MONDA MITHI — NO WAR / PALLAB MUKHOPADHYA

মণ্ডা মিঠাই / যুদ্ধ শেষ কথা বলে না — পল্লব মুখোপাধ্যায়

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHI  NO WAR   PALLAB MUKHOPADHYA

নতুনপাতা

যুদ্ধ শেষ কথা বলে না
পল্লব মুখোপাধ্যায়

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, নাৎসি জার্মানি যখন পোল্যান্ড
আক্রমণ করে এবং শেষ হয়েছিল ১৯৪৫ সালের ৯ মে। পৃথিবীর ইতিহাসে এত ভয়ঙ্কর, ব্যাপক ও
বীভৎস যুদ্ধ আর কখনও হয়নি। ৬১টি দেশ এবং ১৭০ কোটি মানুষ জড়িয়ে পড়েছিলেন এই যুদ্ধে। 

বিভিন্ন দেশের ১১ কোটি সৈন্য যুদ্ধের ময়দানে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। এছাড়াও যুদ্ধরত
দেশগুলিতে সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল আরও ১ কোটি ২০ লক্ষ সেনাকে। ধ্বংসের এই বীভৎস রূপ
পৃথিবী আর কখনও দেখেনি। ৫ কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর্থিক অঙ্কে বৈষয়িক
ক্ষয়ক্ষতির আনুমানিক হিসেব ৪ লক্ষ কোটি ডলার|  এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর ইতিহাসের সঙ্গে
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ক্ষয়-ক্ষতি, রোগ, অনাহার, রাসায়নিক ও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়া ও
বিষক্রিয়ায় কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু, বিকলাঙ্গ প্রজন্মের জন্ম, অকাল মৃত্যু, শয়ে শয়ে শহর,
গ্রাম, জনপদ-এর মুহূর্তে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া, মানব প্রতিভার বহু মহান সৃষ্টি চিরকালের
মতো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। এককথায় মানবসভ্যতার জীবনে সুদূরপ্রসারী, নিদারুণ এক
ক্ষতচিহ্ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাই আজও এক চিরন্তন, বিষ্ময়-বিমর্ষ প্রশ্ন
সোচ্চারিত হয়, মারণ-যজ্ঞের এমন উন্মত্ত খেলায় কেন মেতে উঠেছিল তাবৎ পৃথিবী ?


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর অবসান ফ্যাসিবাদ-এর বিরুদ্ধে বিজয়েরও উদযাপন। মানব সভ্যতার
ইতিহাসে ফ্যাসিবাদের পরাজয় অন্যতম বৃহত্তম, যুগান্তকারী ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর শেষ লগ্নে
সোভিয়েত ইউনিয়ন-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এই যুদ্ধে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, সংগ্রাম এবং
আত্মত্যাগের এক অতুলনীয় ইতিহাস হিসেবে বিবেচিত হয় | হিটলার-এর নৃশংস অভিযান
প্রতিহত করতে প্রায় ২ কোটি মানুষ জীবন দিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন-এ। অবর্ণনীয়
দুঃখবরণ, কষ্টস্বীকার, আত্মত্যাগ এবং অকল্পনীয় সাহস নিয়ে বীরত্মপূর্ণ সংগ্রামে সোভিয়েত
ইউনিয়ন ফ্যাসিবাদের নখ-দাঁত ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছিল। অন্তত ১২টি দেশকে মুক্ত করার
গৌরব অর্জন করেছিল। ফ্যাসিবাদের পরাজয় মানব সভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
কারণ, হাজার হাজার বছরের নিরন্তর সংগ্রামের মাধ্যমে মানব সমাজে যে অগ্রগতি ঘটেছিল তার
মূলে কুঠারাঘাত করে ফ্যাসিবাদ চেয়েছিল সেই মানব সমাজ ও সভ্যতাকে ধ্বংস করতে। সেই
ধ্বংসের হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল পৃথিবী, পরাস্ত হয়েছিল অমানবিক ফ্যাসিবাদী শক্তি।
ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত বাতিল মতবাদ ফ্যাসিবাদকে নতুন আঙ্গিকে, নয়া মোড়কে নানা
দেশে ফের হাজির করার চেষ্টা করছে নয়া ফ্যাসিবাদী শক্তি। সাম্রাজ্যবাদী, ঔপনিবেশিক শক্তির
রণহুঙ্কার আজও অব্যাহত। যুদ্ধবাজ শক্তির আগ্রাসী মনোভাবে বিপন্ন গোটা বিশ্বের আপামর
শান্তিকামী মানুষ।

 

এ যেমন সত্যি, তেমনি এও বাস্তব যে তামাম পৃথিবীব্যাপী সাম্রাজ্যবাদীআগ্রাসন, যুদ্ধ, আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগঠিত হচ্ছে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। প্রতি বছর ১ সেপ্টেম্বর
পালিত হয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবস হিসেবে | বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ আজ
প্রত্যক্ষ করছেন কবির কথায় 'প্রতিজ্ঞা প্রস্তুত ঘরে ঘরে দানবের সাথে আজ সংগ্রামের তরে'।
মানুষ শুনছেন উঠেছে আওয়াজ 'আর না, আর না, আর না, বিশ্বের দুয়ারে আজ যুদ্ধের দামামা'।
গীতিকার, সুরকারের গান ভাসছে বাতাসে 'যখন প্রশ্ন ওঠে যুদ্ধ কি শান্তি, আমাদের বেছে নিতে
হয় নাকো ভ্রান্তি, আমরা জবাব দিই শান্তি শান্তি শান্তি, আর রক্ত নয় নয় আর ধ্বংস নয় নয় আর
নয় মায়েদের শিশুদের কান্না, রক্ত কি ধ্বংস কি যুদ্ধ আর না' | তাই ১ সেপ্টেম্বর মানেই পৃথিবীর
দেশে দেশে যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিছিল। পৃথিবী যেন ভাবি প্রজন্মের কাছে আরও একটু
বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। মিছিল থেকে দৃপ্ত কন্ঠে ওঠে গান 'চলছে আজ চলবে কাল শান্তির এই
মিছিল। যত না দিন যুদ্ধবাজ ফেলবে অস্ত্র তার, নারীঘাতীর শিশুঘাতীর চলবে অত্যাচার, যত
না দিন সব স্বাধীন মুক্তির অধিকার, হবে দেশে দেশে গানে রঙে রসে ভরবে এই নিখিল। চলছে
আজ চলবে কাল শান্তির এই মিছিল'।

Comments :0

Login to leave a comment