তীব্র ধিক্কারের মুখে পড়ে তৃণমূল দুষ্কৃতী ‘জেসিবি’-কে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্ত তার দলবল চোপড়ায় সক্রিয় রয়েছে। থমথমে পরিবেশের মধ্যেই বেরিয়ে পড়েছে ‘জেসিবি’-র এক ভাইপোর ছবি, হাতে রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র।
চোপড়ার লক্ষ্মীপুর এলাকায় অভিযোগ যে তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের বাহিনী আগের মতই সক্রিয় রয়েছে। এই নেটওয়ার্ল ভাঙতে পুলিশ বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
‘জেসিবি’ বা তাজিমুল হকের ভিডিও ভাইরাল হতেই চাপে পড়েছিল চোপড়ার পুলিশ এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকার। দেখা গিয়েছিল, যুবক-যুবতীকে রাস্তায় বসিয়ে সালিশি সভা ডেকে লাঠি দিয়ে লাগাতার মারছে এই দুষ্কৃতী।
এদিন বন্দুক হাতে বেরিয়েছে শাহ আলমের ছবি। শাহ আলম ‘জেসিবি’-র ভাইপো। আরেক ভাইপো আলমগির আবার বেপাত্তা। টাকা তোলা থেকে বিভিন্ন জায়গায় হুমকি দেওয়ার কাজ শাহ আলমের বাহিনী চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।
সিপিআই(এম) উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক শুক্রবার বলেন, ‘‘এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীবাহিনী তোলা আদায় থেকে শুরু করে মানুষকে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। জমি দখল করছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’’
তিনি জানান সোমবার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানানো হবে। আনোয়ারুল হক বলেছেন, ‘‘আমরা সোমবার ইসলামপুর পুলিশ জেলার এসপি-কে ডেপুটেশন দেব। বিক্ষোভ হবে। ছবি ও তথ্য দিয়ে অন্যায়ের প্রমাণও দেব। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হবে পুলিশকে।’’
যুবক-যুবতীকে রাস্তায় ডেকে সালিশি সভা বসিয়ে মারধর চালিয়েছিল দুষ্কৃতী ‘জেসিবি’। তৃণমূল বিধায়কের মদতপুষ্ট হিসেবেই পরিচিত এই বাহিনী। এই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে, এক বছর আগে, ২০২৩’র জুনে, পঞ্চায়েতে প্রার্থীপদ জমা দিতে যাওয়ার মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। হামলায় খুন হন সিপিআই(এম) কর্মী মনসুর আলম। শহীদহত্যায় এই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছিল সিপিআই(এম)। কিন্তু টানা এক বছর পুলিশ ধরেনি এই দুষ্কৃতীকে।
এই জুনে সালিশীতে অত্যাচারের ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যে, সারা দেশে। তীব্র ধিক্কারের মুখে তাজমুল হক ওরফে জেসিবি-কে হেপাজতে নেয় পুলিশ। সেই সঙ্গে অপরাধকে চিহ্নিত করেছে, এমন স্বর দমনের চেষ্টাও শুরু হয়েছে। ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সালিশি সভার তিনদিন পর এই ভিডিও পোস্ট হওয়ায় নড়তে হয়েছিল পুলিশকে। তার আগে কিছু করেনি। কিন্তু জুলাইয়ের গোড়ায় নির্যাতিত ভিডিও প্রকাশের অভিযোগ দায়ের করেছে জানিয়ে সেলিমের বিরুদ্ধেই এফআইআর করে চোপড়ার পুলিশ। মূল ভিডিও তোলার গত ৮ জুলাই এফআইআর প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেভাবে জেসিবি বাহিনী নির্যাতন করেছে তারপরও তিনদিন পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। যে ভিডিও করেছে বলে এই বাহিনী সন্দেহ করেছে, তাকেও ঘরছাড়া করেছে। তার ভিডিও ডিলিট করা হয়েছে। পাকেচক্রে পেয়ে গিয়ে ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় দিতে পেরেছিলাম। তার জেরে তাজিমুল হক বা জেসিবি-কে গ্রেপ্তার করেছে চোপড়া পুলিশ, যে চোপড়া পুলিশ ‘জেসিবি’-দের পায়ের তলা চাটে।’’
তিনি বলেন, ‘‘সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস কর্মীরা যাতে মনোনয়ন জমা দিতে না পারে, তৃণমূল যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে, তার জন্য পঞ্চায়েত নির্বাচন বানচাল করা হয়েছিল। খুন করা হয়েছিল সিপিআই(এম) কর্মী মনসুর আলমকে। ‘জেসিবি’-ই ছিল মূল অভিযুক্ত। অথচ তাকে ধরেনি পুলিশ।’’ সেলিম বলেন, ‘‘ওরা ভাবছে মহম্মদ সেলিমকে ভয় দেখাবে। ৮৫ হাজার মিথ্যা মামলা আমাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। তাতে কন্ঠরোধ করা যাবে না।’’
লক্ষ্মীপুরের পাশেই সুজালির আরেক দুষ্কৃতী তৃণমূলের আবদুল হকের ভাইকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই আবদুল হক পলাতক। বরাবরের সহযোগী হলেও চোপড়ার বিধায়ক হামিদুর রহমানের সঙ্গে তার বিরোধ সামনে এসেছে। কিন্তু তৃণমূলের মদতে চোপড়ায় দুষ্কৃতীরাজ যে বহাল রয়েছে তা ফের সামনে এসেছে ‘জেসিবি’-র ভাইপোর ছবি বেরনোয়।
CHOPRA JCB PICTURE
বন্দুক হাতে ‘জেসিবি’-র ভাইপোর ছবি, চোপড়ায় বহাল দুষ্কৃতীরাজ
×
Comments :0