STORY — SOURISH MISHRA / NATUNPATA - 12 November

গল্প — ভাই ফোঁটা / নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

STORY   SOURISH MISHRA   NATUNPATA - 12 November

নতুনপাতা

গল্প

ভাই ফোঁটা

সৌরীশ মিশ্র


ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার সকাল। অন্য বহু বাঙালি বাড়ির মতোই এই সেন বাড়িতেও এখন চলছে ভাই ফোঁটার পর্ব। বছর উনিশের মোহর এখন ফোঁটা দিচ্ছে তার চেয়ে আট বছরের ছোট মাসতুতো ভাই নয়নকে।
মোহরের যেমন নিজের কোনো ভাই বা দাদা নেই, ঠিক তেমনই নয়নেরও কোনো নিজের বোন বা দিদি নেই। তাই, প্রতি বছরই মোহর এই ভাই ফোঁটার দিনটায় চলে আসে মাসির বাড়িতে নয়নকে ফোঁটা দিতে।
নয়ন বসে আছে একটা আসনের উপর মেঝেতে। তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে মোহর। আর, কাছেই মেঝেতে বসে নয়নের মা সন্দীপ্তা। তাঁর হাতে শাঁখ।
মোহর এখনো এক মনে ফোঁটা দিচ্ছে। ঠোঁট নড়ছে ওর একটু একটু। কারণ, সে আলতো স্বরে আওড়াচ্ছে- ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা...
অন্য দিকে, দুষ্টু নয়নের সেই দিকে কোনো খেয়ালই নেই। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনে রাখা চার রকম মিষ্টিতে ভরা থালাটার দিকে।

ভাই ফোঁটার পর্ব শেষ হল। নয়ন প্রণাম করে তার মোহরদিকে। মোহর "থাক্ থাক্, হয়েছে হয়েছে" বলতে বলতে একটা গিফ্ট বক্স এগিয়ে দেয় নয়নের দিকে। নয়ন ঝটপট সেটা খোলে। সে দেখে, একটা দারুণ জামা উপহার পেয়েছে সে। "থ্যাংক ইউ মোহরদি" সাথে সাথেই বলে ওঠে সে।
"ওয়েলকাম" বলে মোহর। আর বলতে বলতেই মিষ্টির থালাটা সে এগিয়ে দেয় ভাইয়ের দিকে। নয়ন তো এই সময়টার অপেক্ষাতেই ছিল। একপ্রকার ছোঁ মেরে থালাটা নিয়ে একটা সন্দেশ মুখে চালান করে সে। ব্যাপারটা দেখে হেসে ফেলে মোহর। তারই সাথে সন্দীপ্তাও।

"মা, মোহরদির গিফ্টটা এনে দাও।" খেতে খেতেই এবার বলে ওঠে নয়ন।
"ও হ্যাঁ" বলে মেঝে থেকে উঠতে উদ্যত হন সন্দীপ্তা। আর, উঠতে উঠতেই বলেন, "এবারের তোর গিফ্টটা একটু স্পেশাল জানিস মোহর!"
"কেন গো মাসি?"
"এবারের গিফ্টটা তোর ভাই কিনেছে তোর জন্য। আমরা নই।"
"মানে?"
"বলছি দাঁড়া। আগে তোর গিফ্টটা আনি।"

ভিতরের ঘর থেকে সন্দীপ্তা গিফ্ট-র‌্যাপারে মোড়ানো একটা উপহার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এনে মোহরের হাতে দেন।
মোহর মোড়োকটা খোলে। দেখে, তার প্রিয় লেখক রাসকিন বন্ডের সদ্য প্রকাশিত একটা বই যেটা এখনো কিনে ওঠা হয়নি ওর সেটাই দিয়েছে নয়ন ওকে। নয়ন যে খুব ভাল করেই জানে, ওর প্রিয় সাহিত্যিক রাসকিন বন্ড।
"কি, পছন্দ হয়েছে তোর বইটা?" মোহরকে জিজ্ঞেস করেন সন্দীপ্তা।
"হ্যাঁ হ্যাঁ, খুবই পছন্দ হয়েছে। তা তখন কি বলছিলে, নয়নই নাকি এই বইটা কিনেছে ..."
"ও হ্যাঁ; এই কিছুদিন আগে ওদের স্কুলে একটা ড্রইং কম্পিটিশন হয়। তাতে নয়ন সেকেন্ড হয়। তা, ওরা প্রাইজ হিসেবে বুক ভাউচার দেয় নয়নকে। এই গত পরশু আমি ওকে নিয়ে গিয়েছি যে বইয়ের দোকানে ভাউচারগুলো রিডিম করা যাবে সেই দোকানে, তখনই নয়ন হঠাৎই আমাকে বলে, মা, এই ভাউচারগুলো দিয়ে আমি মোহরদির জন্য বই কিনব আর ওটাই গিফ্ট করব ওকে ভাই ফোঁটায়।"
মাসির কথাগুলো শুনে নয়নের দিকে তাকিয়ে কয়েক মুহূর্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসেই থাকে শুধু মোহর। তারপর বিস্ময়ের ঘোর কোনোমতে কাটিয়ে সে বলে, "তুই নিজের জন্য বই না কিনে আমার জন্যে বই কিনেছিস, ভাই?"
নয়ন মিষ্টি খেতে খেতেই কোনো মতে বলে, "কেন রে মোহরদি, আমি দিলে তুই নিবি না?"
"নেব রে নেব।" বলতে বলতেই এগিয়ে গিয়ে নয়নকে দু'হাতে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে সে। "তুই এতো ভালোবাসিস ভাই আমাকে?" কোনোমতে ধরা গলায় বলে মোহর।
"বাসব না! তুই যে আমার মোহরদি।"
নয়নের এই কথাটা শুনে এবার ঝরঝরিয়ে কেঁদেই ফেলে মোহর।
আর, ভাই-বোনের ঐ সুন্দর দৃশ্য দেখে সন্দীপ্তারও চোখে তখন জল।

Comments :0

Login to leave a comment