North Bengal Rally

শ্রমজীবিদের মহামিছিল শিলিগুড়িতে

জেলা

North Bengal Rally

অনিন্দিতা দত্ত

প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করেই বুধবার ঐতিহাসিক ভারত ছাড়ো আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে শ্রমজীবি মানুষের মিছিল থেকে আগামীদিনে দুর্বার আন্দোলন জারি রাখার বার্তা দেওয়া হলো। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের বিভিন্ন অংশের আক্রান্তদের নিয়ে আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দাবিতে সোচ্চার হলেন উত্তরবঙ্গের সাত জেলার শ্রমিক কর্মচারীরা। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহের আহ্বানে ‘শিলিগুড়ি চলো’ শ্রমিক কর্মচারীদের অবস্থান ও সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান, আগামীদিনে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 


ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল, প্রতিরক্ষা শিল্প, বন্দর, বিদ্যুৎ, কয়লা, ইস্পাত সহ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা বেসরকারীকরণ বন্ধ করা, শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী চারটি শ্রম কোড বাতিল, নতুন শিল্প স্থাপন করে গ্রাম ও শহরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি দাবিতে এদিন দুপুরে দুর্নীতিপরায়ন, গণতন্ত্র হত্যাকারী রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আওয়াজ উঠেছে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহের উত্তরবঙ্গের সাত জেলার জমায়েত ও মিছিল থেকে। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও ফ্যাসিস আরএসএসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়। তরাইয়ের পুটিংবাড়ি, মোরগাঁ, গুলমা, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, মেরিভিউ, অটল সহ বেশ কিছু বাগান ও ডুয়ার্সের কাদম্বিনী, ফালাকাটা, এথেলবাড়ি সহ অনেক বাগানের চা শ্রমিকরাই এদিন হাজির ছিলেন। এদিন সকালের পর থেকেই সাত জেলার শ্রমিক কর্মচারীরা জড়ো হচ্ছিলেন মহানন্দা সেতুর নীচে। দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ সেখান থেকেই শুরু হয় সেই মহামিছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্ষেত্র ও দেশের সম্পদ বিক্রির বিরুদ্ধে, জমির অধিকার ও ন্যায্য মজুরি আদায়ের দাবিতে সোচ্চার মিছিল এগিয়ে চলে শিলিগুড়ির প্রানকেন্দ্র হিলকার্ট রোড ধরে। মিছিল গিয়ে শেষ হয় বাঘাযতীন পার্কের সামনে। এরপর সেখানে মঞ্চ বেঁধে অবস্থান ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 


অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে পাশে রেখে সিআইটিইউ রাজ্য সভাপতি জিয়াউল আলম বলেন, গোটা দেশের মানুষ আক্রান্ত। এই মুহুর্ত্বে মণিপুর জ্বলছে। হরিয়ানায় জাতিদাঙ্গা বিদীর্ন। দৃঢ়হস্তে এই দাঙ্গাকে দমন করতে হবে মোদী সরকারকে। তা না হলে মণিপুর সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সারা দেশে আইনের শাসন বজায় রাখতে মোদী সরকার ব্যর্থ। একটার পর একটা আইন পার্লামেন্ট পাশ করে আদিবাসী ও উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের জমির অধিকার নসাৎ করে দিতে চাইছে সরকার। শ্রমিক কর্মচারীদের দাবিদাওয়া, শূন্যপদ পূরণ করা সমস্ত ক্ষেত্রে মোদী সরকার ব্যর্থ। প্রতিনিয়ত জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সমস্ত ক্ষেত্রে সরকারি শূন্যপদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক কর্মচারীদের স্বার্থে কেন্দ্র বা রাজ্য দুই সরকারেরই কোন ভূমিকা নেই। সরকারের ভূমিকায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ সমস্ত কিছু চলে যাচ্ছে আদানি আম্বানিদের মতো পূঁজিপতিদের হাতে। দেশের শ্রমজীবি মানুষের ওপর ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ নামিয়ে এনেছে সরকার। ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ এই স্লোগান তুলে ক্ষমতায় আসলেও মোদী সরকারের সময়কালে এক অসহনীয় বেকারত্বের জ্বালায় জ্বলছে যুব সমাজ। সরকারী বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত প্রত্যেকের জীবনেই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মোদী সরকারের শাসনকালে আক্রান্ত শ্রমিক কর্মচারীদের জীবনজীবিকা। বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায়, জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের জীবনজীবিকার কোন উন্নতি দেখতে পারছেন না। অতীতে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি দেশবাসীকে। ধর্ম বর্নের নামে বিভাজনের ঘৃন্য রাজনীতি করছে সরকার। প্রতিদিন গণতন্ত্র বিপন্ন হচ্ছে। প্রশাসনকে নগ্নভাবে ব্যবহার করে সাধারণের ওপর দমননীতি চাপিয়ে দিচ্ছে সরকার। তাই উত্তরের জেলাগুলির সমস্ত শ্রমিক কর্মচারী সংগঠন এক হয়ে ‘দেশ বাঁচাও, রাজ্য বাঁচাও’ স্লোগান তুলে শিল্প ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্ষেত্র বাঁচানোর লড়াইতে সামিল হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। 

ছবি - রাজু ভট্টাচার্য

Comments :0

Login to leave a comment