নতুনপাতা
জানা অজানা
ছড়াসম্রাট ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
তপন কুমার বৈরাগ্য
ছড়াসম্রাট ভবানীপ্রসাদ মজুমদার বাংলা শিশুসাহিত্যে এক স্মরণীয়
ও বরণীয় নাম।ছোটোদের ছড়া কবিতার জগতে তিনি সকলের কাছে পরিচিত।
১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ই এপ্রিল তিনি হাওড়ার দাশনগরের
কাছে দক্ষিণ শানপুরে জন্মগ্রহণ করেন।সেখানেই পড়াশুনা।তারপর
পড়াশুনা শেষ করে শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন।পিতা নারায়ণ
চন্দ্র মজুমদার,মাতা নিরুপমা দেবী। এপর্যন্ত তিনি চল্লিশটার বেশি ছড়াগ্রন্থ
রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছড়াগ্রন্থগুলো--মজার ছড়া,
নাম তাঁর সুকুমার,টাপুর টুপুর ছড়ায় নূপুর,ছড়ায় ছড়ায় সত্যজিৎ,
মিঠে কড়া পশুর ছড়া,ছন্দে গড়া মহান যারা।তিনি অসামান্য
স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছেন সুকুমার রায় শতবার্ষিকী পুরস্কার,
ছোটনদী পুরস্কার ,শিশুসাহিত্য পরিষদ পুরস্কার,ছড়া সাহিত্য
পুরস্কার,সত্যজিৎ রায় পুরস্কার,পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রদত্ত
অভিজ্ঞান স্মারক,সুকান্ত পুরস্কার,সুলেখা পুরস্কার,অমৃতকলম
পুরস্কার,ধুমকেতু স্বর্ণপদক,ভিলেজ টু অ্যাওয়ার্ড।
শতাধিক পুরস্কারে তিনি সম্মানিত।
১৯৮৮ সালের ২রা এপ্রিল কলকাতার অবন মহলে সুকুমার রায়ের পুত্র কিংবদন্তী
ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায় ছড়া সম্রাট ভবানী প্রসাদ মজুমদারের
গলায় স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন।যেটা ছিলো সুকুমার রায় শতবার্ষিকী
পুরস্কার।ছড়া সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ
বাংলা আকাদেমি পুরস্কার ভবানী প্রসাদ মজুমদারের হাতে
তুলে দিয়েছিলেন প্রখ্যাত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
তাঁর অসামান্য জনপ্রিয়তার কারণ চিত্র কল্প সৃষ্টির দক্ষতা,
বিষয়বস্তুর বিভিন্নতা,শব্দচয়নের কুশলতা,নিরন্তর নতুন নতুন
চিন্তাভাবনা ।এমন কোনো বিষয় নেই যা নিয়ে তিনি
ছড়া কবিতা লেখেন নি।এমন কিছু ছড়া আছে যে ছড়া শুনলে
মানুষ না হেসে পারবেন না। এরকম একটা ছড়া পঞ্চম শ্রেণির
পাঠ্য বইয়ে দারোগাবাবু এবং হাবু।তাঁর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য
ছড়া কবিতা-- কবি ,রবীন্দ্রনাথ মানে বাজিমাত,
নজরুল ভাঙে ভয় ভুলবিদ্যাসাগর
জাতির জাগর,বিশ্ববীজয়ী সত্যজিৎ,নাম তাঁর সুকুমার,প্রীতির
ছন্দ বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, হে জীবনানন্দ,কোলকাতার সেকাল-একাল,রক্তে
রাঙা বাংলাভাষা,দূষণজল দমায় বল,দুর্গা আসে দূর গাঁ হাসে,
সুখের শীত দুখের গীত,বৃষ্টি আসে সৃষ্টি হাসে। কবিতা ছড়ার
নামের সাথেও যেন ছন্দের পরশ।স্বরবৃত্ত,মাত্রাবৃত্ত,অক্ষরবৃত্ত,
তিন ধরনের ছন্দেই ছিলো তাঁর অনায়াসে বিচরণ। তিনি সবুজবুড়ো ছদ্মনামে
একটি পত্রিকার শিশুদের পাতা সম্পাদনা করতেন।এই শিশুদের
পাতা সম্পাদনার সময় তিনি অনেক নতুনদের তুলে এনে
খ্যাতির শীর্ষে বসিয়েছেন।
তিনি ছিলেন এক ভালো মনের মানুষ।তাঁর কাছে সব ধরনের
মানুষই ছিল সমান।সকলের সাথে তিনি হেসে খেলে মিশতেন।
তাইতো ভবানীপ্রসাদ মজুমদার সকলের কাছে অতি প্রিয় ছিলেন।
আমরা তাকে হারালাম ২০২৪ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারী বুধবার
রাত দুটোয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়েস হয়েছিল ৭১বছর।
তিনি বিগত কয়েক বছর ধরেই ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন।
মৃত্যুর কয়েকদিন আগে শ্বাসকষ্টের জন্য তাঁকে অ্যাপলো হাসপাতালে
ভর্তি করা হয়।সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি অমৃতলোকে যাত্রা করলেও তাঁর সৃষ্টিশীল কাজ আমাদের
তাঁর কথা বার বার মনে করিয়ে দেবে।
Comments :0