MONDA MITHAI – NATUNPATA / 23 DECEMBER

মণ্ডা মিঠাই / মধুকবি কথা – কৃশাশ্ব ভট্টাচার্য / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHAI  NATUNPATA  23 DECEMBER

নতুনপাতা

মণ্ডা মিঠাই

নতুন বন্ধু

মধুকবি কথা
কৃশাশ্ব ভট্টাচার্য


মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সেই সময় তার লেখাগুলো বিখ্যাত সাহিত্য-কর্ম গুলি অনেক জনপ্রিয় ছিল, এখনো আছে। আমরা তাকে চিনি একজন অসংযমী এবং বেহিসেবী জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষ হিসেবে। তার সম্পর্কে গবেষণা করলে দেখা যায় যে, তিনি অন্যদের কাছে নিজ আর্থিক দুরবস্থার জন্য প্রচুর ধার দেনা ইত্যাদি করেছেন । তিনি তার প্রতিভার সার্বিক যত্ন করতে অক্ষম ছিলেন বা করেননি । তবে যদি কখনো এইসবের থেকে বেরিয়ে মানুষটিকে আরো ভালোভাবে জানার চেষ্টা করা যায় তবে চোখে পড়বে এক অন্য মানুষ ।তিনি একজন আত্মমর্যাদা শীল এবং নিজের প্রতিভার ওপর বিশ্বাস ভাজন ব্যক্তি।
  এর সাপেক্ষে দুটি প্রমাণ দেওয়া হল।

তিনি যখন হিন্দু কলেজের ছাত্র ছিলেন তখন তিনি ডি এন রিচার্সনের কাছে শিখেছিলেন সাহিত্য রচনা এবং বিশ্লেষণ। তিনি তখন মহাকবি হবার স্বপ্ন দেখতেন। তখন তিনি বিভিন্ন পত্রিকায়                      কবিতা পাঠিয়েছিলেন যার কিছু কিছু প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় তিনি তার বন্ধু গৌর দাস বসাককে চিঠি লিখেছিলেন-"আমি তো মহাকবি হব এবং ব্রিটেনে যেতে পারলেই তা সম্ভব হবে. এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। আর তুমি তখন আমার জীবনী লিখে বিখ্যাত হবে।"
   এই কথা লেখার জন্য আত্মপ্রত্যয় থাকা দরকার। সেটা তার কাছে ছিল বলেই তার পক্ষে এ কথা লেখা সম্ভব হয়েছিল।
    
দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত হল,   মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ এর ৮ই জুন দেড় মাস ছিলেন উত্তরপাড়া জমিদার রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের গ্রন্থাগারে। তখন তিনি তীব্র অসুস্থ হন।  গৌরদাস বসাক সহ উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তারপরে তাকে আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। ভর্তি হওয়ার পরে তিনি তার চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তার আয়ু আর কতদিন। উত্তর তিনি জানতে পারেন তিনি আর তুই বা তিন দিন বাঁচবেন। ছাব্বিশে জুন তার স্ত্রী হেনরিয়েটা মারা গেলেন। বেনিয়াপুকুর বাড়ি থেকে লোয়ার সার্কুলার রোডে সমাধি ক্ষেত্রে হেনরিয়েটাকে নিয়ে যাওয়া হয়। মদনমোহন ঘোষ এই কথাটি তাকে জানান। তিনি তার বন্ধুদের একটি শেষ অনুরোধ জানান যে তারা যেন তার সন্তানদের যত্ন নেয় । এদিকে হাসপাতালে তিনি সবার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি নিজেই স্বীকার করেন কদিন আগে হাসপাতালে এলে মরতে হতো না। ১৮৭৩ র ৯ই জুন তিনি নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 
শিক্ষার প্রতি অনুরাগ থেকে তিনি ঘুরেছেন দেশে-বিদেশে। বিশৃংখল জীবনযাত্রার কারণেই হয়তো কখনো কখনো জড়িয়ে পড়েছেন ঋণের জালে। নানা সময় জীবনে কষ্ট সহ্য করেছেন। তবু তার মধ্যেও নিজের সৃষ্টির কাছ থেকে নিজেকে কখনো সরিয়ে নেন নি‌ । পেয়েছিলেন বিদ্যাসাগরের সহায় তা। দেশে ফিরে আসার পর পেশাগত এবং সৃজনের জগতে বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। বাংলা সাহিত্য জগত তার কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবে, অমৃতাষ্মর ছন্দ  আর চতুর্দশ পদী কবিতার জন্য।

১৮৭২এর জানুয়ারি মাসে পুরুলিয়া তে গিয়েছিলেন মামলা করার জন্য । ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে পঞ্চকোটের মহারাজার দেওয়ান ম্যানেজারের কাজে যোগ দিয়েছিলেন।তিনি অবশ্য কদিন বাদেই তিনি কাজটি ছেড়ে দেন ।সেপ্টেম্বরে তিনি কলকাতায় আসেন এবং শারীরিক ও মানসিক উশৃঙ্খলতার মধ্যেও লিখেছিলেন পঞ্চকোঠ গিরি পঞ্চকোঠস্য রাজশ্রী ইত্যাদি । অসুস্থতার জন্য কোর্টে যেতে পারেনি। কিন্তু তখনও তিনি লিখেছিলেন বেশ কিছু নাটক। বেঙ্গল থিয়েটার তৈরি করবেন আশুতোষ দেব বা ছাতুবাবুর নাতি শরৎচন্দ্র ঘোষ । তাদের জন্য নতুন নাটক দরকার বলে সেই অবস্থায় লিখেছিলেন- মায়াকানন,  বিষনা ধনুর্গুনী, দ্বিতীয়টি শেষ হয়নি। দ্বিতীয়টি মঞ্চস্থ হয়েছে ১৮৭৪ এর মার্চে  তার মৃত্যুর কয়েক মাস বাদে। তিনি ছিলেন আমৃত্যু সৃষ্টিশীল আর জীবন পথে সক্রিয় এক জীবনী শিল্পী।

দশম শ্রেণী
সোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়
সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
কল্যাণনগর, খড়দহ,
উত্তর চব্বিশ পরগনা
৮৫৮২৮৪১৪৪৭

Comments :0

Login to leave a comment