জানা অজানা
কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়ার গল্প
তপন কুমার বৈরাগ্য
কৃষ্ণনগর নদিয়া জেলার সদর শহর।৩৪নঃ জাতীয় সড়ক,
রেলপথ দ্বারা ভারতের যে কোন স্থানে যাওয়া যায়। আর
এখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাবার সময় এখানকার
বিখ্যাত মিষ্টান্ন সরপুরিয়া নিয়ে যেতে কেউ ভুল করেন না।
আর যখনি আত্মীয় স্বজনেরা সেই মিষ্টান্ন খান তখন তারা
কৃষ্ণনগর যাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে থাকেন।
কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া নিয়ে দু' একটি গল্পও আছে।
সময়টা ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি।কৃষ্ণনগরের আশেপাশে
অনেক গোয়ালারা বাস করতেন। তাঁরা প্রচুর দুধ ওয়ালা গাভী
পালন করতেন।এতো দুধ হতো যে সেই দুধের অনেকটা তাঁরা
গরিব দুখিদের দান করে দিতেন। সেই সময় কৃষ্ণনগরের
নেদেরপাড়ায় এক সহৃদয় ব্যক্তি বাস করতেন।যার নাম
সূর্যকুমার দাস।লোকে তাঁকে সরুকুমার দাস বলে ডাকতেন।
একদিন তিনি গোয়ালাপাড়া দিয়ে যাচ্ছেন।দেখলেন গোয়ালারা
বিনা পয়সায় দুধ দান করছেন। সরুকুমারকে গোয়ালারা
দেখতে পেয়ে মাটির এক হাঁড়ি দুধ দিলেন।। বাড়ি ফিরে এসে
সরুকুমার অনেকক্ষণ কি যেন চিন্তা করলেন। তারপরে
বাড়িতে থাকা ঘি,আলমন্ড, এলাচ, চিনিকে কাজে লাগাবার
চিন্তা করতে লাগলেন।প্রথমে কিছুটা দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর
তৈরি করলেন। তারপর বাকী দুধটা জ্বাল দিতে থাকলেন।
এক সময় দুধের উপর পুরু পুরু সর পড়ল। তিনি দুধ থেকে
সব সর তুলে নিলেন।তারপর সেগুলো ঘিয়ে ভেজে নিলেন।
তারপর তার উপর ক্ষীর ও এলাচ ছড়িয়ে দিলেন।আবার
তার উপর কিছুটা সর ছড়িয়ে দিলেন। তারপর চিনি মেশানো
দুধে রেখে দিলেন।পরের দিন দেখলেন অপূর্ব স্বাদের
এক মিষ্টান্ন তৈরি হয়েছে। তার নিজের হাতে আবিষ্কৃত এই
মিষ্টান্ন দেখে তিনি আনন্দে অভিভূত হয়ে গেলেন।
প্রথম প্রথম তিনি মাথায় ফেরি করে এই মিষ্টান্ন বিক্রি করতেন।
রাস্তায় বের হলে দু'এক মিনিটের মধ্যেই এই মিষ্টান্ন বিক্রি
হয়ে যেত।সকলেই তাঁর নামে ধন্য ধন্য করে উঠতেন। অনেক চিন্তা
করে তিনি এই মিষ্টান্নর নাম দিলেন সরপুরিয়া। নিজের নামের সরু
এবং দুধের সর যেন এক হয়ে গেল।নাম দিলেন সরপুরিয়া।
১৯০২ সালে তাঁর পুত্র অধরচন্দ্র দাস অনন্তহরি মিত্র রোডে
প্রথম সরপুরিয়ার দোকান উদ্বোবন করলেন। এখন কৃষ্ণনগরে প্রচুর সরপুরিয়ার দোকান আছে।সরপুরিয়ার জন্য কৃষ্ণনগরের নাম
সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লো।
Comments :0