Foundation Day

মানুষের প্রত্যাশার উপযোগী হতে হবে পার্টিকে

সম্পাদকীয় বিভাগ

বর্তমানে প্রতিদিনই দেশবাসীর দুর্বিষহ অবস্থার নতুন নতুন প্রমাণ মিলছে নানা সূচকে। দেশের অর্থনীতিকে বিজেপি সরকার এমন গাড্ডায় ফেলেছে যে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে তার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। ভারতে সম্পদের বৈষম্য ও তা কীভাবে মুষ্টিমেয় ধনীদের হাতে কুক্ষিগত হচ্ছে তা আগেই অক্সফামের সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছিল। এমনকি কোভিড মহামারীতে লকডাউন পর্বে যখন দেশবাসীর আয় কমেছে তখন অক্সফামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের ধনীতম ৯৮ জনের মোট সম্পত্তির পরিমাণ দেশের দরিদ্রতম ৫৫ কোটি মানুষের মিলিত সম্পত্তির সমান হয়ে গেছে। এখন বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের পরিমাপে দেখা যাচ্ছে ভারতের স্থান আরও তলানিতে নেমেছে। ১২৩টি দেশের তালিকায় ১০৭ তম স্থানে রয়েছে ভারতের নাম, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সবার নিচে। ২০১৮-২০ সালে ভারতে ১৪.৬ শতাংশ মানুষ অপুষ্টির স্বীকার ছিলেন। ২০১৯-২১ সালে সেই হার বেড়ে হয়েছে ১৬.৩ শতাংশ। দেশে প্রায় ২২কোটি ৪৩ লাখ মানুষ অপুষ্টির শিকার। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে বেকারী, মজুরি হ্রাস, গ্রামীণ সঙ্কট, মূল্যবৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে খাদ্যসামগ্রীতেই। খাদ্যসামগ্রীতে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৬২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এই সব সঙ্কটের কারণে শুধু ক্ষুধা ও অপুষ্টি নয়, বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য জানাচ্ছে ২০২১ সালে যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন তাঁদের মধ্যে ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন গরিবের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
অথচ মোদী সরকার অপুষ্টি দূর করায়, কৃষিতে ও খাদ্যে ভরতুকি দিতে নারাজ। বামপন্থীরা বারেবারে দাবি করা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর মতে এগুলো হরির লুটের বাতাসা বিতরণের মতো। জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্ব অস্বীকার করে মোদী নিজেই বলেছেন, ‘এই রেউড়ি সংস্কৃতি উন্নয়নের পক্ষে বিপজ্জনক।’ আদানিদের ব্যাঙ্ক ঋণ মাফ করার বেলায় প্রধানমন্ত্রীর আপত্তি নেই, তার বেলা তিনি দামী বিদেশী চকোলেট বিতরণে রাজি। কিন্তু গরিবকে ভরতুকি দিতে হবে শুনলেই মোদী রেউড়ি সংস্কৃতি দেখে আঁতকে ওঠেন। এই সরকারকে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবৎ পরামর্শ দিয়েছেন জনসংখ্যা নীতি প্রসঙ্গে বিতর্ক করতে। দেশজুড়ে যখন বেকারীর সমস্যা, তখন সরকার মানুষকে কাজ দেওয়ার বদলে জন্মকেই দোষারোপ করছে, এটাই দক্ষিণপন্থা। কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে উৎপাদনের শক্তি হিসাবে বিবেচনার বদলে তাকেই সমস্যার জন্য দায়ী বলে গাল পাড়া হচ্ছে। 
দেশজুড়ে অর্থনৈতিক ও মানুষের জীবনজীবিকার সঙ্কটকে মোকাবিলার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল বিজেপি সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করছেন। জাতি ধর্ম ভাষা ইত্যাদির নাম করে ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতি দিয়ে জনজীবনের মূল সমস্যাগুলি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ধর্মের নামে মানুষকে বিভাজন করে হিংসার বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে তারা, এখন সারা দেশে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেও আরেকরকম বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে। প্রকৃত সঙ্কটগুলির থেকে নজর সরিয়ে এক ভাষার গরিব মানুষকে আরেকভাষার গরিব মানুষের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। মানুষ যাতে সরকারের নীতিগুলির প্রতিবাদে শামিল না হতে পারে তার জন্য সবরকমের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারগুলি খর্ব করা হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘণ করে মুখ বন্ধ করানোর চেষ্টা হচ্ছে। 
দেশজুড়ে জনগণের ওপরে এই আক্রমণের ভুক্তভোগী পশ্চিমবঙ্গের মানুষও। তার ওপরে এরাজ্যের শাসকদলের নেতৃত্বে দুর্নীতি ও দুষ্কৃতী যোগের মারাত্মক প্রভাব যুক্ত হয়ে বোঝা আরও ভারী করেছে। গত কয়েকদশকে উদার অর্থনীতিতে সমাজের সব ক্ষেত্রে অর্থের প্রভাব ও দাপট বেড়েছে। বাংলার মাটিতে বামপন্থী আন্দোলনের হাত ধরে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের যে প্রভাব তাকে ছাপিয়ে রাজনীতিতে নব্য ধনী ও বিত্তশালীরা ক্রমশ মাথা তুলেছে। এমনকি সমাজ ও রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবী, সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজের যে ভূমিকা তাকেও ক্রমশ গুরুত্বহীন করে দিয়েছে বিত্তের দাপট। কেউ কেউ এরাজ্যের বিধানসভায় লোকসভায় ‘বাম শূন্য’ বলে উল্লাস করছে, কিন্তু এই ঘটনাক্রমের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে কালো টাকার প্রভাব ও বিত্তশালীদের রাজনৈতিক পরিসর দখল সম্পর্কে চুপ করে রয়েছে। আসলে এই সময়ে দু’টি প্রক্রিয়া একই সঙ্গে ঘটেছে, বিত্তশালীরা ক্ষমতাশালী রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন এবং রাজনীতিকরা বিপুল বিত্তশালী হয়ে উঠেছেন। দুর্নীতি-দুষ্কৃতী যোগে এই রাজনৈতিক পরিভ্রমণটি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, বর্তমান এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতির কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে। আজকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সময় থেকেই রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তৈরিতে কমিউনিস্টরা অবদান রেখেছেন। মার্কসবাদী লেনিনবাদী দৃষ্টিতে তাঁরা সর্বদা মানুষকে রাজনীতি সচেতন করেছেন, একদিকে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের দাবিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের রাজনৈতিক আঙিনায় যুক্ত করেছে, আবার একই সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের রাজনীতি সঞ্জাত উচ্চ মূল্যবোধকে ভারতীয় সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই কারণেই আমরা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও দেখেছি অনেক বিত্তশালী রাজনীতিকও আদর্শের জন্য সম্পত্তি দান করে দিয়েছেন সমাজে। এখন এই সামাজিক রাজনৈতিক মূল্যবোধগুলি অস্বাভাবিক লাগতে পারে, কারণ রাজনৈতিক নৈতিকতা ধ্বংস হওয়ার কারণে রাজনীতিকদের সম্পদ বানানো আর টাকার পাহাড় দেখাই স্বাভাবিক বলে চালানো হচ্ছে। মিডিয়াকে ব্যবহার করে পরিবর্তিত সামাজিক বোধে রাজনীতিকদের সেলিব্রিটি সমতুল করে প্রদর্শন ও প্রচার করা হচ্ছে। রাজনীতিকরা কতটা জনজীবন সংশ্লিষ্ট তা মূল্যায়নের বদলে জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাঁদের প্রতিপত্তি ভিত্তিক বিলাসিতার মোহজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। এভাবে রাজনীতি ও প্রশাসনে নতুন সম্পদ বা মূল্য যুক্ত করা হয়নি, বরং রাজনীতির প্রতি মানুষের নির্ভরতাকে ব্যবহার করে তার থেকে মূল্য নিংড়ে নিয়ে একাংশের রাজনীতিকদের ও প্রশাসকদের আর্থিক সম্পদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। 
উদার অর্থনীতির প্রভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয়ে যেনতেন প্রকারে আর্থিক প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা আদায় দস্তুর হয়ে গেছে। কমিউনিস্টদের প্রভাবে মানুষের মধ্যে যে বোধ তৈরি হয়েছিল তাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদি মানুষের অধিকার হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল। কিন্তু এখন সেগুলিকে অধিকারের বদলে সুবিধা বা সুযোগ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এসবের কারণে রাজনীতিতে প্রথমেই বলি হয়েছে মতাদর্শ। মতাদর্শ ভিত্তিক দলীয় ব্যবস্থার গুরুত্ব তো পরের কথা, এখন রাজনীতিতে দলটাই বাহুল্য হয়ে গিয়েছে ঘনঘন দলবদলের জেরে। দল বড় কথা নয়, লাগামহীন দুর্নীতির জেরে যে যত বড় মাতব্বর, সেই ততো বড় তালেবর। লুটে খাওয়ার এই রাজনীতির ব্যবস্থায় গ্রাম স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত এখন এই তালেবররাই শেষ কথা, মতাদর্শের কোনও মূল্য নেই। 
এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজনৈতিক শিক্ষা ও আদর্শগত বোধকেই ধারালো করতে হবে, কারণ বামপন্থীদের কাছে এটা মতাদর্শের ভিত্তিতেই একটি রাজনৈতিক লড়াই। কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসই দেখিয়ে দিচ্ছে যে আদর্শগত প্রশ্নে তারা কখনো সমঝোতা করেনি। সিপিআই(এম)’র বিগত কংগ্রেস এবং রাজ্য সম্মেলন থেকেও সেই লক্ষ্যেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। স্থির হয়েছে, আমাদের পার্টির সর্বস্তরের সদস্য ও নেতৃত্বকে আরও বেশি করে রাজনৈতিক চর্চায় ধারালো করতে হবে, পার্টি সংগঠনে পাঠচক্র ও শিক্ষাশিবিরের পাশাপাশি আত্মশিক্ষা ও আত্মপাঠে উৎসাহ জাগিয়ে তুলতে হবে। আমাদের পার্টির কর্মী, সমর্থক ও দরদিদের মধ্যেও এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসাহ সঞ্চারিত হয়েছে। শারদোৎসবে রাজ্যজুড়ে বইয়ের স্টলগুলিতে তার প্রতিফলন দেখা গেছে। একদিকে যখন সামগ্রিকভাবে বই পড়ার অভ্যাস কমছে, স্কুল কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনকি পাঠাগারগুলিও সঙ্কটে তখন প্রগতিশীল রাজনৈতিক শিক্ষায় এই আগ্রহ উৎসাহজনক। এটা ধরে রেখে আরও অগ্রসর হতে হবে। শুধু পাঠ নয়, পাঠাগার আন্দোলনকেও পুনঃসংগঠিত করতে হবে। বাম আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মীদের শুধু সংখ্যা বৃদ্ধিতেই সন্তুষ্ট থাকলে হবে না, তাকে গুণমান বৃদ্ধিতেও সহায়ক হতে হবে।

চলতি সময়কালে রাজ্যে গণআন্দোলনে যে বাড়তি উদ্দীপনা ও অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে তার তীব্রতা আরও বাড়াতে হবে। এই সময়কালে মেহনতী মানুষের কর্মহীনতা, পুষ্টির অভাব সহ জীবন যন্ত্রণা বেড়েছে, একটা বড় অংশের মানুষ অন্নহীন হয়ে পড়েছেন, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও শিক্ষাঙ্গন থেকে অনেকে ছিটকে গেছেন, অনেকে মজুরি পাচ্ছেন না, অনেকে গৃহহীন হয়ে আছেন। এরই মধ্যে লাগামহীন দুর্নীতির শিকারও হয়েছেন। কারো প্রাপ্য ভাতা লুট হয়ে গেছে, কারো নাম আবাস যোজনার তালিকা থেকে বাদ হয়ে গেছে। স্থানীয় এলাকার এই সব জীবনজীবিকার সমস্যা এবং দাবিগুলি আন্দোলনে মুখ্য করে তুলতে হবে। এই সময়কালে কৃষিজীবী মানুষ, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সঙ্কট বেড়ে চলায় কেউ ইনফর্মাল গৃহভিত্তিক কাজে নামতে বাধ্য হয়েছেন, কাজ না পেয়ে কেউ টোটো চালাতে নেমেছেন, কেউ ডেলিভারি বয়ের কাজে নেমেছেন। আন্ডার এমপ্লয়মেন্ট ব্যাপক বেড়েছে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও আরক্ষা বিভাগে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি নিয়োগে ঠিকা নিযুক্তি, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। 
এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকে প্রসারিত করতে হবে। পার্টির প্রতি বিভিন্ন অংশের মানুষের যে চাহিদা ও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, পার্টিকে তার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এই যন্ত্রণাময় পরিস্থিতিতে মানুষ যেভাবে পার্টিকে দেখতে চাইছে পার্টিকে সেইভাবে হাজির করতে হবে। পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসে এই শপথ আমাদের সবাইকে নিতে হবে। তার জন্য পার্টির শক্তি ও সামর্থ্য আরও বহুগুণ বাড়াতে হবে। পার্টিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে এবং আরও অনেক সক্ষম সক্রিয় সহকর্মীকে শামিল করতে হবে। নানা কারণে একাংশের কর্মী সমর্থক দরদি যাদের বিশ্বাস টলে গিয়েছিল, যাঁরা নড়ে গিয়েছিলেন, যাঁদের সমর্থন আমাদের পাশ থেকে সরে গিয়েছিল, যাঁরা আমাদের আচার আচরণ ব্যবহারে কিছুটা ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত হয়েছিলেন সেই সব অংশকেও আবার উত্তাল আন্দোলন সংগ্রামে সহযাত্রী করে তুলতে হবে। বৃত্তকে আমরা বড় করতে বলেছি। তার অপব্যাখ্যায় যেন কোনও ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ না থাকে পার্টির কর্মী ও নেতৃত্বের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনও ব্যক্তি পছন্দ ও অপছন্দ না দেখে যাঁরা মেহনতী মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধে শামিল হননি তাঁদের সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপনের কথা বলা হচ্ছে। যাঁদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আছে, যাঁরা রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষে যোগ দেয়নি, মেহনতী মানুষের বিরুদ্ধে লুট ও দুর্নীতিতে যুক্ত হননি তাঁদের সহযাত্রী করে তুলতে হবে। এই সব অপগুণ সম্পন্নদের বিরুদ্ধে কোনও আপসকামিতার প্রশ্ন উঠছে না। এভাবে বৃত্ত বড় করার মধ্য দিয়ে গণসংগ্রামকে তীব্র করার জন্য আমাদের পার্টির শ্রেণিগত বিন্যাস এবং সামাজিক ন্যায়ের দাবির বিষয়গুলিকেও মাথায় রাখতে হবে। এর জন্য রাজনৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি শ্রেণি ও সামাজিক বিন্যাস, লিঙ্গ সাম্য, ভাষা-জাতি-আদিবাসী ইত্যাদির বিন্যাস ঠিক রাখতে হবে, সমগ্র সংগঠনকে এই বিষয়গুলিতে সংবেদনশীল করে তুলতে হবে। 
আমাদের সমাজে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁদের সমস্যা ও চাহিদা বুঝে আমাদের সংগঠন থেকে যাঁরা বয়সজনিত কারণে অব্যাহতি নিয়েছেন তাঁদেরকেও সামাজিক সাংস্কৃতিক কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করতে হবে। আবার গত তিন বছর ধরে মহামারীর কঠিন সময়ে তরুণ প্রজন্মের যে অংশ লাগাতার আন্দোলন সংগ্রামে আছে তাদের সংগঠনে উপযুক্ত স্থান দিতে হবে। সর্বক্ষেত্রেই তরুণ অংশের মধ্য থেকে সর্বক্ষণের কর্মী নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। নানা পেশায় বৃত্তিতে অভিজ্ঞতা সম্পন্নদের মানুষজন এগিয়ে আসছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পার্টি সংগঠন, গণসংগঠন ও গণসংগ্রামে আরও পেশাদারি দক্ষতা নিয়ে আসতে হবে। প্রচার ও প্রসারের জন্য সামাজিক মাধ্যমে আমাদের উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে তুলতে হবে। মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও সুকুমার বৃত্তিগুলির বিকাশে শিল্প, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সাহিত্য সহ নানা সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত মানুষদের সক্রিয় করে তুলতে হবে। স্থানীয় দাবি তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সংস্কৃতি, ভাষা, উপভাষা, রীতিনীতি, পরম্পরা, লোকাচার ও দেশাচারকে মাথায় রেখে আমাদের কর্মকাণ্ডের পরিব্যাপ্তি ঘটাতে হবে। এককথায় এটাই ৩৬০ ডিগ্রি আন্দোলনের চেহারা; যেখানে আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি গঠনমূলক কাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, শিল্প সাহিত্য ও বিকল্প কর্মসংস্থানে ভাবনা উদ্রেক করা যেতে পারে। এগুলিই আজকের বাংলাকে বাঁচানোর পূর্ব শর্ত এবং পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসে দাঁড়িয়ে এমন সমস্ত কর্মকাণ্ডের উপযোগী উদ্যমী ও উদ্যোগী সংগঠন গড়ে তোলার শপথই আমাদের সবাইকে নিতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment