মুক্তধারা
প্রবন্ধ
ভারতীয়ত্বের খোঁজে
বাসব বসাক
৫
২০২১ সালে ডেভিড জি মহল এক গবেষণাপত্রে ভারতীয় ব্রাহ্মণদের জিনসজ্জার
সঙ্গে মধ্য এশিয়া ও ইয়োরোপের ৩০টি জনগোষ্ঠীর এবং ভারতের ৫০টি অ-ব্রাহ্মণ
জনগোষ্ঠীর জিনসজ্জার তুলনা করে প্রমাণ করেন যে, যে ক’জন ব্রাহ্মণের জিন
নিয়ে তিনি পরীক্ষা চালিয়েছিলেন তাদের ৮৩ শতাংশের জিনই আসলে চারটি মুখ্য
পূর্বজ গোষ্ঠীর থেকে এসেছে — দু’টি মধ্য এশিয়া থেকে আসা পূর্বজ গোষ্ঠী, একটি
আজকের সিরিয়া লেবানন টার্কির উর্ব্বর চন্দ্রকলা সদৃশ এলাকা থেকে আসা
জনগোষ্ঠী এবং আর একটি তারও বহু আগে ভারতে পৌঁছে যাওয়া পূর্বজ গোষ্ঠী।
মোদ্দা কথা হলো জিন গবেষণা দ্ব্যর্থহীনভাবেই আজ প্রমাণ করেছে যে, বিশুদ্ধ
ভারতীয়ত্ব বা বিশুদ্ধ আর্য রক্তের ভ্রান্ত অহমিকা আসলে হাস্যকরভাবেই
অর্থহীন। প্রমাণ করেছে আজ থেকে ৫৫ হাজার অথবা ৬৫ হাজার বছর আগে সুদূর
আফ্রিকা থেকে মানব প্রজাতির আগমন ঘটেছিল এই ভূখণ্ডে, অর্থাৎ এই
উপমহাদেশের প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে বহিরাগতদের উত্তরসূরি।
বারবার পরিযায়ী মানব এই ভূখণ্ডে এসেছে এবং পূর্বতন জনগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে
মিলেমিশে গড়ে তুলেছে এক বিপুল জিন ভাণ্ডার। জিনতাত্বিক গবেষণা আজ প্রমাণ
করে দিয়েছে ব্রাহ্মণ, অ-ব্রাহ্মণ, উঁচু জাত-নিচু জাত, হিন্দু-মুসলমান ইত্যাকার
বিভাজনের ধারণা আসলে বড়োই ঠুনকো এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন। জিন গবেষণায়
আজ দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত যে, উপেন্দ্র কিশোরের জনপ্রিয় গল্পের লাইন
কিছুটা পালটে বললে ‘রাজার দেহে যে জিন আছে, টুনির দেহেও সে জিন আছে’।
দ্য জিনোম এশিয়া ১০০-কে প্রকল্পটি সবে তার এক পঞ্চমাংশ কাজ শেষ করেছে।
এই প্রকল্প শেষ হলে, সন্দেহ নেই আমাদের হাতে এশিয়া তথা ভারতের
জনগোষ্ঠীগুলির জিন বৈচিত্র্য বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য আসবে। তবে এখনো
পর্যন্ত জিনতাত্বিক যে সব নিশ্চিত প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে তার ভিত্তিতে
সংশয়াতীতভাবে বলা যায় এই বিপুল জিনবৈচিত্র্যের মধ্যেই আছে ভারতীয়ত্বের
সংজ্ঞা। এই জিনগত বৈচিত্র্যই জন্ম দেয় নানা প্রকরণের, যা পরিবর্তনশীল
দুনিয়ায় আমাদের টিকে থাকতে সাহায্য করে। তাই এই বৈচিত্র্যকে রক্ষা করার
মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভারতীয়ত্ব, তথা ভারতকে রক্ষা করার আসল বিজ্ঞান।
সমাপ্ত
Comments :0