ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলো পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের শালিডি গ্রামের এক যুবকের। মৃত যুবকের নাম কৃষ্ণপদ কিস্কু (২১)। এদিকে, ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে বীরভূম জেলার পাইকর থানার কাঠিয়া গ্রামের এক পরিযায়ী শ্রমিকেরও মৃত্যু হয়েছে। মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম আইবুল শেখ (২৮)।
বান্দোয়ানের ঠিকা শ্রমিক গত ১১ অক্টোবর বিকেলে কাজ করতে গিয়ে উপর থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন বলে পরের দিন সকালে পরিবারের কাছে খবর আসে। দীর্ঘ দিন চেন্নাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৫ অক্টোবর চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। ২৬ অক্টোবর দেহের ময়নাতদন্ত হয়। মঙ্গলবার খড়গপুরে দেহ আসার পর সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যুতে চিন্তার মেঘ গোটা পরিবারে। কফিনবন্দি মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী, ভাই সহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। দূর থেকে অবুঝের মতো দেখে যায় এক বছরের শিশু সন্তান। গোটা গ্রামে শোকের পরিবেশ।
সংসারে সবার মুখে হাসি ফোটাতে, একটু সচ্ছলতা আনতে, ভাইকে পড়াশোনা করানোর জন্য নয় মাস আগে চেন্নাই শহরে পাড়ি দিয়েছিলেন শালিডি গ্রামের যুবক কৃষ্ণপদ কিস্কু। এর আগে ঝাড়খণ্ডের টাটাতে কাজ করতেন। ভাই পবিত্র কিস্কু জানিয়েছেন, অভাবের টানে দাদার বাড়ি ছেড়ে এত দূরে যাওয়া। তাঁকে ঝাড়গ্রামে রেখে পড়াশোনা করানোর খরচ দিতেন কৃষ্ণপদ। সেখান থেকে পাঠানো টাকাতেই বাড়িতে একটু সচ্ছলতা আসে, ঘরদোর ঠিক করা হয়। সেও পড়াশোনা করতে পারে।
স্থানীয় গ্রামবাসী সিতকমল মাহাতো জানিয়েছেন, দরিদ্র পরিবারের ছেলে ছিল। পরিবারে সচ্ছলতা আনতে কৃষ্ণপদ পাড়ি দিয়েছিল সুদূর চেন্নাই। এলাকায় কোনও কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়ে এখানকার বহু বেকার ছেলেকে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যেতে হয়। পরিবারের একমাত্র রোজগারের সদস্যের এই অকালে চলে যাওয়ার পর গ্রামবাসীদের চিন্তা কীভাবে এই পরিবারটা চলবে। সমস্ত গ্রামের মানুষের দাবি, প্রশাসন মানবিক হয়ে এই পরিবারটির পাশে দাঁড়াক। প্রত্যেকেরই বক্তব্য, এলাকায় কাজ থাকলে এমনভাবে অকালে চলে যেতে হতো না এই ছেলেটিকে।
এদিকে, এলাকায় কাজ না থাকায় পরিবার সহ বেশ কয়েক বছর ধরেই বীরভূম জেলার পাইকর থানার কাঠিয়া গ্রামের আতাবুল শেখের পরিবার উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে কাবারির কাজ করতেন। সম্প্রতি হঠাৎ করে আতাবুলের বড় ছেলে আইবুল শেখ অসুস্থ হয়ে বারাণসীর নয়ডা জেলার সুন্দরপুর এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ওই পরিযায়ী শ্রমিকের অপারেশন হয়। অপারেশন হওয়ার পর সোমবার সকালেই হাসপাতালেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিবারকে জানায়, দুই লক্ষ টাকার উপরে বিল হয়েছে। বিল জমা না দিলে হাসপাতাল মরদেহ ছাড়বে না। মৃতর বাবা আতাবুল শেখকে একথা জানলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দরিদ্র পরিবারটির। অবশেষে সহৃদয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় মাত্র ১০ হাজার টাকা জমা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেহ ছেড়ে দেয়। সেখানে গাড়ি ভাড়া করে মৃতদেহ মঙ্গলবার ভোররাতে কাঠিয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলে সারা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর স্ত্রী রয়েছেন, আছে এক শিশু সন্তান।
বীরভূম জেলা সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর চক্রবর্তী অভিযোগ জানান, গরিব মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরবে বিজেপি’র রাজত্বে গিয়ে। তিন বছর ধরে একশো দিনের কাজ বন্ধ রয়েছে রাজ্যে। পঞ্চায়েতে কেবল লুট চলছে। অভাবের তাড়নায় গ্রামের বেকার যুবক সহ সাধাণ মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিনরাজ্য কাজ করতে যাচ্ছেন দুটো টাকা রোজগারের আশায়। সেখানে তাঁদের কোনও নিরাপত্তা নেই। অবিলম্বে ওই পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারকে রাজ্য সরকারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ দিতে হবে।
Comments :0