Burdwan

‘বাড়ি বিক্রি করে চলে যান’

রাজ্য

শঙ্কর ঘোষাল: বর্ধমান 
 

ধর্ষিতা, নির্যাতিতা মহিলাকে নিরাপত্তা দিতে না পেরে বাড়ি বিক্রি করে চলে যেতে বলল তৃণমূল সরকারের পুলিশ। আগেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই ফতোয়া দেওয়া হয়েছে নির্যাতিতার পরিবারকে। বর্ধমান জেলার দলদাস পুলিশ শাসকদলের সেই ফতোয়াকেই পালন করতে বলল নির্যাতিতার পরিবারকে। 
শনিবার দেওয়ানদিঘি থানার মির্জাপুরে ধর্ষিতা মহিলার স্বামী বাড়িতে ঢুকতে গেলে তাঁকে আবার মারধর করা হয়। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূল নেত্রী কাকলি তা’র অনুমতি ছাড়া নাকি তিনি বাড়িতে ঢুকতে পারবেন না। এদিন নির্যাতিতা মহিলা বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি আগেই অভিযোগ করেছিলেন যে একমাস আগে তৃণমূলের এক মাতব্বর তাঁকে ধর্ষণ করেছে। তিনি সেদিনই বর্ধমান মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করছিলেন। কিন্তু সেই ধর্ষক তৃণমূল নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার তো করেইনি, উলটে থানায় অভিযোগ তুলে নেবার জন্য ওই মহিলা ও তাঁর ছেলেকে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী নগ্ন করে বেদম প্রহার করে। ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে তিনি ও তাঁর ছেলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসক মহিলার রক্তাক্ত চেহারা দেখে বয়ান নিয়ে ইনজুরি রিপোর্ট তৈরি করেন। 
কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েও শাসকদলের চাপে ইনজুরি রিপোর্ট দেওয়া হয়নি আক্রান্ত পরিবারকে। পুলিশের মদতে ধর্ষকও জামিন পেয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও এখন গোটা পরিবার নিজেদের বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না। হাসপাতালেই তাঁরা রাত কাটাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আক্রান্ত পরিবারের বাড়ি ভাঙচুরও করা হয়েছে। পুলিশ শাসকদলের চাপে নির্যাতিতাকে বলছে, ‘‘আপনি বাড়ি বিক্রি করে চলে যান, আপনাকে ওরা বাঁচতে দেবে না।’’ পুলিশের এই ভূমিকাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেওয়ানদিঘির মানুষ।  দেওয়ানদিঘি থানার মির্জাপুরে জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম করেছে শাসকদল। খুন, ধর্ষণ রাহাজানি নিত্যদিনের ঘটনা। তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদী মানুষকে হুমকি দেয়। এখানে বাস করতে হলে শাসকদলের নেত্রী কাকলি তা এবং তাঁর ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর পায়ে আত্মসমর্পণ করে বাঁচতে হবে। 
প্রসঙ্গত, এই মির্জাপুরেই বাড়ি সিপিআই(এম) নেতা শহীদ কমরেড প্রদীপ তা’র। ২০১২ সালে একসাথে এই তৃণমূলের গুন্ডাদের হাতেই নৃশংসভাবে খুন হন দুই পার্টিনেতা কমরেড প্রদীপ তা ও কমরেড কমল গায়েন। তারপর থেকে এই অঞ্চল দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল। পুলিশ ও তৃণমূলের গুন্ডাদের যৌথ আঁতাতে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আজও শাস্তি পায়নি এই দুই পার্টিনেতার খুনিরা। 
একমাস আগে মির্জাপুরের এই মহিলা ধর্ষিতা হন। এই ধর্ষণের পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, এই মহিলা এলাকায় প্রতিবাদী বলে পরিচিত। অভিযোগ, তিনি দেওয়ানদিঘি থানা এলাকায় তৃণমূল নেত্রী কাকলি তা’র অত্যাচারের কাছে নতি স্বীকার না করে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন। জমি নিয়ে বিবাদ শুরু হয় শাসকদলের সাথে ওই নির্যাতিতা মহিলার। তাঁকে তৃণমূলের দলীয় অফিসে ডেকে অশ্লীল ভাষায় অপমান করা হয়। তারপর থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোনমতেই শাসকদল ও কাকলি তা’র কাছে তিনি মাথা নত করবেন না। বারে বারে তাঁকে তৃণমূলের অফিসে ডেকে পাঠানো হয়, হুমকিও চলে। কিন্তু মাথা নত করেননি ওই মহিলা। তারপরই এক রাতে স্বামী ও ছেলের অনুপস্থিতিতে তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন নামিয়ে আনা হয়, তাঁকে ধর্ষণ করে কাকলি তা’র অনুচর তৃণমূলের এক মাতব্বর। তিনি থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়েরও করেন। তাঁকে ফের মারধর করে কেস তুলে নিতে চাপ দিতে থাকে শাসকদল। তিনি রক্তাক্ত হন। কিন্তু আক্রান্ত হলেও প্রতিবাদী মহিলা কেস তোলেননি। 
এই আক্রান্ত পরিবার সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছে, এখানে আইনের শাসন নেই। ধর্ষণ, খুন, তোলাবাজিতে গোটা দেওয়ানদিঘি থানার সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। অভিযোগ, তৃণমূলের মধ্যযুগীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে যে পরিবারই  প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে, সেই পরিবারের মহিলাদের উপর পাশবিক অত্যাচার নামিয়ে আনা হয়েছে। এই আক্রান্ত মহিলা বারেবারে আক্রান্ত হয়েও শাসকদলের কাছে মাথা নত করেননি। সেই কারণে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে আক্রান্ত মহিলার লড়াইয়ের তেজ দেখে। তাই শাসকদল ও দলদাস পুলিশ এখন চাইছে যে কোনভাবেই হোক এই পরিবারকে এলাকাছাড়া করা।  অন্যদিকে, এক প্রতিবাদী মহিলার উপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েও তৃণমূলের কর্মী হবার সুবাদে এখনো ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই জঙ্গলের রাজত্বের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা সুপর্ণা ব্যানার্জি। তিনি দাবি করেছেন, অবিলম্বে ধর্ষককে গ্রেপ্তার ও ঘরছাড়া পরিবারকে ঘরে ঢোকাতে হবে পুলিশকে। না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

Comments :0

Login to leave a comment