নতুনপাতা
গল্প
দূরবীণ
সৌ র ভ দ ত্ত
বাবা কাঠঠোকরাটা দেখ নারকেল গাছে কিরকম ঠকঠক করে গর্ত করছে।অনেকদির পর কাঠঠোকরার আবির্ভাব নিলয়কে কিরকম স্তম্ভিত করে।বাড়ির অনতিদূরে জলার দিকে কারা খড়ের নাড়ায় আগুন ধরিয়েছে।নগপাশের মতো কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে।জমির আল বেয়ে ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে ছুটছে কিছু বাচ্ছা ছেলেপুলে।শীতকালে উলুঘাসের ঝোপে চন্দ্রবোড়া,বেনা খরিশরা বেশ রোদ পোহায়।কিন্তু এক দশকে জমিহাঙরা জলা-জঙ্গলগুলো কেটে সাফ করে ফেলেছে।বাংলা থেকে সার্কাস পার্টিররাও কোথায় হারিয়ে গেল।বড়মামার সাইকেলে করে নিলয় প্রতি শীতে ফতে আলির মেলা দেখতে যেত।ফেরার পথে সরাঢাক,দূরবীণ,কাগজের কুমির প্রভৃতি কিনে আনত।সেই কুমিরের গলার দড়ি ধরে টেনে টেনে উঠোনে খেলত ভাইবোনেরা ।মায়ের হাত ধরে নিলয় সার্কাসে যেত।স্কুলের সামনের মাঠে বিশ্বশ্রী সার্কাস বসত।কত জন্তুজানোয়ার আসত।ট্রাপিজের খেলা হত।কিন্তু হঠাৎ গোটা সমাজটা কেমন সার্কাস হয়ে গেল।গ্রাম বাংলার লোকজীবন থেকে সার্কাস হারিয়ে গেল।
ছোট্ট গুড়িয়া বাবাকে বলে–চলো না বাবা, আজ সবাই মিলে মেলায় যাই–সন্ধ্যায় ব্যাণ্ডের গান আছে।নিলয়ের মেয়ে খুব গান ভালোবাসে। জামাল কুড়ু–ওর খুব প্রিয়।
সেদিন দুপুরে দাদুর দস্তানা বইখানা পড়তে মেয়েকে পড়তে দিতে গুড়িয়া নাক সিঁটকে বলেছিল–বাবা, আমাকে ইউটিউব থেকে জামাল কুড়ু চালিয়ে দাও।এসব বই পড়ব না।নিলয় বলে –সুকুমার রায়ও পড়বি না?এক ছিল সাঁজারু,হয়ে গেল হাঁসজারু…সে বলে না।ক-ক-খ-নো না।
চোখ মুছে নিলয় বলে জানিস–তখন মেলায় কত কি বিক্রি হত! মাটির সালতি,তালপাতার সেটাই,কাগজের ভেঁপু,টেপা পুতুল।শালপাতায় আলুর দম হাপুস হুপুস খেতুম।
গুড়িয়া নিলয়কে বলে–বাবা আজ তাড়াতাড়ি চলো না মেলায়– চিকেন ললিপপ খাব।বেলায় মা বলছিল ব্যাণ্ডের লোকটা নাকি আজ–অরিজিৎ সিং গাইবে ।খুব মজা হবে।কলাপাতায় নারুদার গরম ঘুগনির স্বাদ এখনো ভোলেনি নিলয়।পাল্টে যাওয়া সময়-সংস্কৃতিকে মেলাতে পারছে না সে।নিলয়ের মনের মধ্যে গুন গুনিয়ে ওঠে তেভাগার গান –হেই সামালো ধান হো
কাস্তেটা দাও শাণ হো…
Comments :0