মুক্তধারা
অন্যকথা
ফেলে আসা শৈশব — বুড়ির ঘর পোড়ানো
পল্লব মুখোপাধ্যায়
বসন্ত উৎসব, দোল বা হোলির প্রাক্কালে রঙ-আবিরের পাশাপাশি কচি-কাঁচাদের কাছে
জনপ্রিয় ‘বুড়ির ঘর পোড়ানো’। পূর্ববঙ্গে এই নামেই এই প্রথা প্রচলিত। এর অন্য
নাম ‘ন্যাড়া পোড়ানো’। যা নিয়ে প্রচলিত কথাও আছে। "আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল
আমাদের দোল"। এর জন্য আগে থেকে শুকনো ডাল, কাঠ এবং পাতা জোগাড় করা হয়।
তারপরে ফাগুন পূর্ণিমার সন্ধ্যায় পোড়ানো হয় সমস্ত স্তূপাকার করে। এই দহন অশুভ
শক্তি বিনাশের প্রতীক। দোলের আগের দিন থেকেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে
বিশেষ ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। তারা একজোট হয়ে চাচুর নির্মাণের জন্য তৈরি হয়।
শুকনো ডাল, পাতা সংগ্রহ করে সেগুলিকে একটি বাঁশের সঙ্গে বাঁধা হয় এবং সেটিকে
কোনও ফাঁকা জায়গায় পুঁতে দেওয়া হয়। সন্ধ্যের পর যখন আকাশে পূর্ণিমার গোল চাঁদ
ওঠে তখন ছেলে মেয়েরা সেই চাচুরের পাশে গোল হয়ে দাঁড়ায়। কেউ একজন সেখানে আগুন
দেয় এবং সবাই সেই অগ্নিকুণ্ডকে ঘিরে নাচতে থাকে। সাথে সাথে তাদের মুখে থাকে
"আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল"। আগুনের মধ্যে দেওয়া আলু, রাঙা
আলু, মূলো, বেগুন পুড়ে যাওয়ার পার নুন মাখিয়ে খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। ছোট ছোট
ছেলেমেয়েদের মধ্যে সে কী উন্মাদনা। ফেলে আসা স্মৃতিতে ডুব দেন বড়রা। শৈশবের সেই
সব অনাবিল আনন্দের দিনগুলি পিছু ডাকে। ওপারবাংলা থেকে দেশবিভাজনের ক্ষত বুকে
বয়ে এনে যাঁরা এপার বাংলায় চলে এসেছেন অনেক কিছুর মতোই তাঁদেরও মনের জানালা
ধরে উঁকি দিয়ে যায় ফেলে আসা শৈশবের স্মৃতি — বুড়ির ঘর পোড়ানো।
Comments :0