মুক্তধারা
বই
ছড়ায় মজায় ভবানীপ্রসাদ
প্রদোষকুমার বাগচী
ছোটদের মনের মতো মজার বই
আজ তোমাদের জন্য এমন একট বইয়ের কথা বলবো যার পাতায় পাতায় শুধু মজা, মজা আর মজা। যিনি লিখেছেন তিনি তোমাদের প্রায় সকলেরই পরিচিত, তোমাদের মতো সকলকে আনন্দে আর ভালবাসায় নাচিয়ে দিয়ে, মাতিয়ে দিয়ে, ভুলিয়ে দিয়ে, দুলিয়ে দিয়ে অনর্গল মজাদার ছড়ায় ছড়ায় জড়িয়ে নিয়ে সম্প্রতি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যে মানুষটি তিনি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। আর তিনি লিখবেন না কোনও দিন, কিন্তু তিনি যা লিখে রেখে গেছেন তার মধ্য দিয়েই বহুদিন তিনি বেঁচে থাকবেন কচিকাঁচাদের মণিকোঠায়।
এবার অনেকেই হয়তো চিনতে পারছো যে তিনি সেই লোক যে মানুষটি বাংলা ভাষা নিয়ে একটি ছড়ায় আকাশস্পর্শী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তার একটি লাইন তুলে দিচ্ছি, ‘জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।’
কিন্তু আমি তাঁর যে বইটির কথা বলবো সেটিও তিনি তোমাদের কথা ভেবেই লিখেছেন। বইটির নাম ‘হাসতে হাসতে ভাসতে ভাসতে’। এই বইটির মধ্য দিয়ে তিনি তোমাদের এমন সব মজাদার ছড়া পড়াতে চান যা তোমাদের হাসতে হাসতে ভাসতে ভাসতে কোথায় যে নিয়ে যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। তোমরা যারা ইতিহাস বই পড়ো, তারা কি জানো ‘হিস্ট্রির হিস্টিরিয়া’ ঠিক কি জিনিস। সেকথাটাই বলে গেছেন ভবানীপ্রসাদ। তোমাদের খানিকটা তার পরিচয় দিই—
দেখলাম ভালো করে ইতিহাস খুঁজিয়া
শিবাজী খেতেন রোজ দেড়-কেজি গুজিয়া!
বাবরের বরদা
নাকে গুঁজে জরদা
দিন-রাত ঘুমোতেন এক চোখ বুজিয়া!
ছড়াটি শেষ হয়নি আরও বাকি আছে। তবে একথা ঠিক যে শিবাজী রোজ দেড়-কেজি গুজিয়া খেতেন না। শুধু মজার জন্য ইতিহাসের স্থান কাল পাত্র খুঁজে এমন ছড়া তৈরি তিনি করেছেন যা সকলের ভালো লাগবে।
আর একটা ছড়ার কথা বলি যার নাম ‘সাবধানে মার নেই’। ওখানে বলা হচ্ছে যে লেখক ভূত-টুত মানেন না। ভূত যত রকমের হোক তাকে টাইট দেওয়ার ব্যবস্থা তিনি জানেন। তবে কথা বলতে বলতে রাত হয়ে গেলে তিনিই যে ভয়ে কুঁকড়ে যান তা বোঝা যায় তাঁর সেই ছড়াটা পড়ে। সত্যি সত্যি তো না, মজা করে লেখা।
প্রথম দিকে তিনি বলছেন—
ভূত-টুত মানি নারে এই দেখ ডাণ্ডা
তিনবার ঘোড়ালেই সব ব্যাটা ঠান্ডা!
মেছোভূত, গেছোভূত, গোভূতের বাচ্চা
ট্যাঁকে পুরে রেখে দিই, বাত্ মোর সাচ্চা!
তারপর অনেক বকে টকে রাত হয়ে গেলে তিনি তো খুবই ভয় পেয়ে গেলেন। তখন পটলাকে তিনি বলছেন—
শুনলাম, ওদিকের শ্মশানের পাশেতে
কারা যেন হামাগুড়ি দেয় রোজ ঘাসেতে!
ভাবিসনি তাই বলে ভয় আমি পেয়েছি
ও-রকম কত ভূত চায়ে গুলে খেয়েছি!
শেষে তিনি বলছেন—
ঘুরে যাই রাস্তাটা, কী বলিস পটকা?
তেমাথায় তালগাছ, লাগে মনে খটকা
শুধু শুধু লাভটা কী বাধিয়ে বিপত্তি
‘সাবধানে মার নেই’ কথাটা তো সত্যি!
বইটির মনোগ্রাহী প্রচ্ছদ করেছেন মনীষ দেব। নামাঙ্কণ : দিগন্ত দেব।
অলঙ্করণ : সন্দীপ দেয়াসী, শ্রীমতী টুটু সরকার।
এবার বইটির বিবরণ দিয়ে দিচ্ছি—
হাসতে হাসতে ভাসতে ভাসতে
ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। মৌহারি। ৫১, সেন্ট্রাল রোড, যাদবপুর, কলকাতা—৭০০ ০৩২।২০০ টাকা।
Comments :0