নতুনপাতা
মণ্ডা মিঠাই
জুডো
নতুন বন্ধু / স্নেহা দে
ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন এর মতো জুডোও একটা খেলা। জাপানী জুডো শব্দটি বাংলা অনুবাদ হল ‘ভদ্র পন্থা’। Ju অর্থ ভদ্র, Do অর্থ পন্থা। এটা একটি আধ্যাত্মিক খেলা যা শরীরকে দুর্বল হতে দেয় না, মানসিক চাপ বাড়তে দেয় না। এটা দু’জন পার্টনারের মধ্যে খেলা হয়। প্রথমে ‘হাজমি’ (মানে শুরু) বললে খেলাটি শুরু করতে হয়। ৪মিনিটের মধ্যে সিওনাগি, ওগোসি,ঔচিকারী, হারাইগোসি, উচিমাতা, তালিও তোসি প্রভৃতি টেকনিকের প্রয়োগ প্রতিদ্বন্দ্বীর শরীরটাকে ম্যাটে থ্রো করা হয়, তারপর লকিং, চোকিং, হোল্ডিং করতে হয়। পরপর দুটি থ্রো যে সর্বপ্রথম করতে পারবে সেই পার্টনার বিজয়ী হবে।
খেলাটি ড. জিগোরো কালে আবিষ্কার করেন। প্রাচীনকালে রাজারাজরাদের মধ্যে এই রকম যুদ্ধ কৌশল প্রচলিত ছিল। সেই যুদ্ধ কৌশলগুলির প্রয়োগ শুধু হাতেই করতে হত। লকিং, চোকিং, হোল্ডিং এই খেলার অন্তর্গত ছিল। এটি প্রাচীনকালে জুজুৎসু নামে পরিচিত ছিল। ড. জিগোরো কালে দেখলেন এই জুজুৎসু খেলাটিতে বিপদের আশঙ্কা আছে। তাই তিনি আত্মরক্ষার কৌশলগুলি আবিষ্কার করলেন। ধীরে ধীরে এই খেলা জুডো নামে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম এই খেলাটি জাপানের টোকিও শহরে নয় জন ছাত্র ও ১২টি ম্যাচ নিয়ে শুরু হয়। জুডোর ঈশ্বর ড. জিগোরো কালে (২৮অক্টোবর ১৮৬০ – ১৯৩৮) । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ জাপান সফরের সময় এই খেলাটি দেখে শান্তিনিকেতনে ১৯০৫ খ্রি. এর প্রচলন ঘটান।
জুডো খেলাটি হল অপরের শক্তিকে নিজের আয়ত্বে এনে তাকে ধরাসাই করা। ১৯৬৪খ্রি. এটি অলিম্পিকের অন্তর্ভূক্ত হয়। এটি খেলতে হলে একটি বিশেষ পোশাকের প্রয়োজন হয়, জাপানিভাষায় একে বলে ‘গ্রী’, একটি বেল্ট থাকে, জাপানি ভাষায় ‘অবি’। এই বেল্টের সাতটি ভাগ ̶ (১) সাদা (২)হলুদ (৩)কমলা (৪) সবুজ (৫) নীল (৬) ব্রউন (৭)কালো।
স্কুলের পরীক্ষার মত আমাদেরও জুডোর পরীক্ষা দিতে হয়। পাশ করলে সেই জুডোর বেল্ট অর্থাৎ ‘অবি’ পরিবর্তন হয়। আমাদের হাওড়ায় এই অসাধারণ খেলাটি প্রচলন করেন দীপকুমার সাহা স্যার, ওনার ‘সাধন বিদ্যা জুডো’ নামে একটি আকাদেমি আছে । আমি গত চার বছর ওই আকাদেমির একজন শিক্ষার্থী। আমাদের শিক্ষক-গুরু দীপকুমার স্যারের প্রশিক্ষণে রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পেরেছি। ২০১৮ সালের রাজ্য প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান আধিকার করেছি। ২০১৯ সালে দু’বার অংশ নিয়ে যথাক্রমে তৃতীয় ও দ্বিতীয় স্থান পাই।
বর্তমানে বহু ছাত্রছাত্রী এই খেলার সাথে যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে মেয়েরা শিখলে এটা খেলার সাথেসাথে আত্মরক্ষার কৌশলগুলিও আয়ত্ত্ব করতে পারবে।
আমি নিজে একজন ‘জুডোকা’ হতে পেরে গর্বিত। আমি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতাগুলি ও অলিম্পিকে খেলতে চাই। আশা করি দীপ স্যারের পরিচালনায় আমাদের জুডো অনুশীলন কেন্দ্রটি আরও উন্নত হবে। আরও বহু ছেলে-মেয়ে এই খেলাটির সাথে যুক্ত হবে, বিশেষ করে মেয়েরা আত্মরক্ষার কৌশলগুরি আয়ত্ত্ব করতে পারবে।
একাদশ শ্রেণি / আমাদের পাঠশালা
Comments :0