নতুনপাতা
গল্প
শিক্ষা
সৌরীশ মিশ্র
স্কুলে চলেছে বিতান বাসে। ড্রাইভারের বাঁদিকে টানা যে সিটগুলো থাকে তারই একটাতে বসে আছে ও। বাসে ভিড় না থাকলেও খালি সিট একটাও নেই।
বিতান ক্লাস ইলেভেন-এ পড়ে। স্কুলে ফার্স্ট ক্লাসেই অমল স্যার ইংলিশ টেস্ট নেবেন আজ। তাই, ব্যাগ থেকে ঐ সাবজেক্টের একটা বই বের করে ওতে চোখ বোলাচ্ছে সে এখন।
বাস থামল হাডকো মোড়ে। হুড়মুড় করে বেশ ক'জন মানুষ উঠল বাসে। বাস আবার ছাড়ল।
বিতান বইটা থেকে চোখ তুলে বাসের ভিতর এদিক-ওদিক তাকাল আনমনে। বাসে এখন দাঁড়িয়ে চলেছেন বেশ কয়েকজন। তারই মধ্যে বিতান দেখল একজন অশক্ত বৃদ্ধও আছেন। উনিও চলেছেন দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে। বৃদ্ধ বিতানের থেকে একটু খানি দূরেই দাঁড়িয়ে।
বিতান ঐ বৃদ্ধকে দেখেই তড়িঘড়ি হাতের বইটা ব্যাগে পুরে সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, "জ্যেঠু, আপনি এখানে এসে বসুন, আমার সিটে।"
বৃদ্ধ ভদ্রলোক কিন্তু সাথে সাথেই বলে উঠলেন, "না, না, তুমি বসো,, বাবা। ছ'-সাতটা স্টপেজ পরেই নেমে যাব আমি।"
"না জ্যেঠু, আপনি বসুন। প্লিজ, না বলবেন না।" বলতে বলতেই বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে গেল বিতান। তারপর বৃদ্ধের হাত ধরে নিয়ে বসাল তার সিটে।
"থ্যাংক ইউ, বাবা।"
"থ্যাংক ইউ-এর কিছু নেই জ্যেঠু। এতো আমাদের মতো ছোটদের কর্তব্য।"
বিতান আর ঐ বৃদ্ধ ভদ্রলোকের মধ্যে কথোপকথনের শেষ ওখানেই। বাসটা চলছে দ্রুত গতিতে এখন। আর, বিতান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ততক্ষণে স্মৃতির সরণি ধরে পৌঁছে গিয়েছে বছর ছয়েক আগের সেই রবিবারের সকালে, যেদিন ও আর ওর বাবা যাচ্ছিল এই রুটের একটা বাসে করে হাওড়া। মনে আছে পরিস্কার বিতানের আজও, ঐ বাসটায় ভিড় ছিল ভালোই। বিতান আর ওর বাবা বসে ছিল বাসের এক্কেবারে পিছনের দিকে। খান্না স্টপেজ থেকে, আজকের ঐ বৃদ্ধের মতোই বয়সী এক বৃদ্ধা উঠেছিলেন বাসে, পিছনের গেট দিয়ে। বিতানের বাবা সেইদিন তাঁর সিট ছেড়ে দিয়েছিলেন ঐ ভদ্রমহিলাকে বসার জন্য। আজ এই চলন্ত বাসে, এই মুহূর্তে তার সামনে বসা ঐ বৃদ্ধ ভদ্রলোককে কষ্ট করে একটু আগে তখন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক লহমায় ছ'বছর আগের ঐ ঘটনাটা মনে পড়ে গিয়েছিল বিতানের। সে আর তাই থাকতে পারে নি। বিতানের বড় ভাল লাগে বাবার কাছে পাওয়া ঐ শিক্ষা সে ভোলেনি আজও এই দেখে। সে ঠিক করে, তার বাবা আজ অফিস থেকে বাড়ি ফিরলে সে এই ঘটনাটার কথা বলবে তার বাবাকে। ও নিশ্চিত, বাবা খুবই গর্বিত হবেন তার জন্য। আর একথাটা ভাবতেই, তার কি যে আনন্দ হল, তা শুধুই বিতানই জানে।
Comments :0