নতুনপাতা
বইকথা
হরেকরকম স্বাদের গল্প সংকলন-- 'বহুরূপী'
সৌরভ দত্ত
গল্পের ভিতর অনাবিল হাস্যকর পরিবেশনের সহজাত প্রতিভা ছিল সুকুমার রায়ের। শিশু-কিশোর উপযোগী গল্পের চোরটান পাঠককে মহিত করে।বইঘরে স্তূপাকারে সজ্জিত বইয়ের ভিতর থেকে উঁকি মারে কল্লোল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত সুকুমার রায়ের শিশুদের গল্পসংকলন–'বহুরূপী'।যুধাজিৎ সেনগুপ্তের আঁকা প্ররচ্ছদটি অসাধারণ।বইয়ের ভিতরেও রয়েছে চিত্রশিল্পীর বেশ কিছু অপূর্ব অলংকরণ গল্পের লতাপাতা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয় পাঠককে।বইটিতে রয়েছে মোট তেরটি গল্পের সমাহার।গল্পগুলি এতটাই মনোমুগ্ধকর যে বলে বোঝানো যাবে না।সূচিপত্রের প্রথম গল্পের নামই লেখক রহস্য করে রেখেছেন গল্প।একদম সুকুমারীয় স্টাইলে আমরা বলতে গ-ল-প মিলে হয়ে গেল গল্প।গল্পে একটা বাচ্ছা ছেলে মামাকে গল্পের আসর পাতবার আবদার করছে-"বড়মামা,একটা গল্প বল না।"গল্পের অনুষঙ্গে চলে আসে হরিণের ছানা ঘাড়ে হালুম করে কামড়ে ধরা বাঘের কথা।"আবার কখনো কখনো মামাকে ভাগ্নেকে বলতে শোনা যায়–"এক ছিল মোটা বাবু আর এক ছিল রোগা বাবু।"গল্পে লেখক বলেছেন-''রোগা লোকের কিপটে মন।"পণ্ডিত মশাই বলেন–"দুটোই বাঁদর দুটোই গাধা/রোগা মোটা সমান হাঁদা।"পরের গল্প দ্রিঘাংচু এ গল্পের নামকরণটাই বেশ অদ্ভুত।গল্পের সূচনাপট পাত্রমিত্র সহ রাজা মশাইয়ের সভাস্থল।গল্পের শেষপর্যন্ত রয়েছে দ্রিঘাংচুর খোঁজ।যেখানে লোকটি বলে–"মহারাজ,আমি একটা মন্ত্র জানি, আমি যুগজন্ম ধরে বসে আছি দ্রিঘাংচুর দেখা পেলে সেই মন্ত্র যদি তাকে বলতে পারতাম…"হিংসুটি গল্পে বেজায় হিংসুটে এক দুষ্টু মেয়ের কথা উল্লিখিত হয়েছে।কিন্তু বৈপরীত্য দেখা যায় তার দিদির চরিত্রে–"হিংসুটির দিদি বড় লক্ষ্মী মেয়ে–যেমন কাজে কর্মে, তেমনি লেখা-পড়ায়।" মহাজন আর সওদাগরের বন্ধুত্বের কাহিনি।কিন্তু গল্পটি কিছুটা থ্রিলার আঙ্গিকের।যেখানে মহাজন সওদাগরকে এক থলি মোহর রাখতে দিয়ে বলল–"ভাই, ক'দিনের জন্য শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি ; আমার কিছু টাকা তোমার কাছে রাখতে পারবে?" মহাজন তার মোহর ভর্তি থলি সওদাগরের সিন্দুকে রেখে চলে গিয়েছিল বাড়ি।এরপর কালচক্রে সওদাগর পয়সার থলি নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘরে চলল।মহাজন বাঁদর নিয়ে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরল। এ গল্পটি টানটান উত্তেজনাকর।পরের গল্প গরুর বুদ্ধি যার মুখ্য চরিত্র পণ্ডিতমশাই ভটচার্য্যি বামুন একজন সাদামাটা মনের মানুষ।কলু ও মূর্খ গরুকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে গোটা গল্পের সারবস্তু।শেষপর্যন্ত পণ্ডিতমশাই ভাবলেন,'তাও তো বটে।মূর্খ গরুটা ন্যায়শাস্ত্র পড়েনি,তাই কলুর কাছে জব্দ আছে।"এরকম অনেক রঙ্গরসিকতা স্থান পেয়েছে বহুরূপী নামক ছোট্ট গল্পগ্রন্থটিতে।বইটির শেষ রচনা–বুদ্ধিমান শিষ্য।এক মুনি ও শিষ্যের যাগযজ্ঞের গল্পকথা পরিবেশিত হয়েছে গল্পের নিটোল বুনোনে।বেড়াল ধরার প্রসঙ্গ রয়েছে এ গল্পে।বইয়ের প্রতিটি গল্পের আয়তন খুব ছোট যা সহজেই রসক্তীর্ণ হয়ে ওঠে।
গল্প সংকলন :বহুরূপী
লেখক :সুকুমার রায়
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ:যুধাজিৎ সেনগুপ্ত
প্রকাশন:কল্লোল ৫৭-এ কারবালা ট্যাঙ্ক লেন।কোলকাতা–৬
Comments :0