Editorial Hate Bengali

বিজেপি’র নয়া রূপ বাঙালি ঘৃণা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial

ছাড়ানো হয়েছে পেঁয়াজের আর একটি খোসা। বেরিয়ে পড়েছে হিন্দুত্ববাদী নগ্নতার আরও এক কদর্যরূপ। ধর্মান্ধতার নিরিখে বিজেপি যে শুধু অহিন্দু বিদ্বেষী নয়, একই সঙ্গে অহিন্দি বিদ্বেষীও তা তারা প্রকাশ্যে হাজির করে দিয়েছে গুজরাটে নির্বাচনী প্রচার মঞ্চ থেকে। এ যাত্রায় তারা উগরে দিয়েছে বাঙালি বিদ্বেষের বিষাক্ত রেপ্লিকা। 

 

ভারতের নাগরিক দশ কোটির বেশি বাংলাভাষীকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে মায়ানমার  থেকে আসা শরণার্থী রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে এক সারিতে। এমনকি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয়েছে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস নিয়েও। বাঙালিদের প্রিয় খাদ্য মাছ। আর গুজরাটিদের বড় অংশ নিরামিষাশী। তাই গুজরাটিদের কাছে বাঙালিদের হেয় প্রতিপন্ন করতে মাছ খাওয়া নিয়ে তুচ্ছ-তা‍‌চ্ছিল্য মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে। আর একাজে  এগিয়ে দেওয়া হয়েছে দলের নেতা প্রাক্তন সাংসদ অভিনেতা পরেশ রাওয়ালকে। এ যাত্রায় কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপি সরকারের অপদার্থতা আড়াল করতে জাতিগত ও ভাষাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিভাজনের রাজনীতিকে উসকে দেওয়া হয়েছে। লক্ষণীয় এমন এক জঘন্য অপরাধের পরও প্রধানমন্ত্রী সহ দলের শীর্ষ নেতারা নীরব। যেন পরোক্ষে সমর্থনেরই বার্তা দিচ্ছে।

 

 


রা‌ওয়ালের এই বাঙালি বিদ্বেষী ভাষণকে মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়েছে বলে হালকা চলে ধরে নেওয়া যাবে না। এটা যে তিনি সচেতনভাবে বলেছেন সেটা বুঝতে বেশি মাথা ঘামাবার প্রয়োজন নেই। গুজরাটে বিজেপি জিতবে যতই দাবি করুক না কেন সেটা যে মোটে সহজসাধ্য নয় তার  প্রমাণ দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সহ কার্যত গোটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এবং দলের নেতারা কার্যত গুজরাটে পড়ে আছেন। পরিস্থিতি যে ঘোরালো সেটা আন্দাজ করেই বিজেপি ঝুঁকি নিতে চাইছে না। আসলে গুজরাট নির্বাচনের সঙ্গে বিজেপি’র ক্ষমতাসীন থাকার বিষয়টি জড়িয়ে গেছে। গুজরাটে হারলে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে মোদীর পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে। তাই সামগ্রিকভাবে বিজেপি’র জয় এবং মোদীর তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়া অনেকটা নির্ভর করছে জয় পরাজয়ের ওপর।

 


২০১৪ সালে গুজরাট মডেলের সোনালি প্যাকেজ দেখিয়ে তামাম  ভারতবাসীকে বোকা বানানো সহজ হলেও গুজরাটে গুজরাট মডেল অকেজো। ঝাঁ চকচকে বড় বড় রাস্তা, ব্রিজ, ফ্লাইওভার, বড় বড় কারখানা, শপিংমল দেখিয়ে গুজরাট মডেলের প্যাকেজ সাজানো যায় কিন্তু গুজরাটের মানুষের তাতে পেট ভরে না। তিন দশক ধরে গুজরাট শাসক করে উন্নয়নের ফোয়ারা ছুটিয়ে রাজ্যবাসীর রুজি নিশ্চিত করতে পারেনি। কাজের অভাব নতুন  প্রজন্মের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। রান্নার গ্যাস, বিদ্যুৎ,  সার, জ্বালানি খরচ এতোটাই বেশি যে  মানুষ চোখে সরষেফুল দেখছেন। অর্থাৎ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। বস্তুত গুজরাট দাঙ্গার পর তীব্র বিভাজন ও মেরুকরণের আবহে বিরাট ভোটে বিজেপি জিতলে পরবর্তীকালে প্রতিটি নির্বাচনে বি‍‌জেপি’র শক্তিক্ষয় হয়েছে। গত বিধানসভায় তো প্রায় হারতে হারতে জিতেছে।

 


এই অবস্থায় ভুল করেও আর গুজরাট মডেলের কথা উচ্চারণ করছে না। ফিরিস্তি দিচ্ছে না উন্নয়নের। বিপরীতে বিরোধীরা প্রমাণ ইস্যু করেছে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, ফসলের দাম না পাওয়া, রোজগার না  বাড়াকে। এইসব জ্বলন্ত সমস্যার কোনও জবাব নেই বি‍‌জেপি’র কাছে। তাই সেই ধর্মীয় বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে বিভাজনের রাজনীতিকেই আঁকড়ে ধরতে বাধ্য হচ্ছে। ঘুরে ঘুরে উসকে দিচ্ছে দাঙ্গার স্মৃতি। এতকরেও যখন কাটছে না তখন মুসলিম বিদ্বেষের পাশাপাশি নতুন উপাদান  যোগ করেছে বাঙালি ‍‌বিদ্বেষ। লক্ষ্য জীবন জীবিকার সঙ্কট চাপা দিয়েও দৃষ্টি অন্যদিকে  ঘোরানো। এবার বাঙালি বিদ্বেষকে আশ্রয় করলেও আগামীদিনে যে ওড়িয়া, তেলুগু, তামিল, মালায়ালাম বিদ্বেষী হয়ে উঠবে না তার গ্যারান্টি নেই।

Comments :0

Login to leave a comment