STORY — DEBASHIS ACHARIYA / MUKTADHARA

গল্প — লাশ / মুক্তধারা

সাহিত্যের পাতা

STORY  DEBASHIS ACHARIYA  MUKTADHARA

গল্প

লাশ 
দেবাশিস আচার্য

আর কতদিন অপেক্ষা করবে অনামিকা! আদিত্য ভেলেন্টাইন গোলাপ হাতে বলেছিলো দেখো না এস এস সি টা লাগিয়ে ফেলবো ঠিক। তারপর তোমার রাগী বাবাকে গিয়ে সটান প্রস্তাবটা দিয়ে ফেলবো। ওদিকে মা অপেক্ষা করে আছেন, আদির স্কুলের চাকরিটা হয়ে গেলে চোখটা কাটিয়ে ফেলবেন। গত চার বছর ধরে বাবার রামনগর সুগার মিল বন্ধ। ওর  টিউশনি আর বাবার কিছু জমানো টাকায় কোনরকমে সংসারটা চলছে। আদি যার কাছে টিউশনি পড়ত সেই জয়ন্ত দাও দু'হাজার দশে এসএসসি লাগিয়েছিলেন‌। তারপর সরকার পাল্টে গেল এক বছর দু বছর দেখতে দেখতে সাত বছর এসএসসি বন্ধ যদিও এর মাঝে দু'চারটে যে চাকরি হয়েছে সে পরিমাণ টাকা দেওয়ার সাধ্য তাদের নেই তবুও আদি স্বপ্ন দেখে এসএসসি হলে সে ঠিক স্কুলে চাকরি লাগিয়ে ফেলবে ।

এদিকে অনামিকার বয়স বাড়ছে ওদের বাড়ি থেকেও পাত্র দেখার কাজ চলছে। আর কতদিন অনামিকা এটা ওটা বলে পাশ কাটিয়ে যেতে পারবে কে জানে!  আদি আগে মোড়ের চায়ের দোকানে গিয়ে খবরের কাগজ উল্টেপাল্টে দেখতো এখন আর ভালো লাগেনা। ক্লাবটাও আগের মতো নাটকের রিহার্সাল বা ভলি প্রাকটিস বন্ধ, অথচ সরকারি অনুদান ঢুকছে আর মদ তাসে  ক্লাব চলছে। প্রতিবাদ করলে দুকথা শুনিয়ে দেবে। ক্লাবে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আদি। টিভি চ্যানেলগুলোতে নেতাদের আড্ডাবাজির টকশো কিছু মিথ্যা ভাষণ কেউ বলছেন চপ ভাজো কেউবা পকোড়া ভেজে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।আজ এ নেতা ও দলে তো কালকে অন্য দলে অথচ এসএসসির কথাটা কেউ বলছে না। আদি স্বপ্ন দেখেছিল অনামিকাকে নিয়ে একটা ঘর বাঁধার। ক্রমশই স্বপ্নটা ভেঙে চুরে তছনছ হয়ে যাচ্ছে অথচ সেদিন টিভিতে আদি দেখল এক নেতা তার স্ত্রী আর তার বান্ধবীর কেচ্ছা কাহিনী, তাই নিয়েই ঘণ্টাখানেক টকশো। আদির ভীষণ রাগ হচ্ছিল ।তারা আর অনামিকার ভালবাসার মধ্যে  তো কোন পাপ নেই অথচ ওই বেশি বয়সী মোটা নেতা তার বান্ধবীকে নিয়ে পরম সুখে আছেন। কাল চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি ।লকডাউনে টিউশনিও তো অনেক কমে গিয়েছে‌। হাতে আছে পঞ্চাশটা টাকা। মায়ের চোখের ওষুধ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিছু না পারুক অনামিকাকেও তো একটা গোলাপ দিতে হয়। 

গোলাপ না চোখের ওষুধ এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চোখটা বন্ধ হয়ে আসে। রাত জেগে পড়া আদির পুরোনো অভ্যাস। আদি ভাবতে থাকে কি হবে পড়াশোনা করে, টাকা না থাকলে চাকরি হবে না নিদেনপক্ষে একটা সিভিক এর চাকরি জোগাড় করতে দু আড়াই লাখ লাগে প্রাইমারি নাকি পনেরো আর হাই স্কুল মানেই ত্রিশ চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চোখ যায় ফ্যানটার দিকে। অনেক দিন বন্ধ থাকায় ঝুল জমে গিয়েছে । সেখানেই চাদরটা ঝুলিয়ে দিয়ে টুলের উপর উঠে গলায় ফাঁস লটকে টেবিলটা  সরিয়ে দেয় পা দিয়ে। আজ চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি আদির লাশটা কৃষ্ণনগর হসপিটাল থেকে ফিরতে বেলা চারটে বেজে যায়।

Comments :0

Login to leave a comment