Sonali Bibi

অবশেষে বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরলেন সোনালী বিবি

জাতীয় রাজ্য আন্তর্জাতিক

প্রায় ছয় মাসের লড়াইয়ের পর অবশেষে ঘরে ফিরছেন সোনালী বিবি। ভারতীয় প্রমান হওয়ার পরেও তাঁকে ফেরাতে নিমরাজি ছিল কেন্দ্রের সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে ও মানবিকতার খাতিরে শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপি দিয়ে বিএসএফের নিকট হস্তান্তর করে বিজিবি। সোনালী খাতুন ও তাঁর আট বছরের সন্তান মোঃ সাব্বির শেখকে সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় বিএসএফের নিকট হস্তান্তর করা হয়। দেশে ফিরতে পারলেও সোনালি বিবির উদ্বেগের শেষ হয়নি। কারণ বাংলাদেশেই রয়ে গিয়েছেন সোনালির স্বামী এবং সুইটি বিবি ও তাঁর দুই নাবালক সন্তান। হস্তান্তরের সময় মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় মালদার একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র দিয়ে দেশে ফেরানো হয় তাদের। অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবির সঙ্গে তাঁর আট বছরের ছেলেও দেশে ফিরলো এদিন। বীরভূমের প্রত্যন্ত জনপদ পাইকরের দর্জিপাড়া থেকে সপরিবারে দানিশ শেখ, সোনালি বিবি, সুইটি বিবিরা দিল্লি পাড়ি দিয়ে ভাংরির বেচাকেনা করে কোনোমতে পেট চালাচ্ছিলেন হতদরিদ্ররা। বাংলায় কথা বলায় 'বাংলাদেশী ' তকমা লাগিয়ে চলতি বছরের ২৫ জুন তাদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে সোনালি বিবি সহ ৬ জন ভারতীয় নাগরিককে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা হয়। তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার করে এবং গত ২২আগস্ট আদালতের নির্দেশে জেল হাজত হয়। আটকদের মধ্য ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় মহিলা সোনালী বিবি ও তাঁর ২ জন নাবালক শিশু ছিল। তাপর চলে টানাপোড়েন। ভারতীয় প্রমান হওয়ার পরেও তাদের দেশে ফেরাতে চাইনি কেন্দ্র সরকার। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে উঠলে সোনালী বিবিদের দেশে ফেরাতে নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি দেশে ফেরার জন্য আকুতি ও জানা তিনি। নয়মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি বলেন, দেশের মাইতেই তিনি তার সন্তানের জন্ম দিতে চান। আদালতের নির্দেশের চাপে ও মানৱীকৰ খাতিরে একপ্রকার বাধ্যে হয়েই সোনালীদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করে কেন্দ্র সরকার। অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি ও দুই শিশুকে ‘পুশব্যাক’ করায় মানবিক ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নজরে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও বিজিবি সদর দপ্তর কূটনৈতিক পর্যায়ে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করে। উভয় দেশের সম্মতিতে তাদের  নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার তাদেরকে সসম্মানে নিজ দেশে ফেরত পাঠয়ে দেয় বাংলাদেশের অন্তরবর্তী সরকার।
এদিন অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবিকে স্বাগত জানাতে মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মণ ঘোষ, সহকারী সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেন সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি পুলিশ আধিকারিক, বিএসএফ এবং প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিরাও ছিলেন সেখানে। ভারতের সীমান্তে ঢুকে প্রথমেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বিএসএফ'র ক্যাম্পে। সেখান থেকে তাঁকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা যাচ্ছে। সোনালীদের দেশে ফেরাকে মানবিকতার জয় বলে উল্লেখ করছেন অনেকে।
মহানন্দা ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক সাংবাদিকদের এদিন বলেন, ‘‘বিএসএফের এই অমানবিক পুশইন কাজে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুশইনের এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি করছে। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিএসএফের অমানবিক পুশইন আচরণের বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং বিজিবি মানবিক মূল্যবোধ, আন্তর্জাতিক আইন ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও শিশুর প্রতি সুরক্ষা এবং চিকিৎসাগত ঝুঁকি বিবেচনা করে বিজিবির এই কাজ ন্যায়, মানবতা ও দায়িত্বশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিজিবি আশা করে, পুশইনসহ এ ধরনের অমানবিক ও আন্তর্জাতিক আইন-বিরোধী কাজ বিএসএফ বন্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে সীমান্তে সৌহার্দ্যপূর্ণ, মানবিক ও আইনসম্মত প্রক্রিয়া বজায় রাখবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment