LEFT PROTEST

প্রতিবাদের ভাষা ভেঙে দিচ্ছে
দুর্নীতি, দাঙ্গার ব্যারিকেড

রাজ্য

LEFT PROTEST

প্রতীম দে 

শিল্পায়ন নয়। কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক নয়। কৃষির বিকাশ নয়। সরকারি শূন্যপদে নিয়োগও নয়।

বাংলার রাজনীতিতে বিষয় হয়েছে দুর্নীতি এবং দাঙ্গা। সরকারে আসীন তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতা থেকে শিক্ষা প্রশাসনের মাথারা এখন জেলে। আদালতের রায়ে তদন্ত চলছে রাস্তায় বসে থাকা বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের লড়াইয়ের পরিণামে। আরেকদিকে সাম্প্রদায়িক হিংসা হচ্ছে এ বাংলায়, দীর্ঘ সাড়ে তিন দশক যার মোকাবিলা করা গিয়েছিল। 

দাঙ্গা আর দুর্নীতির ছক, বিভাজন আর বঞ্চনার ছক যদিও ধাক্কা খাচ্ছে রাস্তায় নেমে পড়া আন্দোলনে। যোগ্যদের নিয়োগ, সরকারি পদ পূরণের সঙ্গে যোগ্যদের বঞ্চিত করা লুটেরাদের শাস্তির দাবিতে মিছিল হচ্ছে। ব্যারিকেড, জলকামান, টিয়ার গ্যাসের যত আয়োজন আন্দোলন ঠেকাতে। যে পুলিশ অস্ত্র মিছিল ঠেকায় না সেই বাহিনীই মারমুখী হচ্ছে আন্দোলন দেখলেই। সত্যিটা হলো তবু ভাঙছে ব্যারিকেড। কখনও জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে, কখনও জেলা পরিষদ দপ্তরে। আন্দোলন করলে মামলা আর জেল হচ্ছে। তবু দমছে না। 

ঠিক এখনই উত্তর ২৪ পরগনার এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই’র একাধিক কর্মী জেলে। স্বচ্ছ নিয়োগ, শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনে নামায়। দাঙ্গা আর দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ে দমন নামছে, তবে দমিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। 

সরকারে আসীন হতে না হতেই দুর্নীতি শুরু তৃণমূলের। ২০১৩ সাল থেকে। সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি দিয়ে। গভীর সম্পর্ক ধরা পড়েছে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের সঙ্গে। বেশি সুদের আশায় রাজ্যের বহু মানুষ সারদায় টাকা জমিয়ে ছিলেন। সেই টাকা তারা আর পাননি। টাকা চোট হয়ে গিয়েছে। কেউ বাড়ি তৈরি করার জন্য বা মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা জমিয়েছিল। কেউ গৃহ সহায়িকার কাজ করেন। সেই টাকা তারা হাতে পায়নি আর। সুদ তো দূরের কথা। 

রবীন মণ্ডল। যাদবপুরের হালতুতে রিকশা চালান। ২০১১ সালে ২০ হাজার টাকা রেখেছিলেন সারদায়। কথা ছিল দু’বছর বাদে টাকা দ্বিগুন হবে। কিন্তু তা হয়নি। রবীন মণ্ডল আজও রিকশা চালান। সারদায় কেন টাকা রাখলেন?মণ্ডল বলছেন, ‘‘ব্যাঙ্কে সুদ বেশি ছিল না সেটা যেমন কারণ। তেমন তখন দেখতাম তৃণমূলের অনেক নেতারা সারদার অনুষ্ঠানে যায়বলে টাকা রাখতে। ওরা সরকারে। তাই ভরসা করে রেখে ছিলাম।’’

সিবিআই তদন্ত শুরু হলেও আজও মামলার কোন নিষ্পত্তি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এই সংস্থা বারবার আটকে থাকছে মাঝপথে।

২০১১ থেকে ২০২৩ এই সময়কালে শুধু এই একটা দুর্নীতি হয়নি। স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিআবাস যোজনায় দুর্নীতি১০০ দিনের টাকা নিয়ে দুর্নীতি। দুর্নীতির জটে গোটা রাজ্য ফেঁসে গিয়েছে। তৃণমূল শাসনে যতগুলি চাকরির পরীক্ষা হয়েছে প্রতিটির নিয়োগ নিয়ে উঠেছে বেনিয়মের অভিযোগ। তদন্তে হাত দিয়েই তৃণমূল নেতাদের বাড়ি থেকে বের হচ্ছে ওএমআর শিট, নিয়োগপত্র। বাঁচতে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

যাঁরা পাশ করেছেন তাঁরা চাকরি পাননি। কিন্তু ফাঁকা খাতা যারা জমা দিয়েছে তাঁরা চাকরি পেয়েছে, টাকার বিনিময়ে। যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা বসে রয়েছেন রাস্তায় অবস্থানে। উৎসবের দিনে বাড়ির লোকেদের ছেড়ে রাস্তায় রয়েছেন তাঁরা। 

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির সিবিআই তদন্ত শুরু হলে প্রথম গ্রেপ্তার হন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তারপর তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য সহ একের পর এক শিক্ষাকর্তা। এছাড়া বর্তমানে জেলে রয়েছে কুন্তলতাপসের মতো তৃণমূল কর্মী। 

আর সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। তার পর পরই ক্যানিংয়ে রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দেওয়া হলো একাধিক নথি। 

এসএসসিটেট, গ্রুপ ডি’র চাকরি প্রার্থীরা বহুবার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে নিজেদের বঞ্চনার কথা বলতে চেয়েছেনকিন্তু পারেননি। কখনও তারা নবান্ন অভিযান করেছেনকালিঘাট বা বিকাশ ভবন অভিযান করেছেন। প্রতিবার তাদের জুটেছে পুলিশের মার। রাস্তায় ফেলে টেঁনে হিঁচড়ে মারতে মারতে হবু শিক্ষকদেরযোগ্য চাকরি প্রার্থীদের প্রিজন ভ্যানে তুলেছে পুলিশ। আবার কখনও যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের কামড়ে দিয়েছে পুলিশ।

আবার এই বঞ্চিতদের পাশে টানা থেকেছে ছাত্রযুবদের আন্দোলন। শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে পথে নেমেছে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই। রাজ্যে সরকারি শূন্যপদ সাড়ে ৬ লক্ষ। কখনও নবান্ন অভিযান বা সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা শাসকের দপ্তর অভিযান বা উত্তরকন্যা অভিযান। প্রতিটা ক্ষেত্রে মার খেতে হয়েছে ছাত্র যুবদের। চাকরির দাবিতে পথে নেমে শহীদ হয়েছেন মইদুল ইসলাম মিদ্দা। কিন্তু এই সব কিছুর মধ্যেও যেই জিনিসটা নজর কেড়েছে সবার তা হলো ব্যারিকেড ভাঙা। 

অলঙ্করণ: মনীষ দেব

Comments :0

Login to leave a comment