘোনা শিলাবতী নদীর উপর কাঠের সেতু। অতিবৃষ্টির কারণে দামোদরের দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বেড়ে এখন ৪৮.৫৫০ কিউসেক। বিঘার পর বিঘা ধান খেত জলে ডুবে গেছে। জল বেড়েছে নদী গুলিতে, আবারও বন্যার আশঙ্কা। বৃষ্টির জেরে টুমনি নদীর জলস্তর বেড়েছে। প্লাবিত হয়েছে কাঁকসার বিদবিহারের শিবপুর, কৃষ্ণপুর, নবগ্রাম-সহ একাধিক গ্রামের চাষের জমি। কয়েক হাজার বিঘা চাষের জমি এখন জলের তলায়। টুমনি নদীর জলে শিবপুরের ভাসাপুল জলমগ্ন হওয়ায় বিচ্ছিন্ন পশ্চিম বর্ধমানের সঙ্গে বীরভূমের যোগাযোগ। দুর্ভোগের মুখে দুই জেলার মানুন। লাগাতার বৃষ্টিতে জলের তলায় চলে গিয়েছে বাঁকুড়ার মেজিয়া থানার মাতাবেল কজওয়ে। বাড়তে শুরু করেছে মাতাবেল খালের জলস্তরও। রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কায়।
ঘাটাল ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০০’র বেশি মৌজা জলের তলায়।
সোমাবর বারাবনি থানার ইটাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একটি গ্রামে গোয়াল ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে অশোক ব্যানার্জী(৫২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। চাপা পড়ে একটি গরুর মৃত্যু হয়েছে জখম হয়েছে আরেকটি গরু।
আরামবাগের বেশকিছু জায়গায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে জল। বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ শিবিরে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে দারকেশ্বর নদের জলও। ডিভিসি জল ছাড়লে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোঘাট এলাকার বাসিন্দারা। গোঘাট এক ও দুই ব্লকের বালি, কামারপুকুর ,মান্দারণ, বাহাদুর, সাওড়া,কুমুড়সা ,পশ্চিম পাড়া আটটি পঞ্চায়েত এলাকার বৃষ্টির জলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আরামবাগ-মেদিনীপুর ৭ নং রাজ্য সড়কের ওপর দিয়ে ছুটছে বন্যার জল। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে মানুষজন। ইতিমধ্যেই কামারপুকুর-জয়রামবাটী ও কামারপুকুর-গড়বেতা রাস্তা জলের তলায়। যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আরামবাগ-মেদিনীপুর রাস্তার ওপর দিয়ে বইছে বন্যার জলের স্রোত। জল ঢুকতে শুরু করেছে কামারপুকুর কলেজে। কামারপুকুর চেকপোস্ট মোড়ে শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ ছাত্রী আবাসিক বিদ্যালয়ে বন্যার জল ঢুকে গিয়েছে। পুলিশ ব্যারিকেট দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে গোঘাটের বিভিন্ন এলাকায়। জল বাড়তে শুরু করেছে দারকেশ্বর নদীতে। আর তাতেই আবারো বন্যার আশঙ্কা আরামবাগ মহকুমা এলাকায়। গোঘাট ব্লকের জলমগ্ন হয়েছে একাধিক বাড়ি। কয়েক শো বিঘা কৃষি জমি জলের তলায়।
অতিবর্ষে এভাবেই ধসে গিয়েছে বীরভূমের নানা জায়গার মাটির বাড়ি।
বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে অতি বর্ষণের জেরে বিপর্যয় চিত্র ঘোরালো হয়েছে আরও। প্রাণ গিয়েছে মহিলার। মারা গিয়েছে গবাদি পশু, জখম হয়েছেন বহু, বিভিন্ন রাস্তা উপর দিয়ে প্রবল স্রোতে জল বইয়ে চলার ফলে হয়েছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। গত আগস্ট মাসের শুরুতেই এক দফা এমন বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার মাস দেড়েকের মাথায় আবার নেমে এসেছে বিপর্যয়। চারদিন ধরে নাগাঢে বৃষ্টিতে বিধস্ততার চিত্র হয়ে উঠেছে আরও করুন।
প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে ইলামবাজারে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হলো এক মহিলার। মৃতের নাম মালতি মাল(৫০)। রবিবার রাত্রি আটটা নাগাদ মাটির দেওয়াল ভেঙ্গে চাপা পড়ে মালতি বাগদি। পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে ইলামবাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। সোমবার ভোরে মারা যায় মালতি। অপরদিকে অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে নানুরের মুরুন্দি গ্রামে রবিবার রাত্রি সাড়ে বারোটা নাগাদ কাদু সেখের মাটির বসতবাড়ি ভেঙে যায়। বাড়ি চাপা পড়ে জখম হয় এক শিশু সহ চারজন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুবরাজপুর ব্লকের প্রতাপপুর গ্রামে রবিবার ভোরে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে জখম হয় লালন বাগদী এবং তাঁর স্ত্রী। খয়রাশোল ব্লকের কৃষ্ণপুর গ্রামের ফটিক মন্ডলের বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যায় একটি বাছুর। জখম হয় একটি গোরু। লাগাতার বৃষ্টিতে চিনপাইয়ের মুথাবেড়িয়া গ্রামমল্লারপুরের যবুনি গ্রামে ভেঙে পড়েছে একাধিক মাটির বাড়ি। বাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে গবাদি পশুর।
নিম্নচাপের জেরে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিতে বোলপুর-শান্তিনিকেতনে একাধিক গাছ উপড়ে গিয়েছে। টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে ফুঁসছে কোপাই, অজয়, ময়ূরাক্ষী, দ্বারকা নদী৷ শনিবার রাত থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন একাধিক এলাকায়৷ রাতভর বৃষ্টির কারণে গ্রামীণ অঞ্চল এবং শহরাঞ্চলের সড়কপথে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। ময়ূরাক্ষী নদীর তিলপাড়া ব্যারেজ থেকে ছাড়া হয়েছে সাত হাজার কিউসেক জল। কঙ্কালীতলা থেকে তারাপীঠ শ্মশান – ডুবে গিয়েছে জলে। অজয় নদের উপর জয়দেবের ফেরিঘাট জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে। ফলে বীরভূম ও পশ্চিম বর্ধমানে যোগাযোগ একদিকে বিচ্ছিন্ন৷ প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুর পথে যাতায়াত করতে হবে মানুষজনকে। ইলামবাজারের জয়দেবের অস্থায়ী কজওয়েও জলের স্রোতে ভেসে যায়। এরফলে সমস্যায় পড়েছেন প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ। লাভপুরের কুয়ে নদীর বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন কাঁদরকুলা, জয়চন্দ্রপুর, চতুর্ভূজপুর সহ ঠিবা অঞ্চলের ১৫টি গ্রাম। জেলার একাধিক রাস্তা জলের তলায়। ঝুঁকি নিয়েই চলছে পারাপার।
পদ্মা নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। কয়েক দিনে নদী গিলে খেয়েছে কয়েক বিঘে জমি। বসতি এলাকার দিকে এগচ্ছে ভাঙন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে বিলবোড়াকোপরা পঞ্চায়েতের তারানগর গ্রামে। নদী ঘরের কাছে চলে আসায় ইতিমধ্যেই ঘর বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। একদিকে লাগাতার বৃষ্টি অন্য দিকে ভাঙন এগিয়ে আসায় বিপদে পড়েছেন এলাকার মানুষ। আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকার মানুষের।
Comments :0