চট্টগ্রাম বন্দরের ৩টি টার্মিনাল বিদেশী বহুজাতিক সংস্থার কাছে লিজ দিতে চলেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। তার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার তীব্র বিক্ষোভের ডাক দেয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সহ ১১টি বাম দল। ঢাকার যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের বাসভবনে অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। বিক্ষোভ মিছিলে বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে পুলিশ। একাধিক বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর থেকে যমুনা, সচিবালয় ও তার আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগরের পুলিশ প্রশাসন।
প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করে, পরিকল্পিত ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বন্দরের ৩টি টার্মিনাল লিজ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। ইতিমধ্যে লালদিয়া-পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশী কম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চুক্তিতে শিলমোহর পড়েছে। নিউমুরিং ও পতেঙ্গা টার্মিনালও লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এভাবে দেশের সম্পদ বিদেশী বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে সমর্পণ করা হচ্ছে। গত বেশ কয়েকদিন ধরেই বামপন্থীরা এর বিরুদ্ধে সরব।
বৃহস্পতিবার বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ ও জাতীয় গণ ফ্রন্টের ডাকে সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদী সমাবেশ করা হয়। সমাবেশ শেষে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। কয়েক শতাধিক মানুষ মিছিলে পা মেলান। শহরের বিজয়নগর হয়ে মিছিল কাকরাইল মোড়ে এলে পুলিশ তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জে সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লা ক্কাফী রতন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা রুহুল আমিন, সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ আহত হন। পুলিশের হামলায় অন্তত ৫০ জন বিক্ষোভকারী রক্তাক্ত হয়েছেন। পুলিশি হামলায় ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন নেতা জহরলাল রায়ের পা ভেঙে গিয়েছে। শ্রমিক নেতা কাজী রুহুল আমিনের মাথা ফেটে গিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ সহ শহরের বহু হাসপাতালে অনেকে ভর্তি। অন্তত ১২ জনের অবস্থা গুরুতর। পুলিশের মারের মুখেও বিক্ষোভকারীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে সিপিবি’র সভাপতিমণ্ডলী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়ক বিশেষ সহকারীর অপসারণের দাবি জানিয়েছে। বিনা উসকানিতে সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলা করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। সিপিবি’র অভিযোগ, এটি মোটেই কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং পূর্ব পরিকল্পিত বলেই মনে হয়েছে।
বামপন্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের এমন বেপরোয়া হামলায় নানা মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এই ধরনের পরিস্থিতি প্রায়ই ঘটে। তবে বাম দলগুলির ওপর এমন হামলা এই প্রথম। এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে ছাত্র ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন বামপন্থী গণ সংগঠন।
বন্দর ইজারার বিরোধিতা করায় বাম গণতান্ত্রিক জোট ও অন্যান্য দলের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা করে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মাহমুদ হাসান মানিক ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তেল, গ্যাস, বন্দর সহ নানা ইস্যুতে ‘নন-ডিসক্লোজ’ চুক্তি করে চলেছে। এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহীতা করা হচ্ছে। দেশে নির্বাচিত আইনসভা কিংবা জনগণের মতামত নেওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিয়ে, গায়ের জোর খাটিয়ে বিদেশী প্রভুদের কাছে নতিস্বীকার করে গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারে সরকার লিপ্ত হয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টি জানিয়েছে, গত ১৫ মাসে সমস্ত পেশাজীবী জনগণের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকার লাঠিপেটা করে দমন করেছে। এই সরকারের ফ্যাসিবাদী চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। বন্দর ইজারা বিরোধী মিছিলে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া এই ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ডের অংশ। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য নেই। পরিকল্পিত অরাজকতা চালিয়ে সরকার মৌলবাদী সাম্রাজ্যবাদীদের টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষে তা বুঝতে যত দেরি হবে, দেশের তত ক্ষতি। এই গণবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ।
Bangladesh
ঢাকায় বামপন্থীদের মিছিলে বেপরোয়া হামলা, পাল্টা প্রতিরোধ
আহতদের দেখতে হাসপাতালে নেতৃবৃন্দ
×
Comments :0