Meenakshi Mukherjee at Raniganj

কয়লাখনি অঞ্চলের পদযাত্রায় মীনাক্ষী মুখার্জি

রাজ্য জেলা

মলয়কান্তি মণ্ডল : রানিগঞ্জ 
বহু সংগ্রামের সাক্ষী রানিগঞ্জ আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল। ‘‘রূঢ়’’ হিসেবে পরিচিত শিল্প এই শিল্পভূমি রক্ষার জন্য লালঝাণ্ডা লড়াই করে চলেছে। কয়লা, ইস্পাত, রেল, বিদ্যুৎ সহ ছোট মাঝারি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা, সিমেন্ট কারখানায় সমৃদ্ধ রানিগঞ্জ - আসানসোল শিল্পভূমি পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশের শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এই অঞ্চলের শ্রমিকদের শোষণ, বঞ্চনা এবং লালঝাণ্ডা কাঁধে নিয়ে শ্রমিকদের লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের অপশাসনে শিল্পাঞ্চলে অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছে। অন্ধকার ছিন্ন করে কারখানা টিকিয়ে রাখার লড়াই, শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি, সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে সিআইটিইউ’র লড়াই আজও জারি আছে। ‘‘শিল্প বাঁচাও- কাজ  বাঁচাও- জেলা বাঁচাও- বাংলা বাঁচাও’’  দাবি নিয়ে শ্রমিক মজদুরদের সাথে শামিল হয়েছেন গ্রামের কৃষক, খেতমজুর, বস্তিবাসী, মহিলা, ছাত্র, যুব সংগঠনও। 
রবিবার কয়লাঞ্চলের পদযাত্রা শুরু হল জামুড়িয়া পানিহাটি ওয়ার্কশপ থেকে। সপ্তাহব্যাপী খাদান এলাকায় চলবে পদযাত্রা। এদিনের পদযাত্রার মিনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ধর্ম নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির সেটিং রাজনীতি করে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। কয়লা খাদান বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চলেছে। কাজ নেই। বেকার যুবরা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে প্রকল্প ঘোষণা করলেও ক'জন তার সুবিধা পেয়েছেন ?  শিল্পাঞ্চলে বন্ধ কারখানার জমিতে কারখানা তৈরির দাবি তোলেন তিনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকার স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে। গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়াশোনা করবে?  
সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রুটি রুজি, শিক্ষা,স্বাস্থ্য 'র সঠিক পরিষেবার দায়িত্ব সরকারের।  মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, সমস্ত অংশের মানুষকে সংগঠিত করে বাংলা বাঁচানোর লড়াইয়ে শামিল করাতে হবে। 
এদিনের পদযাত্রা জামুড়িয়া, সাতগ্রাম ইনক্লাইন, সাওড়া, রতিবাটি, চাপুই, চাঁদা মোড়ের দিকে যত এগিয়েছে  পদযাত্রার সাথে যুক্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষের। পদযাত্রীদের দাবি সোচ্চার হয়েছে কয়লা, রেল ও ইস্পাত শিল্পকে বেসরকারিকরণ করা চলবে না। পদযাত্রার শুরুতেই বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, প্রবীর মণ্ডল, মনোজ দত্ত প্রমূখ নেতৃবৃন্দ। পদযাত্রীদের স্লোগানের উত্তাল তরঙ্গ আছড়ে পড়েছে কয়লাঞ্চলে।

পদযাত্রায় অংশ নিয়ে কয়লা খনি শ্রমিক দীপক বাউরি,  নাসির মিঞা মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলেন, মাটির নীচে টন টন উন্নত মানের কয়লা মজুত থাকা সত্ত্বেও মোদী সরকার কয়লা খনিকে এমডিও এবং রেভেনিউ শেয়ারিং এর নামে বেসরকারি মালিকের হাতে তুলে দিতে চাইছে। তৃণমূল নীরব থেকে মোদী সরকারকে সমর্থন করছে। কয়লা শিল্প বাঁচানোর জন্য লালঝাণ্ডা লড়াই করছে। ধ্বস- গ্যাস -আগুন নিত্য সঙ্গী কয়লাঞ্চলের মানুষের। পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট। প্রশাসনের চোখের সামনে তৃণমূল ও বিজেপি দামোদর ও অজয় নদী চুরি করছে। মানুষ বুঝেছে তৃণমূল বিজেপির সেটিং রাজনীতি। 
পদযাত্রায় খেতমজুর লক্ষ্মী বাউরী, দিলীপ বাউরী হাঁটলেন। একশো দিনের কাজ বন্ধ। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। রুটি রুজির সমস্যার কথা ফুটে উঠেছে তাদের স্লোগানে। তৃণমূল গরিব যুবদের বালি, কয়লা চুরিতে নামাচ্ছে। কয়লাঞ্চলের সর্বত্রই যন্ত্রণার দিনলিপি। বিকল্প কি ? রাস্তায় নেমেই লড়াই করতে হবে জানালো পদযাত্রা। কয়লাঞ্চলের পদযাত্রা থেকে আওয়াজ ওঠে, ‘‘তখত বদল দো, তাজ বদল দো, বেইমানোকা রাজ বদল দো।’’

Comments :0

Login to leave a comment