MUKTADHARA | Probandha — National Science Day | RISHIRAJ DAS — 28 February 2024

মুক্তধারা | প্রবন্ধ — জাতীয় বিজ্ঞান দিবসের তাৎপর্য | ঋষিরাজ দাস — ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA  Probandha  National Science Day  RISHIRAJ DAS  28 February 2024

মুক্তধারা | প্রবন্ধ

জাতীয় বিজ্ঞান দিবসের তাৎপর্য
ঋষিরাজ দাস 

 

"মানুষ অজানাকে জানতে চায় এবং তার ফলেই বিজ্ঞানের সৃষ্টি"। -                       -----ইমারসন

আধুনিক জীবনে যুক্তিবোধ ও কার্যকারণ পরম্পরা জ্ঞান থেকেই শুরু হল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে দিল  মধ্যযুগীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তি ,জগৎ ও জীবনের প্রতি এক আলাদা  মমত্ব। "ল্যাটিন" ভাষায় বিজ্ঞান মানে "কিছু জানা "। বিজ্ঞান শব্দটি ল্যাটিন শব্দ "সায়েন্টিয়া" থেকে এসেছে। "বিজ্ঞান "শব্দটির অর্থ--- বিশেষ জ্ঞান। সভ্যতার সূচনা থেকেই এই বিশেষ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই গুহাবাসীর মানুষ হয়ে উঠেছে বর্তমানে  মহাকাশচারী। দৈনন্দিন জীবনে সভ্য সমাজের যে কোনো ক্ষেত্রে চোখ মেললেই দেখা যায়, সভ্যতার  রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিজ্ঞানের অবদান। কৃষি, শিল্প ,শিক্ষা, যানবাহন, আমোদ-প্রমোদ খেলাধুলা, সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের দান। তাই বিজ্ঞান আজ দূরকে করেছে নিকট ,পৃথিবীকে এনে নিয়েছে ঘরের কোণে। আগেকার দিনের নিত্য-নৈমিত্তিক গৃহকাজে  যেখানে বাড়ির মেয়েরা ঝাঁট দিত, মশলা বাটত, পুকুরে কাপড় কাচত, উনুনে ফুঁ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করতো, সেই কষ্টের নিবারণ ঘটিয়ে বিজ্ঞান আজ এনেছে ভ্যাকুম মেশিন, ওয়াশিং মেশিন, গ্যাস ওভেন, মিক্সার গ্রাইন্ডার, রেফ্রিজারেটর প্রভৃতি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুষম খাদ্য সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট ধারণা গড়ে উঠেছে পুষ্টি বিজ্ঞানের প্রভাবে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদেই আমরা পেয়েছি প্রেসার কুকারের পুষ্টিকর খাদ্য, ওয়াটার ফিল্টারের বিশুদ্ধ জল এবং মাইক্রোওভেনের আধুনিক গরম খাবার। পুঁথি পড়বার যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে ।তার বদলে  শিক্ষার্থী পেয়েছে বিজ্ঞানের ছাপাখানার বাধানো বই। এমনকি দুষ্প্রাপ্য বইয়ের পৃষ্ঠা বর্তমানে জেরক্সের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারছে। গ্রহণ করছে কম্পিউটার, ক্যালকুলেটর, ইন্টারনেট--- যার দ্বারা দেশ-বিদেশের কোথায় কি ঘটছে খুব সহজেই জানতে পারছে। বৈদ্যুতিক শক্তির সাহায্যে লিফটের সুইচ টিপে আজ মানুষ অনায়াসেই উঠে যাচ্ছে পাঁচ তলা ,দশ তলার অট্টালিকায়। সর্বোপরি মোবাইল ফোন যার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই সুবিশাল পৃথিবীটাকে নিয়ে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। তাই আজ আর চিঠি না লিখে মোবাইলের কি-প্যাড টিপে   নিজের আত্মীয়-স্বজনের খবর নেয় মানুষ। ইলেকট্রিকের মাধ্যমে "ই.ভি.এম "মেশিনের দ্বারা জনসাধারণ তাদের নেতা নির্বাচন করছেন অতি সহজে। এখন আর গাছতলা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাসস্থান না বানিয়ে , বরং বিজ্ঞানের প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ  নির্মাণ করেছে বহুতল অট্টালিকা। আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের একটি শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হল টেলিভিশন। যার কল্যাণে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বড় বড় ঘটনার সঙ্গে আমাদের চক্ষুগোচর হয়। পৃথিবীতে আজ মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি হয়েছে যার দৌলতে সে হচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। পূর্বে যে সব রোগ একেবারেই দুরারোগ্য ছিল, আজ আর তা নয়।
কলেরা ,মহামারী, টাইফয়েড বসন্ত, কর্কট, যক্ষা, ম্যালেরিয়া কালা জ্বর, ব্লাড ফ্লু প্রভৃতি মারন রোগের বেরিয়েছে জীবনদায়ী টিকা। বর্তমানের চিকিৎসকরা রঞ্জন রশ্মির সাহায্যে শরীরে ভিতরকার ছবি তুলে তা পরীক্ষা  করে চিকিৎসা করতে পারছেন। রেডিয়ামের দ্বারা আজ দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করাও সম্ভব হচ্ছে। বিজ্ঞানের সাহায্যে কৃত্রিম হৃদয় স্থাপন, কিডনি স্থাপন হাঁটু প্রতিস্থাপন মানুষকে করে তুলেছে ব্যাধিমুক্ত। অতীতের গাছগাছালির আয়ুর্বেদকে বিজ্ঞান আজ রূপ দিয়েছে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনসুলিন, ইঞ্জেকশনের আকারে। কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান আজকের দিনে অনস্বীকার্য। পূর্বের দৈব নির্ভরতা কাটিয়ে বিজ্ঞানের সাহায্যে আজ উচ্চ-ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, নানা প্রকার যন্ত্রপাতি , পাম্প- মেশিন  এবং অধিক ফলনের জন্য গাছের অনুখাদ্য আবিষ্কারের ফলে কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে।  দেশের লোকের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে। 

 


 কিন্তু আজ আমরা বিজ্ঞানের যে উন্নতি নিয়ে এত আপ্লুত ,তা কিন্তু এসেছে কতিপয় বিজ্ঞানীর হাত ধরেই। তাদের মধ্যে  উল্লেখযোগ্য হলেনআচার্য জগদীশচন্দ্র বসু  , আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, প্রশান্তচন্দ্র মহালানবীশ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাথ সাহা,  ,স্যার আইজ্যাক নিউটন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন , গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রমুখ। ভারতে প্রতিবছর ২৮ ফেব্রুয়ারি স্পেকট্রোস কপির ক্ষেত্রে সি.ভি. রমন- এর একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারকে চিহ্নিত করতে "জাতীয় বিজ্ঞান দিবস" উদযাপন করা হয়। ১৯৩০ সালে সি.ভি. রমন স্পেকট্রোসকপির ক্ষেত্রে তাঁর আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনিই প্রথম এশিয়ার একজন ব্যক্তি যিনি বিজ্ঞানের কোনো শাখায় নোবেল পুরস্কার পান।দীর্ঘ গবেষণার পর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি তিনি পদার্থবিজ্ঞানের উপর একটি আলোড়নকারী সূত্র আবিষ্কার করেন যা "রমন এফেক্ট" নামে পরিচিত। এই সূত্রের মূল কথা হলো--- পদার্থের বিভিন্ন অণু পরমাণু সেই পদার্থের বর্ণের প্রতিফলনের জন্য দায়ী থাকে। 
সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরার জন্য এবং নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্যই "জাতীয় বিজ্ঞান দিবস" পালন করা হয়। এই দিন  বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা নানা রকমের বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাই এই বিশেষ দিনে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আমরা ভারতীয় পদার্থবিদ চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমনকে আমরা বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন করি।
 "বিজ্ঞান হলো সংগঠিত জ্ঞান, আর প্রত্যয় হলো সংগঠিত জীবন।" -            ------ইমানুয়েল কান্ট

সপ্তম শ্রেণি কল্যাননগর বিদ্যাপীঠ
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
মজুমদার ভিলা, কল্যাণনগর
উত্তর ২৪ পরগনা
৮৫৮২৮৩৫৬৫৩

 

Comments :0

Login to leave a comment