TMC BJP

মমতাকে বাঁচাচ্ছেন মোদী-শাহ, স্বীকার আশঙ্কিত সঙ্ঘের

রাজ্য

মমতা ব্যানার্জি সহ তৃণমূলকে রক্ষা করছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ। প্রবন্ধ লিখে তা স্বীকার করল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। 
আরএসএস’র দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সহ প্রচার প্রমুখ শিবেন্দ্র ত্রিপাঠি। দীর্ঘদিনের স্বয়ংসেবক। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সঙ্ঘের মুখপত্রের গত ৩ নভেম্বর সংখ্যায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ত্রিপাঠির। শিরোনাম, ‘পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষার দায় কার? শুধু বাঙ্গালি হিন্দুর, নাকি ভারত সরকারের?’(বানান অপরিবর্তিত রাখা হলো।) সেখানে সঙ্ঘের নেতা লিখেছেন, ‘‘...পশ্চিমবঙ্গের এই দুর্দিনে রাজ্যবাসীর পাশে থাকার কথা যার, দেশের সেই সর্বময়কর্তা এখনও দিদি-ভাইয়ের মধুর সম্পর্ক রক্ষায় ব্যস্ত।’’ স্বভাবতই ‘দেশের সেই সর্বময় কর্তা’ বলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই বোঝানো হয়েছে। 
তৃণমূল-বিজেপি’র বোঝাপড়ার কথা বারবার সিপিআই(এম) বলেছে। এখনও বলছে। রাজ্যে বিভিন্ন সভায় ভাষণ দিতে উঠে গত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার ঘোষণা করেছেন যে, দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে তাঁর সরকার। কিন্তু গত ১১ বছরে রাজ্যের মানুষের অভিজ্ঞতা হলো, সারদা, নারদ স্টিং অপারেশন, চাকরি চুরির মতো প্রতিটি দুর্নীতির তদন্তে তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের কোনও শাস্তি হয়নি। একশো দিনের কাজের টাকা দেদার লুটের প্রমাণ পেয়েও তৃণমূলের কোনও নেতাকে গ্রেপ্তার পর্যন্ত করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। বরং গরিব মানুষের কাজ বন্ধ করেছে। মূলত বামপন্থীদের অগ্রগতি আটকাতে মমতা ব্যানার্জি-নরেন্দ্র মোদীদের এই বোঝাপড়া। কিন্তু আরএসএস এই কথা বলছে কেন? তৃণমূল-বিজেপি’র এই বোঝাপড়ার কথা রাজ্যের অনেক মানুষ বুঝতে পেরেছেন। তৃণমূল-বিজেপি’র এই ‘সেটিং’ এবং তার ফলে রাজ্যের মানুষের দুর্গতির বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে লাগাতার প্রচার, আন্দোলন করছেন বামপন্থীরা। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী শক্তির সমর্থন, ভোট এবং শক্তি বাড়বে, এই আশঙ্কা করছে সঙ্ঘ। ইতিমধ্যেই সঙ্ঘের বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধি হিন্দু এবং মুসলমান সমাজকে ভেঙে সঙ্ঘ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলির হিন্দুত্বের বিস্তার যে বিরাট বাধার মুখে পড়বে তা জানে আরএসএস। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্ঘের মধ্যে তৈরি হওয়া উষ্মা ফেটে বেরোতে শুরু করেছে। রাজ্যে সঙ্ঘের গুরুত্বপূর্ণ নেতার এই প্রবন্ধ তার প্রমাণ।
আরও কী লেখা হয়েছে? ত্রিপাঠি লিখেছেন, ‘‘হতভাগ্য বাঙালিকে তবে কে বাঁচাবে? আমাদের এক নেতা, দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, যিনি তুড়ি মেরে অশান্ত কাশ্মীরকে নিমেষে ঠান্ডা করে দিতে পারেন তো অন্যদিকে এক নিমেষে মাওবাদীদের পলকে পৌঁছে দিতে পারেন যমের দক্ষিণ দুয়ারে, সেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী— কী কারণে জানি তিনিও আজ নিশ্চুপ, দ্রোণাচার্যের মতো। তাঁর তূণের সমস্ত তিরই বুঝি পশ্চিমবঙ্গের এই মহিলা দুর্যোধনের কাছে এসে থেমে গেছে।’’ 
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক খারাপ অবস্থা, দুষ্কৃতীদের বেড়ে চলা তাণ্ডব রাজ্যের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কট হয়ে উঠেছে। কিন্তু মোদী, অমিত শাহ’র অনুসারী রাজ্য বিজেপি’র নেতারা এই বিষয়েও কোনও জোরালো বক্তব্য হাজির করতে পারেননি। যেমন আরজি কর হাসপাতালে ট্রেনি চিকিৎসককে নৃশংসভাবে ধর্ষণ, খুনের ঘটনাতেও অভিযুক্ত তৃণমূল ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের কোনও চেষ্টাই করেনি সিবিআই। সিবিআই’র তদন্তকারী অফিসার আদালতে জানিয়েই দিয়েছেন যে, কলকাতা পুলিশের তদন্ত অনুসারেই তারা তদন্ত করেছেন। নির্যাতিতার মা-বাবা নয়াদিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের দেখা পাননি। এমন নানা ঘটনা আছে। স্বভাবতই পশ্চিমবঙ্গে মমতা-শাসনে ফেঁপে ওঠা সঙ্ঘের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই পরিস্থিতিতে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সঙ্ঘের মধ্যে।
স্বভাবতই ত্রিপাঠির ওই প্রবন্ধে তারপর এসেছে ভোটের প্রশ্ন। লেখা হয়েছে, ‘‘তবু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চুপ। কেন, পশ্চিমবঙ্গ কি ভারতের বাইরে? কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন এর বিরুদ্ধে মানুষকে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে। অদ্ভুত তত্ত্ব!...তাদের ভোট দিয়ে চেয়ারে বসানো হয়েছে কেন?’’
এই প্রশ্ন রাজ্যের আরও মানুষের। কারণ সিপিআই(এম) রুখতে পারবে না তৃণমূলকে, এই প্রচার শুরু হয়েছিল ২০১৬’র বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে। ২০১৮’র পঞ্চায়েতের পর সেই প্রচার আরও জোরালো করে সঙ্ঘ, তার বিভিন্ন সংগঠন এবং মিডিয়ার একটি অংশ। এসেছিল ‘আগে রাম পরে বাম’। মূলত বিজেপি’র সাংসদ, বিধায়ক বাড়িয়ে রাজ্যে তৃণমূল আর বিজেপি, এই দুই মেরু তৈরি করাই ছিল সেই প্রচারের উদ্দেশ্য। সেই প্রচারে প্রভাবিত হয়ে অনেক মানুষ বিজেপি’কে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের বড় অংশের ভুল ভাঙছে। সেই পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সঙ্ঘ বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর চাপ বাড়াতে ‘তাদের ভোট দিয়ে চেয়ারে বসানো হয়েছে কেন’ এই প্রশ্ন তুলছেন। 
এই প্রবন্ধের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল আদতে নন্দীগ্রামের বাসিন্দা শিবেন্দ্র ত্রিপাঠিকে। তিনি নিজস্ব ব্যাখ্যা উপস্থিত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আমি মনে করছি রাজ্যের এই দুরবস্থার সময় বিজেপি পরিচালনাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের যে ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল তারা তা নিচ্ছেন না। মানুষও তাই মনে করছেন। তাই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’’

Comments :0

Login to leave a comment