লব মুখার্জি
মা ও ছেলেকে নির্মম অত্যাচার করা হয়েছিল আড়িয়াদহে। সাড়ে তিন বছর আগে এই ক্লাবেই দু’জনকে তুলে এনে বীভৎস মারধরও করা হয়েছিল। ছড়িয়েও পড়েছে ঘটনার ভিডিও। শুক্রবার এই ক্লাবেই আনা হলো অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা জয়ন্ত সিং এবং তার সাগরেদ প্রসেনজিৎ দাস ওরফে লালটুকে। ক্লাবে এনে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করল বারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ।
এদিন প্রায় কুড়ি মিনিট তালতলা ক্লাবের ভেতর জয়ন্ত এবং প্রসেনজিৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আড়িয়াদহ নওদাপাড়ায় এই তালতলা ক্লাবের দরজাগুলিতে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ।
স্থানীয়দের দাবি, ক্লাব কেবল সিল করে আখেরে কোনও লাভ নেই। কারণ আজ সিল করছে। কাল আবার খুলে দেবে পুলিশ। এই ক্লাবকে ব্যবহার করে থেকে আগামী দিনে মস্তান মাফিয়া যাতে তৈরি না হয় সেদিকে নজর দেওয়া দরকার।
শুক্রবার বেরিয়ে পড়া আরেকটি ভিডিও বেরিয়েছে। এক ব্যবসায়ীকে তোলার জন্য জয়ন্তের বাহিনী পিটিয়েছিল বলে অভিযোগ। এই ভিডিও’র সত্যতা ‘গণশক্তি’ যাচাই করেনি। তবে যুবক-যুবতীকে ডেকে এনে মারের ভিডিও পুলিশেরই স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই ভিডিও ভিত্তিতেই মামলা দায়ের করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। তবে প্রায় সাড়ে তিন বছরের ওই ঘটনা পুলিশ জানত না, ভিডিও বেরনোয় জেনেছে, পুলিশের এমন বক্তব্য মানছেন না আড়িয়াদহ এবং সংগ্ন অঞ্চলের বহু অংশই। তাদের বক্তব্য তৃণমূলের নেতা হওয়ায় এদের ছুঁতে চায়নি পুলিশ।
১ জুলাই আড়িয়াদহে মা ও ছেলেকে নিপীড়নের ঘটনায় তীব্র ধিক্কারের মুখে পড়ে পুলিশ এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকার। প্রধান মাথা জয়ন্ত সিংয়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের হয়ে তোলাবাজি, লুটপাটের মতো দুষ্কৃতী কাজে অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে। তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক এবং সাংসদের বিরুদ্ধেও মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ধিক্কারের মুখে জয়ন্তকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। এর মধ্যেই বেরিয়ে পড়ে তিন বছর আগে ক্লাবে যুবক যুবতীকে ডেকে নির্মমভাবে দল বেঁধে রড দিয়ে পেটানোর ভিডিও। তার ভিত্তিতে তিন বছর আগের ঘটনার তদন্তেও নামতে হয় পুলিশকে।
ক্লাবে চ্যাদোলা করে পেটানোর ঘটনা সম্পর্কে এদিন পুলিশের সামনেই প্রশ্ন করা হয় জয়ন্তকে। দেখা গিয়েছে ঐদ্ধত্য বিন্দুমাত্র কমেনি এই দুষ্কৃতীর। পুলিশের গাড়িতে ওঠার সাংবাদিকদের বাড়ানো বুম হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে দেখা যায় তাকে। জয়ন্তের দাবি, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই। মদন মিত্র আবার বলেছেন, জয়ন্ত সিং যথার্থই বলেছে।
জয়ন্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পৌরসভায় সাইট প্ল্যান ও হোল্ডিং নম্বার ছাড়াই জমিতে প্রাসাদ বানানোরও। অন্যদের নামে মিউটেশন থাকা জমি দখল ও পুকুর ভরাট করে অট্টালিকা বানানাোর বিরুদ্ধে মুখও খুলছেন স্থানীয়রা।
তৃণমূল কর্মী এবং প্রাক্তন পৌর প্রতিনিধি অমিত দাস এদিন টিন দিয়ে ঘেরা একটি জমি দেখিয়ে বলেন যে কামারহাটি পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এই ৫ কাঠা জমিতে ছেলেরা ফুটবল খেলত। জয়ন্ত সিং দাঁড়িয়ে থেকে টিন দিয়ে ঘিরে এই জায়গা দখল করে রেখেছে। আরেকটি ভিডিও-তে দেখা গিয়েছে তোলা দিতে না পারায় একজন ব্যবসায়ীকে আড়িয়াদহের জয়ন্তী ক্লাবের মাঠে এক বছর আগে কিভাবে জয়ন্ত সিং ও তার বাহিনী পিটিয়েছিল।
জয়ন্ত সিংয়ের এরকম অত্যাচারের ঘটনাগুলি এখন ক্রমশই সামনে চলে আসছে। ক্রমশই প্রকাশ হয়ে পড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব এবং পুলিশের প্রচ্ছন্ন মদতেই জয়ন্ত সিংয়ের দুষ্কৃতী চক্র অত্যাচার চালিয়েছে। মানুষকে মুখ বন্ধ করতে বাধ্য করে লুটপাট চালিয়েছে। অবস্থাটা এমনই যে, তৃণমূলের অনেকেই নিজেদের বাঁচাতে জয়ন্ত সিংয়ের বিরুদ্ধে নানা কথা বলতে শুরু করেছে।
Comments :0