world

নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের

আন্তর্জাতিক

নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। গাজা উপত্যকাসহ প্যালেস্তাইন ভূখণ্ডে ইজরায়েলি দখলদার বাহিনী (আইওএফ) কর্তৃক সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইজরায়েলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
আইসিসির প্রসিকিউটর করিম এ এ খান কেসি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ২০২৪ সালের ২০ মে প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে প্রি-ট্রায়াল চেম্বার ওয়ানের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন জমা দিয়েছে তার কার্যালয়।
ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন ইজরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকরা দেখেছেন যে, এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে যে, উভয়েই অনাহারকে যুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে ব্যবহার করে হত্যা, নিপীড়ন ও অন্যান্য অমানবিক কাজ করেছে।  চেম্বার বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত ভিত্তিও খুঁজে পেয়েছে যে উভয়েই উচ্চতর কর্তৃপক্ষ হিসেবে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণ পরিচালনার দায়ী।
করিম খান ১২৪টি রাষ্ট্রপক্ষকে এই বিচার বিভাগীয় আদেশ মেনে চলার আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক আইন অটুট রাখতে সহযোগিতা করার জন্য রাষ্ট্রবহির্ভূত সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েল আইসিসির সদস্য নয়।
হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি (দেইফ) এবং ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সিনওয়ার ও হানিয়া যথাক্রমে অক্টোবর ও জুলাই মাসে ইজরায়েলের হাতে নিহত হন।
ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বৃহস্পতিবার আইসিসির সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছে যে তারা ‘‘আদালতের মিথ্যা ও অযৌক্তিক অভিযোগগুলি ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছে’’, যা, ‘‘ইজরায়েলের প্রতি ইহুদিবিদ্বেষী বিদ্বেষ দ্বারা অনুপ্রাণিত পক্ষপাতদুষ্ট বিচারকদের বিশ্বাস’’ থেকে উদ্ভূত।

এদিকে, ইজরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির, যিনি প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে তার বর্ণবাদী ও উস্কানিমূলক নীতি এবং পদক্ষেপের জন্য পরিচিত, এক্স-এ তার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন: ‘‘হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আবারও দেখিয়েছে যে এটি ইহুদিবিদ্বেষী। এটা সম্পূর্ণ পাগলামি। ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধে আমি প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করি’’।
অন্যদিকে বাইডেনের প্রশাসন জানিয়েছে, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি তারা ‘মৌলিকভাবে প্রত্যাখ্যান’ করছে। 
প্যালেস্তাইন ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট (হামাস) আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে একে ‘ন্যায়বিচারের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বৃহস্পতিবার বলেছেন যে এই সিদ্ধান্ত ‘‘সাধারণভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রতিকারের দিকে পরিচালিত করতে পারে, তবে বিশ্বের সমস্ত দেশ যদি এটি সমস্ত রকমভাবে সমর্থন না করে তবে এটি সীমিত এবং প্রতীকী থেকে যাবে’’।
আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার সাথে সাথে বৃহস্পতিবার উত্তর গাজা স্ট্রিপে নতুন করে ইজরায়েলি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, যাতে শিশু ও মহিলা সহ কমপক্ষে ৮৮ জন নিহত হয়েছে। বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের নিকটবর্তী একটি আবাসিক চত্বরে বিমান হামলায় কমপক্ষে ৬৬ জন নিহত হয়, শেখ রাদওয়ান এলাকার একটি বাড়ি লক্ষ্য করে আরেকটি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়।

Comments :0

Login to leave a comment