নতুনপাতা
জানা অজানা
মাতঙ্গিনী হাজরার নেতৃত্বে শহিদ ছাত্র পুরিমাধম প্রামাণিক
তপন কুমার বৈরাগ্য
পূর্বমেদিনীপুরের পুরিমাধব প্রামাণিকের নাম আমরা
ক'জন জানি?অথচ তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে
সবচেয়ে কনিষ্ঠতম শহিদ । এই জেলার নন্দকুমার থানার
অন্তর্গত কল্যাণচক গ্রাম।এই গ্রামের গৌরমোহন ইনস্টিটিউশনের
সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন পুরিমাধম প্রামাণিক।সাংসারিক
অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না।কিন্তু যার মধ্যে ছিলো
অফুরন্ত দেশপ্রেম। ১৯৪২ সালের ভারতছাড়ো আন্দোলন
শুরু হয়েছে।চারিদিকে উত্তাল অবস্থা। তারিখটা ২৯শে
সেপ্টেম্বর।মা বাবা সেদিন কিশোর পুরিমাধবকে বিদ্যালয়ে
যেতে নিষেধ করলেন।কিন্তু বালকটি সেদিন বিদ্যালয়ে যাবেই।
মাইকে শুনেছে ৭৩বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরার নেতৃত্বে
তমলুক থানা দখল হবে।ভারতমায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ
করার এই এক অমূল্য সময়।তাই মা বাবার নিষেধ উপেক্ষা করে
বিদ্যালয়ের পথে পা বাড়ালেন। সেদিন বিদ্যালয়ে না গিয়ে
মাতঙ্গিনী হাজরার জন্য পথের পাশে অপেক্ষা করতে লাগলেন।
আজ তমলুক থানা দখল হবে।ছোট্ট ছেলেটা বলে উঠলেন--
বন্দেমাতরম! তমলুক শহরের উপকণ্ঠে মিছিল পৌঁছাল।
মাতঙ্গিনী হাজরার পাশে পাশে হেঁটে চললেন এই ছোট্ট ছেলেটা।
শহরের উপকণ্ঠে মিছিল পৌঁছালে ব্রিটিশ রাজপুলিশ ভারতীয়
দন্ডবিধির ১৪৪ধারা জারি করে সমাবেশ ভেঙে দেওয়ার
নির্দেশ দেন। মাতঙ্গিনী হাজরা দমবার পাত্রী নন। সকলকে এগিয়ে
যাবার নির্দেশ দেন।সকলে মা ভৈঃ রব মুখে নিয়ে বন্দেমাতরম
ধ্বনি তুলে এগিয়ে যেতে লাগলেন। পুরিমাধবের মুখেও বন্দেমাতরম।
মুখে মধুর হাসি।জন্মভূমি মায়ের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতেও সে
হাসিমুখে রাজি।পুলিশ অনবরত গুলি চালাতে লাগল। গুলি এসে
লাগল মাতঙ্গিনী হাজরার কপালে এবং দুহাতে।তবু তিনি বুকে
করে ধরে রাখলেন ত্রিরঙা রঞ্জিত জাতীয় পতাকাকে। এরপর
গুলি এসে লাগল মাতঙ্গিনী হাজরার বুকে।একটা গুলি এ ফোঁড়
ও ফোঁড় করে দিল ছোট্ট ছেলেটার দেহ।মাতঙ্গিনী হাজরার সাথে
তেরো বছরের একটা ছেলের দেহও মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।মৃত্যুর
আগে পর্যন্ত গান্ধীবুড়ির সাথে তাঁরও কণ্ঠে বন্দেমাতরম ধ্বনি।
শহিদ হলো ছোট্ট ছেলেটা।
স্মরণীয় হয়ে থাকল ১৯৪২সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর।
Comments :0