Editorial

পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


আরএসএস-বিজেপি’র পরিকল্পনা অনুযায়ী বীরেন সিং সরকার চার মাসের নিরলস চেষ্টায় মণিপুরের অধিবাসীদের জাতিগত ও ধর্মগতভাবে বিভাজন সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে। নিঃসন্দেহে মোদী-শাহদের কাছে এটা বড়সড় সাফল্য এবং গর্ব করার মতো ঘটনা। ভারতের আর কোনও রাজ্যে এমনটা সম্ভব হয়নি। একটা রাজ্যকে শুধু ভৌগোলিক দিক থেকে নয়, জাতিগত ভাবেও পুরোপুরি আলাদা করে মাঝখান দিয়ে বিভাজন রেখা টেনে দেওয়া হয়েছে। একদিকে ইম্ফল উপত্যকার সমতল এলাকায় সংখ্যা গরিষ্ঠ মেইতেইরা, যারা প্রধানত হিন্দু। অন্যদিকে পাহাড় ও বনাঞ্চলে সংখ্যালঘু আদিবাসী কুকিরা, যারা প্রধানত খ্রীষ্টান। সেই ৩মে জাতিগত বিদ্বেষ ও দাঙ্গা বাধিয়ে দেবার পর থেকে কুকি প্রধান এলাকা থেকে মেইতেইদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি চলছে মেইতেই এলাকা থেকে কুকিদের উৎখাতের প্রক্রিয়া। চার মাস ধরে এই প্রক্রিয়া চলার পর ৩ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বীরেন সিং সরকারের পুলিশ সরকারি নির্দেশে ইম্ফল থেকে শেষ ১০ কুকি পরিবারের ২৪জন সদস্যকে নিজেদের বাড়ি থেকে কার্যত অপহরণ করে জোর জবরদস্তি গাড়িতে তুলে ছেড়ে দিয়ে এসেছে কুকিপ্রধান এলাকায়। যুগ যুগ ধরে যেখানে বহু কুকি উপজাতির বাস সেখান থেকে তারা উচ্ছেদ হয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। যাবার সময় তাদের যাবতীয় জিনিসপত্র, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ও নথিপত্রও সঙ্গে নেবার সুযোগ পাননি। চার মাসের চেষ্টায় বিজেপি সরকার সমগ্র ইম্ফলকে পুরোপুরি কুফিমুক্ত মেইতেই এলাকা করতে সক্ষম হয়েছে।
এই ঘটনা থেকে এটা জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে গেছে জাতি দাঙ্গায় মণিপুরে লাশের মিছিল ও ধ্বংসলীলা চলতে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী কেন দীর্ঘ নীরবতা পালন করে গেছেন। একবারের জন্যও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব পক্ষের কাছে আবেদন জানাননি। উদ্বেগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। হিংসা বন্ধে কঠোর মনোভাবও প্রকাশ করেননি। নীরবতার মধ্য দিয়েই যেন পরোক্ষ বার্তা দিয়েছেন যেমন চলছে চলুক। হিংসা বন্ধে চরম অপদার্থতা প্রমাণের পর যখন বিভিন্ন মহল থেকে বার বার মুখ্যমন্ত্ররী অপসারণের দাবি ওঠে তখন কেন্দ্রীয় শাসক বর্গ বীরেন সিংয়ের পক্ষেই সওয়াল করেন। সংসদে দাঁড়িয়ে স্বয়ং অমিত শাহ জানিয়ে দেন বীরেন সিং নাকি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মতোই কাজ করছেন। তার অর্থ দাঁড়ায় অশান্তি ও দাঙ্গা পর্বে বীরেন সিং যা যা পদক্ষেপ নিয়েছেন সবটাই কেন্দ্রের নির্দেশে অথবা কেন্দ্রের ইচ্ছায়। তাহলে চার মাস ধরে মণিপুরে ঘটমান বর্বরতার পেছনে মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে কেন্দ্রের নীরবতা বা নিষ্ক্রিয়তাই দায়ী। মোদী-শাহরা কি এমনটাই চেয়েছেন।
এই যে সরকারি হিসাবে দু’শতাধিক মৃত্যু, হাজার হাজার ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত আহত, লক্ষ লক্ষ গৃহছাড়া, অর্ধলক্ষাধিক ত্রাণশিবিরে, গোটা রাজ্যে এমন অসহায়-বিপন্নতা সবটাই ছিল বিভাজনের পরিকল্পিত কৌশল। এইভাবেই আরএসএস ক্ষমতা দখল ও রক্ষার রাস্তা দেখায়। মণিপুরকে তৈরি করে বিভাজনের রাজনীতির গবেষণাগারে। একসঙ্গে বসবাসের, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ও সমন্বয়ের ধারাকে চৌপাট করে দিয়ে মানুষকে ভাগ করে একে অপরকে শত্রু বানিয়ে লুটের রাজত্ব কায়েম চায় বিজেপি। এই বিজেপি দেশের যে কি সর্বনাশ করতে চলেছে মণিপুর তার নমুনা মাত্র।

 

Comments :0

Login to leave a comment