ADANI KENYA US

আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল কেনিয়ার, ফের ক্ষোভের কেন্দ্রে মোদী

আন্তর্জাতিক

আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিমানবন্দরের চুক্তি বাতিল করল কেনিয়া। দেশের রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম রুটো বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন যে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ সংবহন লাইনের চুক্তিও বাতিল করা হয়েছে। 
আমেরিকার আদালতে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগে দায়ের হয়েছে মামলা। সৌরবিদ্যুৎ পরিষেবাদাতা ‘আদানি গ্রিন’ সংস্থা বিদ্যুৎ বেচতে ভারতের সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দিয়েছে বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে। আদালতে পেশ করা হয়েছে নথিও। 
ভারতে আদানির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে সিপিআই(এম)। কংগ্রেসও আদানিকে এখনই গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষায় এই গোষ্ঠীর অবৈধ কার্যকলাপ এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে সরব বিভিন্ন অংশ। এর আগে আমেরিকার শেয়ার বাজার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গের দু’টি রিপোর্টে আদানির বিরুদ্ধে গুরুতর বেনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। কোনোটিরই প্রকৃত তদন্ত হয়নি। অথচ আদানির শেয়ার পড়ে যাওয়ার অর্থ খুইয়েছে এলআইসি’র মতো একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান। 
রুটো জানিয়েছেন যে ‘মিত্র দেশের’ পরামর্শ অনুযায়ী আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে। কেনিয়ায় এর আগে আদানিকে বিমানবন্দর দিয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রকল্পে টানা বিক্ষোভও হয়েছে। 
আদানি গোষ্ঠীর প্রধান গৌতম আদানি, ভ্রাতুষ্পুত্র সাগর আদানি সহ সাতজনের বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছে সেদেশের বিচার বিভাগ। তদন্তে উঠে আসা নথিও দাখিল করেছে। বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি পাকা করতে সরকারি আধিকারিকদের প্রায় ২০২৯ কোটি টাকা ঘুষের নথি জমা দেওয়া হয়েছে। 
ভারতে ঘুষ লেনদেনের কারবার আমেরিকার আদালতে বিচারের আওতায় এসেছে সেদেশের লগ্নি সংস্থা জড়িত থাকায়। যে কারণে আমেরিকার শেয়ার বাজারে অবৈধ লেনদেনের নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছে। 
আদানি গোষ্ঠী সৌরবিদ্যুতের মতো পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বন্ড ছাড়ে বাজারে। তাদের সংস্থা ‘আদানি গ্রিন’ ২০২১-এ বন্ড ছাড়লে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক লগ্নি সংস্থা টাকা ঢালে। আমেরিকার প্রশাসন ‘আজুরে’ নামে আরেকটি সংস্থার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করেছে। এই সংস্থা ভারতে ব্যবসা চালায় সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে। কিন্তু ‘আজুরে’-র নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে নাম নথিভুক্ত রয়েছে। 
আমেরিকায় ব্যবসার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক তদ্বিরের বন্দোবস্ত যদিও আছে। তাকে বলে ‘লবিইং’। আইন প্রণেতাদের মধ্যে তাদের প্রভাবও রয়েছে। 
কিন্তু আমেরিকার বৈদেশিক দুর্নীতি রোধ আইনে অন্য দেশের মাটিতে ঘুষ লেনদেনের সংযোগ থাকলে তা নিয়ে মামলা করা যায়। সেদেশে ব্যবসায়িক সংযোগ রয়েছে এমন যে কোনও সংস্থার বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করে তদন্তও চালানো যায়। 
আমেরিকার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্চ বোর্ড অভিযোগে বলেছে, ‘আদানি গ্রিন’ আমেরিকার লগ্নি সংস্থাগুলির থেকেও কর্পোরেট বন্ডে টাকা নিয়েছে। তাদের জানানো হয়েছিল যে সংস্থা তাদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য সরারি কোনও আধিকারিককে ঘুষ দেয়নি। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি অসত্য। 
আমেরিকার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ডের অভিযোগ, গৌতম আদানি এবং সাগর আদানি নিজেরা ঘুষের লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। 
‘আজুরে নামে সংস্থাটিতে আবার মরিশাসের যোগ রয়েছে। কানাডার একটি পেনশন তহবিলই মুখ্য বিনিয়োগ কারী। কিন্তু সংস্থা মুখ্যত ব্যবসা করে ভারতে। 
এই মরিশাসেরই ঠিকানায় খোলা  ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ বলে নিজেদেরই টাকা ভারতে খাটানোর অভিযোগ তুলেছিল হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট। বিপুল অঙ্কের ছাড়ের পাশাপাশি ভারতে শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে ফাঁপিয়ে বাড়ানো হয়েছিল। এমনকি শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক মাধবী পুরী বুচের বিনিয়োগ আদানির এমন গোলমেলে সংস্থায় থাকার অভিযোগ তুলেছিল ওই রিপোর্ট।
আদানি তদন্তে সংসদীয় কমিটির দাবি বারেবারে অগ্রাহ্য করেছে বিজেপি সরকার। প্রধানমন্ত্রী সংস্থাকে বারবার আড়ালের চেষ্টা চালিয়েছেন। এবার আমেরিকায় মামলার পর ফের মোদীর মদতে বেনিয়মের ব্যবসা চালানোর অভিযোগ জোরালো হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment