MUKTADHARA PROBANDHA PALLAB MUKHOPADHYA 21 JUNE

মুক্তধারা প্রবন্ধ / পশ্চিমবঙ্গের রথের মেলা এবং আজকের রাধারাণী

সাহিত্যের পাতা

MUKTADHARA   PROBANDHA PALLAB MUKHOPADHYA 21 JUNE 2023

পশ্চিমবঙ্গের রথের মেলা এবং আজকের রাধারাণী

পল্লব মুখোপাধ্যায়

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'রাধারাণী' উপন্যাসের সূচনায় আছে 'রাধারাণী নামে এক বালিকা
মাহেশে রথ দেখিতে গিয়াছিল। বালিকার বয়স একাদশ পরিপূর্ণ হয় নাই ।' বনফুলের মালা গেঁথে
রথের হাটে বিক্রি করে যে পয়সা পাওয়া যাবে তা দিয়ে তার অসুস্থ বিধবা মায়ের পথ্য হবে। সেই
রাধারাণীর পরিণতি কী হয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসটি যাঁর পড়া সেই পাঠকমাত্রই তা জানেন।
রথ মানেই রথের মেলা। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় প্রতি ঋতুতেই কোনও না কোনও মেলা বসেই। কিন্তু
রথের মেলার আকর্ষণই আলাদা। রথের মেলা মানেই বড় বড় কড়াইতে গরম গরম ভাজা
জিলিপি, সরেস জিভে গজা কিংবা থালার মতো গোল পাঁপড় ভাজা, যা ছাড়া রথের মেলা কল্পনা
করা কঠিন। আষাঢ় মাসে রথযাত্রা উপলক্ষে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। বাংলা বা
বাঙালি জীবনের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে রথ। হুগলি জেলার মাহেশের রথযাত্রা
খুবই বিখ্যাত। মেদিনীপুরের মহিষাদল, হুগলিরই জাঙ্গিপাড়া, কোচবিহার জেলাতেও রথযাত্রা
বড় উৎসবের চেহারা নেয় প্রতিবার। কলকাতার রাস্তায় ইস্কন থেকে রথ বের হয়। জাতি, ধৰ্ম,
বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এসে মিলিত হন এই মানুষের মিলনমেলায়।


হালফিলের কোনও বড়সড় রথের মেলায় ঢুকলে মনে হবে যেন হাইটেক যুগের কোনও শিল্পমেলায়
ঢুকে পড়েছেন। নাগরদোলার পাশাপাশি ছোটদের জন্য ভিডিও গেম খেলার স্টল, ফ্যাশনেবল
জামাকাপড়ের স্টল, আসবাবপত্রের প্রচুর স্টক নিয়ে হাজির হন বিক্রেতারা। রথের মেলায়
প্রসাধনী দ্রব্যের স্টলও থাকবেই। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে যা বলা যায় তা হল গাছের চারা। রথের
দিনে গাছের চারা কিনে বাড়িতে বা বাগানে বা টবে লাগান অনেকেই। রথের মেলায় গাছের
চারার স্টল থাকবেই। রকমারি গাছ মেলে এই সময়। চারা লাগানোর পক্ষে উপযুক্ত এই ঋতু।
সবরকম ফল, ফুল ও পাতাবাহার গাছ নিয়ে মেলায় হাজির থাকেন বিক্রেতারা।
এই মেলাতেই দেখা মেলে বাবার সঙ্গে গরম জিলিপি ঠোঙায় ভরে ক্রেতার হাতে হাতে তুলে দিচ্ছে
কোনও রাধারাণী। থালার মতো পাঁপড় ভেজে ভেজে ঝুড়িতে রাখছে কোনও আয়েশা। বন্দুক
তাক করে বেলুন ফাটানোর জন্য মানুষকে ডাকছে কোনও রফিক। আবার গাছের রকমারি চারা
সাজিয়ে বসেছে কোনও সুবল। রংবেরঙের পোশাক পরে মেলায় ঘুরতে আসা মানুষের কাছে
রথের মেলা যতখানি ঠিক ততখানিই রাধারাণী, আয়েশা, রফিক কিংবা সুবলদের।
এই মেলায় ঘুরতে ঘুরতে হয়ত আপনার চোখে পড়ে যাবে একরত্তি মেয়েটিকে। হাতে তার প্রিয়
খেলনা। তার মুখের ওই হাসিটি-ই যেন রথের মেলার সেরা প্রাপ্তি, শ্রেষ্ঠ উপহার। আবার ওই
মেলাতেই হয়ত খুঁজে পাবেন সেই শিশুশ্রমিক-কে যে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে তার পছন্দের

জিনিসটির দিকে। কিন্তু কেনার সামর্থ্য নেই। মুহূর্তে মনে হয় এই মিলন মেলার মূল সুরটিই ভেঙে
গেছে। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীর যাবতীয় চপল হাস্য-লাস্য ম্লান হয়ে গেছে একজোড়া
চোখের শূন্যতায়।

Comments :0

Login to leave a comment