মুক্তধারা | প্রবন্ধ
ভারতীয়ত্বের খোঁজে
বাসব বসাক
(গত সংখ্যার পর)
৩
হার্ভার্ডের বিজ্ঞানী ডেভিড রেইখের নেতৃত্বে বিশ্বের নানা প্রান্তের ৯২ জন
বিজ্ঞানী ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে সুপ্রাচীন মানব অস্থি থেকে
সংগৃহীত ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, প্রায় ৬৫ হাজার বছর আগে
আফ্রিকা থেকে এই ভারত ভূখণ্ডে আধুনিক মানব প্রজাতির পরিযান ঘটেছিল। সেই
অর্থে ৬৫ হাজার বছর আগে আসা এই মানব গোষ্ঠীই প্রথম ভারতীয়। জিন
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বর্তমান ভারতীয়রা তাদের ডিএনএ-তে বহন করছে
আফ্রিকা থেকে ভারতে আসা সেই প্রথম মানব গোষ্ঠীর ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশ জিন।
বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, এর পরে আরও অন্তত তিন বার ভারত ভূখণ্ডে মানব
প্রজাতির পরিযান ঘটেছিল। দ্বিতীয় পরিযান ঘটেছিল আজ থেকে ৯০০০ থেকে ৫০০০
বছর আগে যখন ইরানের জাগরোস থেকে কৃষিকাজে দক্ষ মানব গোষ্ঠী ভারতে
এসেছিল। এ কথা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, পূর্ববর্তী গোষ্ঠীর সঙ্গে
প্রজননগত সম্পর্ক স্থাপনের মধ্যে দিয়ে এরাই সম্ভবত সিন্ধু সভ্যতার পত্তন
ঘটিয়েছিল। তৃতীয় দলটি এসেছিল চীন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে আনুমানিক
২০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। এরাই আজকের খাসি বা মুন্ডারির মতো
অস্ট্রোএশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠীর পূর্বসূরি। আর চতুর্থ ও শেষতম দলটি এসেছিল
দক্ষিণ-পূর্ব ইয়োরোপের তৃণভূমি থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে আনুমানিক ২০০০ থেকে
১০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। এরাই যে ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর আদি সংস্কৃত
ভাষা সঙ্গে নিয়ে আসা আর্য সে কথা বলাই বাহুল্য। এই আর্যরা ক্ষয়িষ্ণু হরপ্পা
সভ্যতার মানুষের সঙ্গে মিলিত হয়েই সম্ভবত তৈরি করেছিল উত্তর ভারতের পূর্বজ
জনগোষ্ঠী। আর হরপ্পা সভ্যতার আর এক দল আরও দক্ষিণে গিয়ে সেখানকার
আদি বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে জন্ম দিয়েছিল দক্ষিণ ভারতের
দ্রাবিড়ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর।
পাশাপাশি এশিয়া এবং আমেরিকার একাধিক বিজ্ঞানী এবং পশ্চিমবঙ্গের
কল্যাণীস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জেনেটিক্স, কলকাতার
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট, চেন্নাইয়ের সাইজিনোম রিসার্চ
ফাউন্ডেশন, বাঙ্গালুরুর মেডজেনোম ল্যাবের মতো আটটি ভারতীয় গবেষণা সংস্থা
সহ বিশ্বের একাধিক গবেষণা কেন্দ্র সম্মিলিতভাবে ২০১৬ সালে এশীয় গণগোষ্ঠীর
জিনগত গবেষণার ক্ষেত্রে এ যাবতকালের সব থেকে বড়ো একটি প্রকল্প গ্রহণ
করেছে যার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো ১ লক্ষ এশীয় ব্যক্তির জিনক্রম নির্ণয় করা। দ্য
জিনোম এশিয়া ১০০-কে নামক এই প্রকল্পের প্রথম পর্বের গবেষণা শেষ হয়েছে
এবং ২০২০ সালে ৬৪টি বিভিন্ন এশীয় দেশের ২১৯টি জনগোষ্ঠীর ১৭৩৯ জন
ব্যক্তির নির্ণীত জিনক্রম প্রকাশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে সব থেকে বেশি
সংখ্যক, ৫৯৮ জনই ভারতের।
[চলবে]
Comments :0