নতুনপাতা
মণ্ডা মিঠাই
আমাদের ছোট গাঁয়
সৌরভ দত্ত
ঝরাপাতার পড়ে যায় নতুন পাতায় পাতায় পল্লবিত বসন্তের ধ্বনি শোনা যায়। ঋতুরাজ বসন্তের হলুদ রাজকীয় বেশভূষা। পল্লী বাংলার গাছে গাছে কচি পাতার উৎসার। পাখির কথা কাকলি। সবুজ ডানায় উড়ে যায় একঝাঁক বসন্তবৌরি। কোকিলের কাকলি লহরী শোনা যায় অহরহ। হলুদ কালোর বেনেবৌ উঁকি মারে পত্রচ্ছায়ার ফাঁক দিয়ে। বসন্তের মাদল বেজে ওঠে দোলের আবীরে। বসন্তের পথে পথে বহুরূপীর দল লোকসংস্কৃতির প্রতীক হয়ে ওঠে। চৈত্রের গাজনের সঙের হরেকরকম সাজসজ্জা ।শাল,শিমুল,পিয়ালের রঙবাহার আকর্ষণ করে শিশু ভোলানাথকে। কিশলয়ের আবেশ মুগ্ধতা দেখা যায় প্রকৃতিকে ঘিরে।কিন্তু বসন্তের ঝরাপাতায় আগুন ধরায় কিছু দুষ্টু মানুষ। খড়িবন,বাদাবন,দেবদারু,মেহগিনি,পলাশের জঙ্গল জ্বলে খাক হয়।পুড়ে যায় ভেপু ব্যাঙ,বাঘরোল,ভাম,খটাশ,শিয়াল। সেই খান্ডবদহনে পুড়ে যায় পতঙ্গ,পিঁপড়ের দল।সবাই অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে সেই লেলিহান শিখার দিকে। জৈববৈচিত্র্য নষ্ট হয়।পাখির ডানার পোড়া গন্ধ নাকে লাগে। প্রকৃতির মাধুর্য নষ্ট করে দেয় বন্যশিকারিদল। বাংলাদেশের বসন্তের ইমেজারি বেশ অন্যরকম। বনে বনে পাপিয়ার ডাক শোনা যায়। হাটে-বাজারে বিক্রি হয়–তরমুজ,খরমুজ,লিচু,ফুটি জামরুল। গাছে গাছে কাঁঠালে ভর্তি হয়ে ওঠে। পুষ্প মঞ্জরিতে জেগে ওঠে নববসন্ত। ধানের খেতে ঢেউ তোলে সবুজের সমারোহ। ভ্রমরের গুঞ্জন,তরুলতার ঝোপে মৌমাছির ইতস্তত ওড়াউড়ি বেশ দর্শণীয় লাগে। মহুয়া ফুলের মাদকতা বিভোর করে মানুষকে। অশোক,কৃষ্ণচূড়ার রঙবাহার একটা স্পন্দনের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের ঝিলগুলিতে জলাভূমিতে শাপলা-শালুক ফোটে। পদ্মার শুষ্ক চর পড়ে থাকে একা। ঈদের উৎসবে সম্প্রীতির মাঙ্গলিক মুর্ছনায় রাম-রহিম একসূত্রে বাঁধা পড়ে। রাতের আকাশে জ্বলে আর নেভে জোনাকির ঝাঁক। মাটির দাওয়ার মাদুর পেতে জিরেন করেন অসিফ মিঞা। পথের পাঁচালির অপু-দুর্গারা বাংলার পথে পথে নিশ্চিন্দিপুরের প্রকৃতিকে আহরণ করে..ঘুরতে থাকে,ঘুরতেই থাকে। ট্রেন চলে যায় কু ঝিক ঝিক শব্দ করে করে। বঙ্গে এক সময় মার্টিনের ট্রেন ছিল –অঙ্গে সার্টিনের জামা।কনকচূড়ধানে তৈরি শৈল ময়রার খইচুর ছিল। আজ সবই স্মৃতিময়… বসন্তের ঘ্রাণ টুকু রয়ে যায়।
Comments :0