Radio Service Shop

ডিজিটাল এই যুগে টিকে আছে রেডিও মেরামতের দোকান!

জেলা

26 -Year-Old Radio Service Shop In hooghly


একসময়ে সব বয়সের বিনোদনের একমাত্র ঠিকানা ছিল রেডিও। টেলিভিশন কী তাও কেউ জানতেন না। মহালয়ার দিনে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী অথবা নির্দিষ্ট সময়ে পছন্দের শিল্পীর কণ্ঠে কোনও গান। দেশ বিদেশের কোনও সংবাদ। খেলার মাঠের প্রবল উত্তেজনার মুহূর্ত। ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বই পালন করে এসেছে রেডিও। আজকাল শারদীয়ার আগে গান রিলিজ হয়না, রেডিওয় এফএম এর চাহিদা থাকলেও মোবাইলের অপ্রতোরোদ্ধ আঘাতে রেডিও নড়বড়েও বলা চলে। তাও অন্ধকারে একচিলতে টেবিলল্যাম্প জ্বেলে কোনক্রমে টিকে আছে রেডিও সারানোর মেকানিকেরা। 
হুগলির শ্রীরামপুরের বিপিদে ষ্ট্রিট দিয়ে সোজা ধর্মতলার দিকে হাঁটতে থাকলে কিছুটা এগোলেই রেমন্ডসের শোরুম। ঠিক তার পাশে সরু গলি। এদিন গলি দিয়ে এগোতেই কানে আসলো রেডিওর চিঁচিঁ শব্দের ফাঁকে কয়েক কলি "গান অলির কথা শুনে বকুল হাঁসে।" কয়েক পা এগোলেই শ্যামল চ্যাটার্জির রেডিও সারানোর দোকান। প্রবীণ মানুষ কাজ অন্ত প্রাণ। রেডিও টেপ রেকর্ডার অনেক যন্ত্রাংশ সারিয়ে থাকেন। দোকানের ছোট পরিসর অগনিত তারের যন্ত্রের মাঝে ছোট্ট টেবিলে বসে কাজ করেন শ্যামলবাবু। 


শ্যামলবাবু জানালেন ২৬ বছরের পুরোনো দোকান আমার। মোবাইলের জন্য এখন রেডিও তেমন কেউ শোনেনা। অবশ্য মহালয়ার আগে রেডিও সারাতে আসে অনেকে। দিনে গোটা ১০০ টাকাও আয় হয় আবার হয়না, এরকম করে চালাচ্ছি। এককালে খুব ভালো দিন দেখেছি। তখন রেডিওতে পুজোর আগে নতুন গান হত লোকে মন দিয়ে শুনতো। তখন রেডিওর প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিলো। তখন এক একদিন ৫০০ টাকাও রোজগার করেছি এখন তেমন কেউ আসেনা। রেডিওর পর টেপ রেকর্ড সারিয়েছি। তারপর এল সিডি সেটাও সারানো শুরু করলাম। এখন সেটাও উঠে গেছে। পুরোনো দোকান তো মাঝে মাঝে খুলে বসি। অনেক বয়স্ক মানুষ রেডিও সারাতে আসেন অল্প বিস্তর আলোচনা হয়। এই করেই চলে যাচ্ছে। 
দোকানে রেডিও সারাতে আসা একজন ব্যক্তি জানান রেডিও সার্ভিস করাতে শ্যামলবাবুর কাছেই আসি। আমার গান শোনার শখ আছে। এফ এম চ্যানেলে হিন্দি গান শুনি। মান্না দে ও কিশোর কুমারের গান শুনতে ভালো লাগে। শ্যামলবাবুর ইলেকট্রনিক জিনিস সারানোর হাত ভালো। 
সময়ের স্রোতে সবই হারাচ্ছে। অথচ কিছু মানুষ এখনও চিরন্তন ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সভ্যতার অপ্রতিরোদ্ধ গতিতে তারা কতটুকু লড়াই করতে পারবেন তা বলা মুশকিল। কিন্তু জন হেনরির মতো তারা লড়ে যাচ্ছেন তাদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment