SC Bulldozer

বুলডোজার দাওয়াই’ চলবে না এদেশে, সুপ্রিম কোর্টে ‘থাপ্পড়’ খেলো বিজেপি

জাতীয়

কেন্দ্রীয় সরকার এবং শাসক দল বিজেপি’কে জোর ধাক্কা দিয়ে তাদের কুখ্যাত ‘বুলডোজার জাস্টিস’ বন্ধ করল সুপ্রিম কোর্ট। সরকারি আইনজীবীর যাবতীয় ওজর-আপত্তি নস্যাৎ করে মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ অন্তর্বর্তী আদেশে জানিয়েছে, একতরফাভাবে অপরাধী সাজিয়ে কারুর বাড়িঘরে বুলডোজার চালানো যাবে না। আগামী ১ অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত আদালতের অনুমতি ছাড়া এভাবে কোনও নির্মাণ ভাঙা যাবে না। সারা দেশেই এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে। তবে রাস্তা, জলাশয়, ফুটপাত, রেললাইনের ধারে সরকারি জায়গায় বেআইনি জবরদখলের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ কার্যকরী হবে না বলে জানিয়েছে বেঞ্চ।  
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরেই উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বিনা বিচারে ‘অপরাধী’ আখ্যা দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এই বেআইনি তৎপরতাকে রীতিমতো বুক ফুলিয়ে ‘বুলডোজার ন্যায়বিচার’, ‘বুলডোজার দাওয়াই’ ইত্যাদি আখ্যা দিচ্ছে আরএসএস-বিজেপি’র প্রশাসক-দুষ্কতীরা। এহেন সাম্প্রদায়িক হামলাবাজি বন্ধের আরজি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন।
মঙ্গলবার শুনানি চলাকালীন বিচারপতিরা বারবার তথাকথিত ‘বুলডোজার ন্যায়বিচার’ প্রক্রিয়ায় অসন্তোষ জানাতে থাকায় দৃশ্যতই মরিয়া হয়ে ওঠেন কেন্দ্রীয় সরকার ও উত্তর প্রদেশের আইনজীবী তথা দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘কোন বিচার ছাড়াই বুলডোজার চালিয়ে অভিযুক্তের সম্পত্তি ধ্বংস করা সাংবিধানিক নীতি বিরোধী। এদেশে এসব কাজের অনুমতি দেওয়া যায় না। যে কোনও কাজেরই একটি সুনির্দিষ্ট নীতি-নির্দেশিকা থাকা উচিত।’’ বিচারপতিদের মনোভাব বুঝে রীতিমতো মরিয়া কায়দায় তুষার মেহতা পালটা বলেন, ‘‘চারদিকে একটি ভাষ্য চলছে যেন এই ধরনের উচ্ছেদ বা ধ্বংসের কাজ বেআইনি; শুধুমাত্র মুসলিমদের বিরুদ্ধেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আক্ষেপের ব্যাপার, মাননীয় বিচারপতিরা এই ভাষ্যে প্রভাবিত হয়ে যাচ্ছেন।’’ মেহতার এই সওয়ালের জোরালো প্রতিবাদ জানান আবেদনকারীদের আইনজীবী সি ইউ সিং, এমআর সামসাদ, নিজাম পাশা, রাশমি সিং প্রমুখ। 
বুলডোজারের সাহায্যে উচ্ছেদ বন্ধে যে কোনও রকমের অন্তর্বর্তী আদেশের তীব্র বিরোধিতা করে তুষার মেহতা এদিন এজলাসে যুক্তি দেন, ‘‘এমন হলে তো সরকারি কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। আবেদনকারীদের যুক্তিতে বিশ্বাস করা উচিত হবে না আদালতের। পনেরো দিন অনেক বেশি সময়, অন্তত সাতদিন স্থগিতাদেশ থাকুক।’’ এসময় বিচারপতি গাভাই তাঁকে বলেন, ‘‘পনেরো দিন এসব ভাঙচুর বন্ধ রাখলে কারুর মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়বে না। আপাতত ১ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ থাকবে। এরপর আমরা এব্যাপারে নির্দেশিকা জানাবো।’’ 
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বরের শুনানিতেও সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়েছিল, ‘‘কেউ অভিযুক্ত হলেই একতরফাভাবে তার বাড়ি ভেঙে ফেলা যায় না। দেশে এমন কোনও আইন নেই। অন্য সব সরকারি কাজের মতো নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকা উচিত। কারুর সম্পত্তি ধ্বংস করতে হলে সেই পদ্ধতি মেনেই করতে হবে।’’ সেই শুনানিতেও নির্মাণ ভাঙার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন বিচারপতিরা।
২ সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের এহেন পর্যবেক্ষণের পরে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মতো বিজেপি’র কোন কোন নেতাকে কার্যত হুমকির সুরে প্রকাশ্যে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বুলডোজার চলবেই। যার হাতে ক্ষমতা আছে তার ইচ্ছামতোই চলবে।’’ এদিনের শুনানিতে কারুর নাম না করেই বেঞ্চ বলেছে, ‘‘সেসব মন্তব্য আমরা শুনেছি। কিন্তু আপাতত আমরা এব্যাপারে কিছু বলছি না। তবে বুলডোজার-তৎপরতাকে গৌরবান্বিত করা বন্ধ রাখতে হবে। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। দরকার হলে নির্বাচন কমিশনকেও বলব আমরা।’’
সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায়কে স্বাগত জানিয়ে কংগ্রেস বলেছে, মোদী আমলে বুলডোজার বিদ্বেষ, হিংসা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই রায় বুলডোজার-প্রেমী মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতাদের গালে সপাট থাপ্পড়। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিং যাদব এদিন এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, শুধু বুলডোজারকেই নয়, এটির অপব্যবহারকারীদের ধ্বংসাত্মক রাজনীতিকেও মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
 

Comments :0

Login to leave a comment