জয়ন্ত সাহা ও অমিত দেব: কোচবিহার,
চাকরি দেওয়া থেকে দুর্নীতি ঠেকানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা করেন, ঠিক তার উলটো প্রচার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার কোচবিহারে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, সমাবেশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদেরই বোকা বানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগে কে বাধা দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে? চুরি-দুর্নীতির জন্য আদালতের নির্দেশে তদন্ত ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ কাকে শাস্তি দিয়েছে? দেশে মোদী বলছেন, ভ্রষ্টাচার সমাপ্ত, আর এরাজ্যে উনি বলছেন, রাজ্য দুর্নীতিমুক্ত। দুজনেই দুর্নীতি আড়াল করে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন।
এদিনই মমতা ব্যানার্জি কলকাতার সমাবেশে ‘১০ লক্ষ চাকরি রেডি’জানিয়ে বলেন, আদালত এবং বিরোধীদের দায়ী করেছেন নিয়োগে বাধা দেওয়ার জন্য। এই প্রসঙ্গেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী আগে বলুন কোন দপ্তরে কতজনকে চাকরি দেবেন? কোথায় কতজনের প্যানেল করেছেন, কতজনের ইন্টারভিউ নিয়েছেন, এসব তথ্য প্রকাশ্যে আনুন। পুলিশের শূন্য পদে নিয়োগ করছেন না, চিকিৎসক, নার্সদের পদ শূন্য পড়ে আছে, দমকলে পদ শূন্য আগুন নেভানোর লোক নেই, পরিবহন নিগমগুলিতে কর্মীর অভাবে পথে গাড়ি নামছে না। কোথাও স্থায়ী কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না, চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ হচ্ছে। আর মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার সভায় দলীয় কর্মীদের চাকরির টোপ দিচ্ছেন? এর আগেও উনি রেলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে হাজার হাজার দরখাস্ত নিয়েছিলেন, কারুর চাকরি হয়নি। উনি চিরকাল অসত্য বলে এসেছেন, এখনও সেটাই করছেন। ওবিসি সার্টিফিকেট নিয়েও উনি মিথ্যাচার করছেন। দারিদ্রসীমার থেকে মানুষকে তোলার যে দাবি উনি করেছেন সেটার চেয়ে অসত্য আর কি হতে পারে!
চাকরিতে নিয়োগে বাধা নিয়ে মিথ্যাচারের নিন্দা করে সেলিম বলেন, হাইকোর্ট নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয়নি, বরং বলেছে নিয়োগ করতে, আমরাও বলেছি সুষ্ঠুভাবে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ করো। কিন্তু উনি দুর্নীতিমুক্ত কাজ করতে পারেন না বলেই নিয়োগ আটকে যাচ্ছে। আসলে উনি টাকা দাও, চাকরি নাও নীতিতে বিশ্বাসী।
দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে শাস্তি দেওয়ার যে আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার সমাবেশে দিয়েছেন তাকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে উনি বলেছিলেন ‘নারদ’র প্রসঙ্গে আগে জানলে একজনকেও টিকিট দিতাম না। অথচ তাঁরাই পরে মন্ত্রী হয়েছেন, সাংসদ হয়েছেন। একজনকেও তিনি শাস্তি দিয়েছেন? স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনে দুর্নীতি, কোথাও কোনও ব্যবস্থা নেননি। তৃণমূলের শাসনে একজনও দুর্নীতির দায়ে শাস্তি পায়নি। এ কোন খেলা হচ্ছে? বিজেপি আর তৃণমূলে আয়ারাম-গয়ারামের খেলা চলছে রাজ্যজুড়ে। তার ফলে দু’দলেই দুর্নীতিগ্রস্তরা রয়েছে, কাউকেই শাস্তি পেতে হচ্ছে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, লোকসভা ভোটের পর মোদীর মতোই মমতা ব্যানার্জিও সাধু সাজার চেষ্টা করছেন। রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, টাকা মাটি মাটি টাকা। আর মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, যত মাটি, তত টাকা। বালি বিক্রি হচ্ছে, কয়লা পাচার হচ্ছে, গাছ কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে, জঙ্গল সাফ করা হচ্ছে, জমি দখল করা হচ্ছে, জমি থেকে উৎখাত করে দেওয়া হচ্ছে মানুষকে। কেন করা হচ্ছে? কারণ মমতা ব্যানার্জির দর্শনে, টাকা আসবে, টাকা যাবে। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের বাড়ি, খাটের তলা থেকে বাঙ্কার, সব জায়গায় টাকা মজুত। মুখ্যমন্ত্রী সভায় দাঁড়িয়ে নিজের দলের লোকেদের বোকা বানাচ্ছেন দুর্নীতিবিরোধী হুঙ্কার দেওয়ার নাম করে। দুর্নীতির জন্য আদালতের নির্দেশে তদন্তে যারা জেলে গেছে, কিংবা জামিনে আছে তাদের কাউকে উনি দল থেকে তাড়িয়েছেন?
মুখ্যমন্ত্রীর লোভহীন গরিবি জীবনযাপনের পরামর্শ সম্পর্কে সেলিমের মন্তব্য, তৃণমূলের সমর্থক গরিব মানুষ কেউ আপনারা বড়লোক হবেন না, লোভ করবেন না। হেঁটে যাবেন, সাইকেলে যাবেন। কেবল ওঁর ভাইপো দামি চার্টার্ড বিমানে ঘুরে ঘুরে সভা করবেন। বিদেশে, সুইজারল্যান্ডে ছুটি কাটাতে যাবেন। নিজের দলের কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে যারা এই ভণ্ডামি করে, তারা মানুষকে বোকা বানানো ছাড়া আর কী করতে পারে!
এরাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে জিতলেও তৃণমূল বিজেপি’র গোপন সঙ্গী হিসাবেই ভূমিকা পালন করছে বলে সতর্ক করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, সংসদের ভেতরে সব বিরোধী শক্তি যদি এককাট্টা হয়ে লড়াই করে, তাহলে মোদী সরকারের বহু জনবিরোধী নীতি আটকানো যাবে। তাই সংসদের অভ্যন্তরে যাতে বৃহৎ বিরোধী ঐক্য গড়ে না ওঠে তার চেষ্টা করছেন মমতা ব্যানার্জি। ঘরের মধ্যে আরেকটি ঘর করবার চেষ্টা করছেন তিনি। আম্বানি পরিবারের বিয়েতে তিনি যখন গিয়েছিলেন তখন সেখানে অখিলেশ যাদবও গিয়েছিলেন। আম্বানি পরিবারের সাথে সমাজবাদী পার্টি এবং মমতা ব্যানার্জির কি সম্পর্ক তা সবাই জানে। শুধুমাত্র ইলেক্টোরাল বন্ডই নয়, এর বাইরেও সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে ওদের মধ্যে। ভারতের বর্তমান রাজনীতিতে কর্পোরেট-কমিউনাল যোগসাজস কাজ করছে। তারই জন্য গুটি সাজানো হচ্ছে।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা জীবেশ সরকার, অলকেশ দাস ও পার্টির কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়।
Comments :0