NATUNPATA | GK — GENTUGAN | TAPAN KUMAR BIRAGAYA — 15 MARCH 2024

নতুনপাতা | জানা অজানা | বাংলার লৌকিক ঘেঁটুগান — তপন কুমার বৈরাগ্য | ১৫ মার্চ ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

NATUNPATA  GK  GENTUGAN  TAPAN KUMAR BIRAGAYA  15 MARCH 2024

নতুনপাতা  

জানা অজানা

বাংলার লৌকিক  ঘেঁটুগান
তপন কুমার বৈরাগ্য

বাংলায় অনেক লৌকিক দেবতা আছে।তার
মধ্যে আর এক লৌকিক দেবতা ঘেঁটু।
এই ঘেঁটু দেবতা খোস,পাঁচড়া ,চুলকানির
দেবতা।তাই একে মঙ্গল দেবতা বলা যায় না।
ইনি একপ্রকার ঘৃণার দেবতা।
কথিত আছে ইনি আগে গোলোকে থাকতেন
এবং গোলোকপতি বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন।
তখন তার নাম ছিল দেবকুমার।হঠাৎ
তিনি অহঙ্কারী হয়ে পড়লেন।নিজে রূপবান
বলে ভগবান বিষ্ণুকে ঘৃণার চোখে দেখতে
লাগলেন।এই ঘৃণার জন্য বিষ্ণু তাকে অভিশাপ দিয়ে বললেন--পরবর্তী জন্মে
তুই ঘৃণার দেবতা ঘেঁটু নামে পৃথিবীতে
জন্ম নিবি। পৃথিবীতে ঘেঁটু জন্ম নেবার পর
পৃথিবীতে এলো খোস,পাঁচড়া,চুলকানি।
মর্তের মানুষ এর হাত থেকে বাঁচতে ঘেঁটু
পূজার প্রচলন করলেন। সাধারণতঃ নদীর
ধারে বা ডোবার ধারে এর পুজো করা হয়।
ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তির দিন এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এই ঠাকুরের কোনো মূর্তি নেই। একটা
কেলে হাঁড়ি , ছোট্ট একটা শতশীর্ণ বস্ত্র খন্ড।
তিনটে কড়ি,তিনটে গোবরের পিন্ড।মাটির কেলে হাঁড়িতে গোবরের খন্ডগুলো
রেখে দিয়ে তাতে পুঁতে দেওয়া হয়। এই
পুজোর একটা প্রধান উপাদান ঘেঁটু বা ভাট
ফুল।তাছাড়া লাগে ধান দূর্বা ।

 


এই ঠাকুর বিসর্জনের সময় কলাপাতা দিয়ে
ঘর তৈরি করে তার ভিতরে কেলে হাঁড়ি
রেখে দেওয়া হয়।তারপর পালকির মতন
করে দুজন কাঁধে করে বাড়ি বাড়ি নিয়ে যায়।
মুখে মুখে ছড়া রচনা করে সুর সহযোগে
গাইতে থাকে।গৃহস্থরা চাল,ডাল,টাকা দেয়।
অনেক সময় খোল করতাল সহযোগে এই
ঠাকুর নিয়ে যাওয়া হয়।বাড়ি বাড়ি ঘোরার পর
একজায়গায় এসে মাটির হাঁড়ি ভেঙে দেওয়া
হয়।তা থেকে যে যা পারে কালি নিয়ে যায়।
সেই কাজল কেউ কেউ চোখে সুরমার মতন দেয়।
গোবরেরর খন্ড তিনটে বাড়ির প্রবেশ দরজার
কাছে রাখা হয়।কেলে হাঁড়ির দুপাশে দুটো
ঘন্টা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় যাতে বিষ্ণুর কথা
তিনি না শুনতে পান। দুটো ঘন্টা ঝুলানো থাকে
বলে একে ঘন্টাকর্ণ বলা হয়।এই পুজোর আমেজ
আগের চেয়ে অনেকটা কমে গেছে।এখনও
দুই বর্ধমান,দুই মেদিনীপুর,দুই চব্বিশ পরগনা,
বাঁকুড়া জেলার ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তির দিন
এই পুজো হয়।গৃহকর্তা বা গৃহকর্তী এই পুজো
নিজেরাই করেন।একটানা চর্মরোগের হাত থেকে
বাঁচার জন্য।

 

Comments :0

Login to leave a comment